
দ. চীন সাগরে ‘আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চল’ গড়ার ইঙ্গিত বেইজিংয়ের
ঢাকা, ১৩ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):
দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের ‘ঐতিহাসিক অধিকার’ দাবি আন্তর্জাতিক আদালত খারিজ করে দেওয়ার পর সে রায় প্রত্যাখ্যান করে বেইজিং বলেছে, এ সাগরের ওপর ‘আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চল’ (এডিআইজেড) স্থাপনের অধিকার রয়েছে চীনের।
মঙ্গলবার (১২ জুলাই) নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আন্তর্জাতিক আদালত ওই রায় দেওয়ার পর বুধবার (১৩ জুলাই) চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিউ ঝেনমিন বিবৃতি দিয়ে এডিআইজেড স্থাপনের এ ইঙ্গিত দেন।
লিউ বলেন, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা যদি হুমকির মুখে পড়ে তবে বেইজিং দক্ষিণ চীন সাগরে এডিআইজেড স্থাপন করতে পারে।
দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের এডিআইজেড স্থাপন করতে হবে কিনা তা নির্ভর করবে তারা কেমন হুমকি পাবে তার ওপর- বলে উল্লেখ করেন লিউ।
বিবৃতিতে তিনি কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বেইজিং আশা করে দক্ষিণ চীন সাগরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সকল দেশ আমাদের সঙ্গে কাজ করবে, যেন এই সাগরটিই কোনো যুদ্ধের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়।
২০১৩ সালে ফিলিপাইনের দায়ের করা এক মামলার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার নেদারল্যান্ডসভিত্তিক আন্তর্জাতিক সালিস আদালত ‘পারমানেন্ট কোর্ট অব আরবিট্রেশন’ রায় দেয়, বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগরের বিভিন্ন দ্বীপের ওপর বেইজিংয়ের ‘ঐতিহাসিক অধিকারের’ দাবির কোনো আইনি ভিত্তি নেই। বরং ফিলিপাইনের সার্বভৌম অধিকার লঙ্ঘন করেছে চীন।
এ রায়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে চীন মঙ্গলবারই বলে দেয়, তারা এই সিদ্ধান্ত মানে না এবং একে স্বীকৃতি দেবে না। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সাফ জানিয়ে দেন, ‘চীনের আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব ও সাগরের অধিকার কোনো ধরনের রায়েই প্রভাবিত হবে না।’
যদিও এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতারেত বলেন, ‘ইতিবাচক এমন রায়ের ব্যাপারেই আমি আশাবাদী ছিলাম।’
কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ চীন সাগরের মাঝখানে কৃত্রিম দ্বীপ গড়ে প্রায় বেশিরভাগ এলাকা নিজেদের বলে দাবি করে আসছে বেইজিং। এ নিয়ে ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, তাইওয়ানসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।
সেই বিরোধের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র গত বছরের শেষ নাগাদ চীনের দাবিকৃত জলসীমার কাছাকাছি একটি যুদ্ধজাহাজ পাঠায়। সে যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতিকে নিজেদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতীকী হুমকি হিসেবে দেখে এশীয় পরাশক্তি চীন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রায় বাস্তবায়নের কোনো ক্ষমতা আন্তর্জাতিক আদালতের নেই বিধায় এ নিয়ে দক্ষিণ চীন সাগরকেন্দ্রিক যে উত্তেজনা এতোদিন ধরে ছিল তা আরও বেড়ে যাবে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাপান ফিলিপাইনের পক্ষ নিয়ে রায়টি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বেইজিংকে।
কিন্তু এ বিষয়ে সব সমীকরণ কষে চীন এখন মনোভাব দেখাচ্ছে আরও কড়া। তারা মনে করছে, হেগের আদালতের রায় ‘বহিঃশক্তি’র পরিকল্পনার ফসল। সেই বহিঃশক্তিকেই রুখতেই এবার এডিআইজেড স্থাপনের ইঙ্গিতটি দিলো বেইজিং।