ফিচার

আগামী ১০ বছরের জন্য ১০ ভবিষ্যৎবাণী

ঢাকা, ১৪ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):

 

আগামী পৃথিবীর ঘটনাবলী নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী খুব একটা কম হয়নি। প্রায় প্রত্যেকটি ধর্মই নিজ নিজ বিচার বিশ্লেষণের জায়গা থেকে আগামীর সময় সম্পর্কে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন। এরমধ্যে সবচয়ে জনপ্রিয় ভবিষ্যৎবাণী হলো মায়ান সভ্যতা ও নস্ত্রাদামুখ নামক এক ব্যক্তির বিবৃতি। বহু বছর ধরেই মানুষ এদের ভবিষ্যৎবাণী মিলিয়ে দেখছেন তাদের বর্তমান সময়ের সঙ্গে। কিন্তু নস্ত্রাদামুখের পরেও আরও অনেকেই চেষ্টা করেছেন ভবিষ্যৎ সম্পর্কে নিখুত বক্তব্য দেবার। তবে মধ্যযুগ পরবর্তী সময়ে আর একক ব্যক্তি বিশেষে এমন ভবিষ্যৎবাণী করার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় না। সম্মিলিত ভবিষ্যৎবাণীর অংশ হিসেবে ২০১৫ সালে বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা স্টার্টফর পরবর্তী দশ বছরের পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য কিছু ঘটনাবলী নিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করেছে। এই ভবিষ্যৎবানীকে আবার মোট ১০টি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে।

পাঠকদের জন্য তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা ১০টি ভবিষ্যৎবাণী তুলে ধরা হলো।

আবারও ভাঙবে রাশিয়া
স্টার্টফর তাদের সতর্কবানীকে বলে, ‘মস্কোর বিরুদ্ধে কোনো অভ্যুত্থান হবে না। কিন্তু মস্কো রাশিয়ার ফেডারেশনের উপর তাদের নিয়ন্ত্রন হারাবে। আর এই নিয়ন্ত্রন হারানোর ফলে শূণ্যতার সৃষ্টি হবে। এই শূণ্যতার কারণে রাশিয়ার ফেডারেশনের মধ্যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যধারীদের উত্থান হবে।’ এছাড়াও আন্তর্জাতিক অবরোধ, তেলের মূল্যের নিম্নগতি, সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি, আভ্যন্তরীন অসন্তোষ বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে রাশিয়ার কেন্দ্রিয় সরকার দুর্বল হয়ে যাবে। রাশিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে অনেকগুলো দেশে বিভক্ত না হলেও রাশিয়া বিস্তৃীর্ণ অঞ্চলে তাদের আধিপত্য হারাবে। দেশটির আভ্যন্তরে অনেকগুলো অঞ্চল ক্রমশ কেন্দ্রিয় সরকারের শাসনের বাইরে চলে যেতে পারে।

পরমাণু শক্তি বাঁচাতে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রয়োগ
রাশিয়া তার মানচিত্রের বিস্তীর্ণ এলাকাজুরে পারমাণবিক অবকাঠামো তৈরি করছে। যদি রাশিয়ার আভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিভেদ তৈরি হয় তবে রাতারাতি বিশ্বের ক্ষমতার ভরকেন্দ্রে একটা শক্তিশালী ক্ষমতার শূণ্যতা তৈরি হবে। দেশটি ভগ্নদশার দিকে আগালে তাদের (রাশিয়ার) পরমাণু অস্ত্রের স্কটপাইল সবচেয়ে বড় সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে পরবর্তী দশকের জন্য। আর এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র কি করতে পারে। নিজেদের বাঁচাতে এবং বিশাল সংখ্যক অঞ্চলে আধিপত্য বজায় রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে, এমনকি মিসাইল উৎক্ষেপনও করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধাণের চেয়ে সামরিক কায়দায় সমস্যা সমাধানে আগ্রহী হবে। অন্যদিকে অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক অস্থিতিশীলতা নিরসনে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র আগের প্রতিপত্তি বজায় নাও রাখতে পারে।

সঙ্কটে জার্মানি
রপ্তানিমুখী বাণিজ্যের দেশ জার্মানি। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অঞ্চলে বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল পরিমান মুনাফা অর্জন করে প্রতিবছর দেশটি। ইউরোর সঙ্কটে জার্মানির এই রপ্তানিমুখী বাণিজ্যে বাধা আসতে পারে। আভ্যন্তরীন চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত মূল্য নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যায় পরতে পারে দেশটি, সেক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই জার্মানিকে জাপানের মতো অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হতে পারে। তবে আশার কথা হলো, স্টার্টফর আশা করছে পরবর্তী দশকে জার্মানি অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম এবং পূর্ববর্তী দশকের ভগ্নদশা কাটিয়ে উঠতে পারবে।

ইউরোপের নতুন নেতা পোল্যান্ড
জার্মানির পূর্বের দেশ পোল্যান্ডের দিকে তাকালে খুব বেশি খারাপ অবস্থা পরিলক্ষিত হয় না। রিপোর্টে বলা হয়, আগামীতে পোল্যান্ড রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে চলে আসবে। ইউরোপের অন্যান্য দেশে যে পরিমানে জনসংখ্যা সঙ্কট রয়েছে পোল্যান্ডের ক্ষেত্রে তা নেই। বাস্তবে ইউরোপীয়ান রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে পোল্যান্ডের রয়েছে আঞ্চলিক নেতৃত্ব দেবার সক্ষমতা। এক্ষেত্রে পোল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কে আবদ্ধ হতে পারে, যদিও সেই সম্পর্ক হবে পুরোপুরি বাণিজ্যিক।

ইউরোপ হবে চারটি
খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, ভাবা হয়েছিল এই ইউরোপীয় ইউনিয়ন বুঝি কখনও ভাঙবে না। কিন্তু ইতিহাসকে পূর্ণতা দিতেই যেন ভাঙতে চলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। দেশগুলোর মধ্যে ধর্ম এবং জাতীয়তাকেন্দ্রিক ঝামেলা দিনকে দিন বাড়তেই থাকবে। কিন্তু আগামী দশ বছরের মধ্যে এই সঙ্কট বাড়তে বাড়তে পশ্চিম ইউরোপ, পূর্ব ইউরোপ, স্ক্যানডিনেভিয়া এবং ব্রিটিশ আইল্যান্ডের সূত্রপাত হবে। এখনও ইউরোপের অনেক দেশ এই নিয়মই মেনে চলে। যদিও তারা এখন পর্যন্ত একটি সংস্থার ভেতরেই আবদ্ধ। কিছু ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন টিকে যেতে পারে। কিন্তু ইইউ’র অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক সম্পর্ক অনেক বেশি পরিমানে নিয়ন্ত্রিত হতে পারে সুবিধাভোগি গোষ্ঠি দ্বারা। কিছু রাষ্ট্র অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্রের সঙ্গে বাড়তি সম্পর্ক রাখতে পারে।

তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ছিন্ন
অনেকগুলো আরব রাষ্ট্রের অস্থিতিশীলতা থেকে মনে হচ্ছে আগামী এক দশকে এই সমস্যার সমাধান হবার নয়। আরব বিশ্বের অস্থিতিশীলতা থেকে লাভবান হতে থাকবে তুরস্ক। এই লাভবান হওয়া তুরস্ককে আরও শক্তিশালী এবং সীমান্তবর্তী রাষ্ট্রগুলোর কাছে আরও আধিপত্যবাদী হবে। সীমান্তে ঘনঘন সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে হবে দেশটিকে। আঙ্কারা প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্য থেকে কিছু রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগসাজস করার চেষ্টা করবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারিত্বে ফাটল ধরবে। তারপরেও তুরস্ক চাইবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবার জন্য যেন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাহায্য করে। রাজনৈতিক এবং সামরিক কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে দরকার তুরস্কের। যুক্তরাষ্ট্র তাদের কথা শুনলেও তার জন্য চূড়ান্ত মূল্য চুকাতে হতে পারে তুরস্ককে। তবে যুক্তরাষ্ট্র চায় না তুরস্ক কোনো প্রত্যক্ষ যুদ্ধে ভূমিকা পালন করুন এবং কৃষ্ণ সাগরে আধিপত্য বিস্তার করুক। এমতাবস্থায় প্রত্যক্ষ কারণ ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে।

সমস্যায় চীন
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিম্নগতির হওয়ায় আগামী দশক চীনের জন্য অস্থিতিশীলতার। ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরে পুরনো সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। ফলত চীনা প্রশাসন সঙ্কট মোকাবেলায় আরও নিয়ন্ত্রনবাদী চরিত্রে আবির্ভূত হতে পারে এবং দেশের ভেতরে বিরোধী মতবাদের উপর চাপ আসতে পারে। চীনের উপকূলবর্তী শহরগুলো দীর্ঘদিন ধরেই অর্থনৈতিক সমস্যায় জর্জরিত। চীন এই সমস্যা মোকাবেলায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে নগরায়নের বাজে ফলাফলের মুখোমুখি হতে পারে দেশটি। অন্যদিকে ভূমি অধিগ্রহন সমস্যার কারণে দেশে বিরোধী পক্ষ দাড়িয়ে যেতে পারে।

এশিয়ার নৌশক্তি জাপান
জাপান নৌশক্তিতে এগিয়ে তার কয়েক শতক ধরেই প্রমাণিত। আমদানি নির্ভর অর্থনীতির দেশ জাপানের বাইরে চীনও সমুদ্র শাসনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। জাপানের হাতে আঞ্চলিক ক্ষমতা রক্ষার্থে শক্তিমত্তা প্রদর্শন ছাড়া আর কোনো উপায় নাও থাকতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় জাপান নৌশক্তিতে চীনকে পরাস্ত করতে পারে। বর্তমানে জাপানের দরকার যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এশিয়া প্রশ্নে নিশ্চয়তা পাওয়া যাতে আমদানির শৃঙ্ক্ষলা রক্ষা করা যায়।

চীনের বিভক্তি ১৬ খন্ডে
অর্থনৈতিক কারণেই চীনের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি হবে। আর এই সমস্যা থেকে সোয়া বিলিয়ন জনসংখ্যার দেশ চীন অর্থনৈতিক ভাবে মোট ১৬টি খন্ডে খন্ডিত হতে পারে। কারণ চীনের শহরকেন্দ্রিক অর্থনীতির কারণে শহরগুলোই হবে এক একটি অর্থনৈতিক জোনো কেন্দ্র। এক চীনের উপর ভরসা করে আছে মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, ডমিনিক রিপাবলিক, পেরু, ইথিওপিয়া, উগান্ডা, কেনিয়া, তাঞ্জানিয়া, বাংলাদেশ, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার পতন
আগামী দশ বছরের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে বিচারবিভাগীয় কিছু সমস্যা অতিক্রম করতে হবে। আর এই সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হবে দেশের নেতৃত্ব সঙ্কট। বিশ্ব সমস্যা নিরসনে যে নেতৃত্ব দরকার তা দেয়ার মতো নেতা পাওয়া যাবে না। আর এমন অবস্থায় স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষমতা কেন্দ্র টিকিয়ে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক আধিপত্যবাদিতা চালিয়েই যাবে। পাশাপাশি অনেকগুলো অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি আসতে পারে। বিশেষত লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর উপর একক আধিপত্য হারাবে যুক্তরাষ্ট্র।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button