
ক্রসফায়ারে নিহত জঙ্গির আসল নাম মুকুল রানা
ঢাকা, ২০ জুন, (ডেইলি টাইমস ২৪):
অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত পুরস্কার ঘোষিত ছয় জঙ্গির একজন শরিফুলের আসল নাম মুকুল রানা (৩০)। তার বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। তবে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় এসে মুকুল রানা কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল কিনা তা তার পরিবার জানে না।
আজ সোমবার (২০ জুন) ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে লাশ শনাক্ত করেন নিহতের দুলাভাই হেদায়েতুল ইসলাম ও চাচাত ভাই রহমত আলী।
হেদায়েতুল ইসলাম আরও বলেন, মুকুল রানা সাতক্ষীরা গভর্মেন্ট কলেজের ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিল। তারা দুই ভাই এক বোন। সে ভাই বোনদের মধ্যে দ্বিতীয়। তাদের আর্থিক অবস্থা সচ্ছল নয়। সাতক্ষীরায় তার বাবার ছোট চিংড়ি ঘেরের ব্যবসা রয়েছে। গত এক বছর আগে চাকরির সন্ধানে মুকুল রানা সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় চলে আসে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রামে যায় এবং মহুয়া সুলতানা নামে এক মেয়ের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিবাহ হয়। এরপর সে ঢাকায় ফিরে আসে। ঢাকায় উত্তরায় সে থাকতো। তবে উত্তরার কোথায় থাকতো, কি করতো এ ব্যাপারে কিছু জানাতে পারেননি হেদায়েতুল ইসলাম।
রোববার (১৯ জুন) প্রথম প্রহরে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ডিবি পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন মুকুল রানা। প্রথমে তাকে অজ্ঞাতনামা হিসাবে উল্লেখ করা হলেও পরে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় নিহতের নাম শরিফুল ওরফে সালেহ ওরফে আরিফ (৩০)। সে অভিজিৎ হত্যার সঙ্গে জড়িত। এছাড়া ব্লগার ও প্রকাশক হত্যার ঘটনায় জড়িত ৬ জন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যের নামে পুরস্কার ঘোষণা করে ডিএমপি। শরিফুল এ ৬ জনের মধ্যে একজন। তার সম্পর্কে তথ্য দাতাকে ৫ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণাও দিয়েছিল ডিএমপি। অভিজিৎকে যেখানে হত্যা করা হয়, সেখানকার ভিডিও ফুটেজে শরিফুলের উপস্থিতি দেখা গেছে বলে পুলিশের দাবি।
জানা গেছে, রোববার বিকেলে খিলগাঁও থানার এসআই আল মামুন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের নাম শরিফুল উল্লেখ করে সুরতহাল রিপোর্ট সম্পন্ন করেন। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা অভিভাবক ছাড়া এ নামে লাশের সুরতহাল রিপোর্টে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইলিয়াস মোর্শেদ। পরে অজ্ঞাতনামা (২৫) হিসাবে লাশের সুরতহাল সম্পন্ন হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অনলাইন মুখপত্র ডিএমপি নিউজে গতকাল রোববার বলা হয়, শনিবার রাত পৌনে তিনটার দিকে গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একটি দল মেরাদিয়া এলাকায় তল্লাশি অভিযান চালানোর সময় সন্দেহজনকভাবে তিন মোটরসাইকেল আরোহীকে ধাওয়া করে। এ সময় হঠাৎ মোটরসাইকেল আরোহীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় দুজন দৌড়ে পালাতে সক্ষম হলেও গোলাগুলির একপর্যায়ে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য শরিফ গুলিবিদ্ধ হন। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পুলিশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসা কর্মকর্তা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই ঘটনায় খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পিস্তল ও কয়েকটি গুলি উদ্ধার করেছে। বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইলিয়াস মোর্শেদের উপস্থিতিতে সুরতহাল করা হয়। নিহত শরিফুলের শরীরে ছিদ্রের মতো দেখতে ১০টি জখম ছিল।