
বিএনপি নেত্রীকে জঙ্গিসঙ্গ বিষয়ে অবস্থান পরিস্কার করতে হবে:তথ্যমন্ত্রী
ঢাকা, ০৬ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):
স্বল্প সময়ের বার্তায় আয়োজিত বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে জঙ্গি দমনে সরকারের আন্তরিকতার কথা পূণর্ব্যক্ত করেছেন তথ্যমন্ত্রী। একইসাথে তিনি বলেন, ‘বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়া জঙ্গিসঙ্গ ত্যাগ না করে নিজেই নিজের গায়ে জঙ্গির কাদা লাগাচ্ছেন।’
বুধবার সকাল ১১টায় রাজধানীর হেয়ার রোডের মন্ত্রীপাড়ায় সরকারি বাসভবনে সাম্প্রতিক ঘটনা ও রাজনীতি বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গুলশান হত্যাকান্ডের সূত্র ধরে বিএনপিনেত্রী জঙ্গি দমন নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে বলেছেন। কিন্তু সরকার কোনো কাদা ছোড়াছুড়ি করছে না। খালেদা জিয়া নিজের গায়ে নিজেই কাদা লাগাচ্ছেন।’
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) জঙ্গি ইস্যুতে জাতীয় সংলাপের কথা বলছেন। কিন্তু সশস্ত্র জঙ্গি জামায়াত, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ও যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি কিভাবে জঙ্গি দমন করবেন। তিনি আগুনযুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন, হেফাজতীদের নিয়েও পরাজিত হয়েছেন। সরকারকে অবৈধভাবে উৎখাত করতে জঙ্গিদের তার বক্তব্যের মাধ্যমে আড়াল করছেন, তাদের বক্তব্যে জঙ্গিরা নানা সুবিধা পাচ্ছে। আর বিএনপির আমলেই এটার উত্থান হয়েছিলো। একারণেই খালেদা জিয়া ঐক্য-সংলাপের যোগ্য নন। আগে এই বিষয়ে বিএনপিকে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।’
জঙ্গি হামলা মানবতা, ধর্ম, সমাজ, সভ্যতা, রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের শামিল
বক্তব্যের শুরুতেই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় পয়লা জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডকে একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা বলে বর্ণনা করে এর তীব্র নিন্দা জানানোর সাথে সাথে বিষয়টি গভীরভাবে ভাবার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান ইনু। তিনি বলেন, ‘গুলশান হত্যাকাণ্ডটি একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমি নিরপরাধ মানুষকে হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ হামলা মানবতা, ধর্ম, সমাজ, সভ্যতা, রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এ নিয়ে রাজনীতি ও সামাজিক অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছে। পবিত্র ঈদের এ সময়ে যে যার স্থানে থেকেও এবিষয়ে ভেবে আমরা আমাদের মতামত তৈরি করতে পারি। আর সেজন্য কিছু প্রশ্নের উত্তরও আমি দেব।’
জঙ্গি সমস্যা আন্তর্জাতিক। দেশে ৭০ জঙ্গির মৃত্যুদন্ড।
‘মানুষের আর্থ-সামাজিক ও দৈনন্দিন জীবনে উৎপাত হিসেবে দেখা জঙ্গিসন্ত্রাস একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা’ উল্লেখ করে ইনু বলেন, গত সাত বছরে শেখ হাসিনার সরকার জঙ্গিবাদ দমনে নিরলসভাবে কাজ করছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা অপরাধী সনাক্ত করতে পেরেছি এবং তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৭০ জন জঙ্গির মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে সাজার অপেক্ষায় আছে। এই উৎপাত বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক শক্তিকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা হবে।’
‘মনে রাখবেন, দেশের অর্থনীতির চাকাকে থামানোর ক্ষমতা জঙ্গিদের নেই কিন্তু গুপ্তহত্যা থামানোর সক্ষমতা সরকারের আছ ‘, বলেন মন্ত্রী। তিনি এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ খন্ডালেন তথ্যমন্ত্রী
তরুণদের নিখোঁজের বিষয়ে বাবা-মায়ের অভিযোগ পুলিশ আমলে নেয়নি কেন, এ প্রশ্নের জবাবে ইনু বলেন, ‘বিষয়টি লক্ষ্য করবেন, সনাক্ত জঙ্গিরা সকলেই পুলিশের তালিকাভুক্ত। তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। এবং পুলিশ তাদের খুঁজছিল। সুতরাং তরুণদের নিখোঁজের বিষয়ে বাবা-মায়ের অভিযোগ পুলিশ আমলে না নেয়ার কোনো সুযোগ নেই, যেখানে পুলিশ তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের খুঁজে বের করার কাজে রত ছিল।’
তরুণদের নিয়ে সংকট নেই, সমগ্র দেশ জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।
বিভিন্ন সময় তরুণদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এবং জঙ্গি হিসেবে ফেরত আসার বিষয়টি দেশের সামনে কোনো সংকট কি না—সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। সমগ্র দেশ জঙ্গি-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। পুরো সমাজ জঙ্গিবাদের বিপক্ষে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো জঙ্গিবাদের বিপক্ষে। তাই দেশের ৬০ শতাংশেরও বেশি তরুণের মধ্যে গুটি কয়েক বিপথগামী তরুণের জন্য পুরো দেশ সংকটে রয়েছে বলে মনে করি না।’ তবে নিখোঁজদের নিয়ে জোর তৎপরতা চালানো হবে বলেও জানান তিনি।
ভারত, জাপান, ইতালি বা জাপানের ওপর হামলা নয়
হলি আর্টিজান বেকারির ঘটনা বিশ্লেষণী প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘এই হামলার ঘটনা তদন্তাধীন। তদন্ত শেষেই পুরোটা জানা সম্ভব। তবে এই সন্ত্রাসী হামলা ভারত, জাপান, ইতালি বা জাপানের ওপর হামলা নয়; এটা শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করার জন্য ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা।’
বিচারবহির্ভূত হত্যা হলে তদন্ত হবে
জঙ্গিদের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার বিচারবহির্ভূত হত্যা সমর্থন করেনা। গ্রেফতারকৃত প্রায় সকল জঙ্গিই বিচারের প্রক্রিয়াধীন। বিচারবহির্ভূত কোনো হত্যা হলে, তা অবশ্যই প্রশাসন তদন্ত করবে।’
বেদনাহত ঈদ
‘গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারি রেস্তোরাঁয় পয়লা জুলাইয়ের হত্যাকান্ডের নির্মমতায় শোকবিদ্ধ এবারের ঈদ-উল-ফিতর একটি বেদনাহত ঈদ।’ সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের বললেন তথ্যমন্ত্রী।