
ঈদের দিন বাসার সবাই কান্নাকাটি করে
ঢাকা, ০৯ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):
নানা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে দেশের মানুষ ঈদ উৎসব পালন করলেও সে আনন্দ ছুঁতে পারেনি ব্যাংক কর্মকর্তা মুনিয়া পারভীনের পরিবারকে।
সন্তান প্রসবের দু’মাস আগেই স্বামীকে হারিয়েছেন তিনি। মুনিয়া পারভীনের স্বামী প্রয়াত নুরুজ্জামান জনি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাকার খিলগাঁও শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৫ সালের ১৯ শে জানুয়ারি সোমবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছোট ভাইকে দেখতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন জনি। পুলিশ জানায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ৬টি মামলা হয়। পরে ওইদিন রাত তিনটার দিকে জনিকে নিয়ে জোড়পুকুর বালুর মাঠে নাশকতাকারীদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানে ‘ক্রসফায়ারে’ আহত হন জনি। চিবকৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। জনির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, জনিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ধরে নিয়ে হত্যা করেছে। তার গায়ে ১৬টি গুলির চিহ্ন ছিল। যেদিন জনিকে হত্যা করা হয় সেদিন মুনিয়া পারভীন ৭ মাসের অন্তঃস্বত্তা ছিলেন।
বর্তমানে বিএনপির যে পরিস্থিতি তাতে দলের তৃণমূল নেতাকর্মী সমর্থক যদি ক্ষতিগ্রস্থ হন তাদের সহায়তা তো দূরের কথা খোঁজ-খবর রাখাটার মত বাস্তবতা নেই। তবে বিএনপির নতুন কমিটিতে তরুণদের প্রাধাণ্য থাকায় কিছুটা হলেও দলকে কাছে পেয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো।
গত ২৯ জুন ময়মনসিংহ বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলমের মালিকানাধীন গুলশানের হোটেল লংবিচে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে ইফতার করেছেন। ঈদের উপহার দিয়েছেন, দিয়েছেন নানা আশ্বাস। লংবিচের এই অনুষ্ঠানটি যারা সমন্বয় করছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল। বাবুল এক সময় ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার ইফতার এবং ঈদ উপহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বাংলামেইলকে জানান, ‘ঢাকা শহরের মধ্যে সকল ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের একত্রিত করার চেষ্টা করেছি। হয়তো ৪/৫টা পরিবার বাকি থাকতে পারে।’
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বাংলামেইলকে বলেন, ‘দলের যারা ক্ষতিগ্রস্থ রয়েছেন সকলের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’
লংবিচে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ইফতারি করতে গিয়েছিলেন প্রয়াত জনির স্ত্রী মুনিয়া পারভীন। তিনি ঢাকায় একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরি করেন। শ্বশুরের খিলগাঁও বাসায় থাকেন। জনি নিহতের কিছুদিন পর ২০১৫ সালের ১৩ই মার্চ শুক্রবার রাত দেড়টায় সবুজবাগের হেলথ এইড ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে পুত্র সন্তান প্রসব করেন নুরুজ্জামান জনির স্ত্রী মুনিয়া পারভীন।
নুরুজ্জামান থেকে ‘উজ্জামান’ আর জান্নাতের একটি নদীর নাম ‘নহর’ থেকে মুনিয়া-জনি দম্পতির সন্তানের নাম রাখা হয় নহরউজ্জামান। নহর এখনো কথা বলা শিখেনি, তবে ‘মাম্মা,পাপ্পা,’ উচ্চারণ করতে পারে বলে জানান নহরের মা মুনিয়া।
এবারের ঈদ কিভাবে কাটলো জানতে চাইলে মুনিয়া পারভীন বলেন, ‘ঈদ এখন আর আগের দিনের মতো নেই। বাসায় সবাই কান্নাকাটি করে। সারাদিনই বাসায় ছিলাম। শ্বশুরের বাসায় থাকি, ঢাকা ব্যাংকে চাকুরি করি।’
ঈদের দিনে কোনো নেতাকর্মীর বাসায় গিয়েছেন কিনা বা কেউ এসেছেন কি না- এমন প্রশ্নে মুনিয়া বলেন, ‘না, সেভাবে তো কেউ আসে না। মির্জা আব্বাসের বাসা থেকে খবর নেয়া হয়েছে। এক ভাইয়াকে বলেছে, জনির বেবিটাকে নিয়ে তার ওয়াইফ তো আসলো না, আমি ভাইয়াকে বলেছি, বোঝেনই তো মন মেজাজ ভালো না।’
মুনিয়া পারভীনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহবায়ক মির্জা আব্বাস এবং ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব ছাড়া অন্য পর্যায়ের কেউ তার পরিবারের সঙ্গে সেভাবে যোগাযোগ রাখেন না।