অধ্যক্ষের মাসিক বেতন ১৪৯ টাকা ৫০ পয়সা!
বরিশাল, ২৩জুলাই(ডেইলি টাইমস ২৪): বরিশাল বিভাগের একমাত্র কলেজ খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের বাকাই গ্রামের প্রতিষ্ঠিত “বাঁকাই হরি গোবিন্দ সংস্কৃত কলেজ”। কলেজ অধ্যক্ষর মাসিক বেতন ১৪৯ টাকা ৫০ পয়সা। তার বছরে একত্রে একবারে তুলতে হয়। সংস্কৃত কলেজর শিক্ষকদের অমানবিক জীবন ধারণের বিষয়টি বেশির ভাগ লোকের অজানা। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্কৃত শিক্ষা বোর্ডর অধিনে পরিচালিত সংস্কৃত কলেজ কর্মরত শিক্ষকদের মানবতার জীবন জাপন। এই কলেজে কর্মরতদের নেই কোনো বেতন-ভাতা। তারা শুধু পেয়ে থাকে মহার্ঘ ভাতা! অবৈতনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্মরত শিক্ষকতা পেশায় কর্মজীবিরা সম্মানসূচক ডিগ্রি গ্রহণ করে সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষসহ শিক্ষক ও কর্মচারীদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটেনি ব্রিটিশ থেকে স্বাধীন বাংলায় ১২২ বছরেও। “বাতির নিচে অন্ধকার” প্রবাদের এই বচনটি সংস্কৃত কলেজে পুরোপুরি সত্য।
বাঁকাই হরি গোবিন্দ সংস্কৃত কলেজ’র অধ্যক্ষ নিখিল রায় চৌধুরী তিনি বলেন, ব্রিটিশ আমলে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী ও বিখ্যাত পন্ডিত হরি গোবিন্দ রায় চৌধুরী ১২২ বছর পূর্বে বাংলা ১৩০০ খ্রীঃ মোতাবেক ইংরেজি ১৮৯৩ সালে নিজের ১ একর ১০ শতক জমির উপরে নিজ নামে প্রতিষ্ঠা করেন “বাকাই হরি গোবিন্দ সংস্কৃত কলেজ।” ওই যুগে বাবা-মায়েরা তাদের ছেলে মেয়েদের পড়াশুনার জন্য পন্ডিত মহাশয়ের “টোল” বা পাঠশালায় দিতেন। কালক্রমে পাঠশালাটি কলেজে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওই কলেজে বর্তমানে পড়ানো হয় কাব্য, ব্যকরণ, আয়ুর্বেদ শাস্ত্র, পুরাণ, পুরোহিত্য ও স্মৃতি শাস্ত্রসহ ছয়টি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের তিন বছর মেয়াদী কোর্স করতে হয়। শিক্ষকতাসহ বিভিন্ন পেশার পাশাপাশি এই কলেজে অধ্যায়ন করে সামাজিক, সাস্কৃতিক ও ধর্মীয় জ্ঞানার্জন করে সম্মান সূচক ডিগ্রী গ্রহণ করে অনেকে। সেই শাস্ত্রবিদ তৈরির শিক্ষকরা ধর্মীয় জনগোষ্ঠিকে ধর্মীয় ও শাস্ত্রীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করলেও তারা পান না দেশের সরকারি সুযোগ। বর্তমান সমাজে চরমভাবে অবহেলিত ও উপেক্ষিত এই সব কলেজের শিক্ষকরা। ফলে অর্থনৈতিক দৈন্য দশার কারণে বর্তমান সভ্যতায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। চরম ক্ষোভ নিয়ে অধ্যক্ষ নিখিল রায় চৌধুরী আরও বলেন, ১৯৮৮ সাল থেকে অধ্যক্ষর দায়িত্ব পালন করে আসছি। এই সময়টুকুর মধ্যেই অনেক ছাত্র এখান থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে রাষ্ট্রের বড় পদে আসীন হয়েছেন। এমনকি উপমহাদেশের বিখ্যাত পন্ডিত, শাস্ত্রজ্ঞরা, মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক। কলেজ অধ্যক্ষ নিখিল রায় চৌধুরী আরও বলেন, সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে সংস্কৃত ও পালি শিক্ষাবোর্ডর আওতায় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে। পালি বোর্ড ঢাকার কমলাপুরের বাসাবো বৌদ্ধ মন্দিরে অবস্থিত। কলেজে অধ্যক্ষসহ তিন জন শিক্ষক ও এক জন অফিস সহকারী কর্মরত রয়েছেন। বর্তমান শিক্ষা বর্ষে কলেজে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেবেন। পরিক্ষায় কৃতকার্যদের সনদপত্র দেয়া হয় মন্ত্রণালয় থেকে। দেশে হাতে গোনা কয়েকটা কলেজ থাকলেও সরকারের উদাসীনতার কারণে এর পাঠ্যবই পর্যন্ত বাজারে পাওয়া যায় না। পাঠ্যবই সংগ্রহ করতে হয় ভারত থেকে। এমন অর্থনৈতিক দৈন্য দশার মধ্যে কেন এই কলেজে চাকরি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, পূর্বপুরুষেরা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে সমাজের হিত করার জন্য। তাই তাদের সেই মহৎ চিন্তা চেতনার দিকে তাকিয়ে তাদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য বিনা বেতনে কাজ করছি। ২০০১ সালে ফ্যাসিলিটিজ বিভাগ থেকে তিন তলার একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। ওই ভবনেই চলছে শিক্ষাসহ আবাসনের কাজ। ক্যাম্পাসে নেই আলাদা ছাত্রাবাস। ছাত্রবাস না থাকায় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
অধ্যক্ষ নিখিল রায় চৌধুরী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের কাছে সংস্কৃত কলেজের শিক্ষকদের দিকে আশু দৃষ্টি কামনা করছেন। কলেজ প্রতিষ্ঠাতার ছেলে বিমল রায় চৌধুরী বলেন, কেন যে বাবা এই প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিলেন জানি না ! যে প্রতিষ্ঠানে জ্ঞানী-গুণি ব্যক্তিরা শিক্ষার্থী হিসেবে সনদপত্র গ্রহণ করে আর প্রতিষ্ঠানের কথা মনেই রাখেন না।
এ ব্যাপারে বাঁকাই হরি গোবিন্দ সংস্কৃত কলেজ’র গভর্নিং বডির সভাপতি ও অগ্রনী ব্যাংকের পরিচালক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার বলেন, তাদের সম্মানী নিম্ন থেকে অত্যান্ত নিম্নপর্যায়ে। আর্থিক কারণে তাদের জীবন যাত্রা সত্যি অমানবিক। সরকার সকল শিক্ষাকে যুগোপযোগী, আধুনিকায়ন ও বিজ্ঞান সন্মত করেছে। সরকার মাদ্রাসা শিক্ষা আধুনিকায়ন করে আলাদা বোর্ডের মাধ্যমে বেতন কাঠামো নির্ধারন করেছে। দেশে সংস্কৃত কলেজগুলোর সংখ্যা খুব বেশি নয়। তাই তাদের জন্য সময়োপযোগী বেতন কাঠামো নির্ধারণ করে তাদের অমানবিক জীবন থেকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেয়া উচিৎ। এজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের নজর দেয়া একান্ত প্রয়োজন।
-আ/বি/আ , ডেইলি টাইমস ২৪