
যুদ্ধাপরাধীদের প্লট বাতিল : আইনি জটিলতায় জলঘোলা
ঢাকা, ১৪ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে একাত্তরের মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের যেসব সরকারি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, সরকারের পক্ষ থেকে সেগুলো বাতিল করার কথা বলা হলেও এখনো বাতিল করা হয়নি।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)’র কাছেও কোনো চিঠি আসেনি। তবে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আইনি জটিলতা নিরসন ও প্লট বাতিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে মৌখিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহে রাজউক বোর্ড সভা করে পরবর্তী পদক্ষেপ হাতে নেবে। রাজউক ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র বাংলামেইলকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এর আগে গতকাল বুধবার (১৩ জুলাই) সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘যুদ্ধাপরাপধীদের নামে যে প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল সেগুলো বাতিল করা হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময়ে রাজউকের পক্ষ থেকে বর্তমানে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত জামায়াত নেতাদের সরকারি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। বরাদ্দপ্রাপ্তরা হলেন- জামায়াতের আমির ও তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান।
এর মধ্যে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পে ৫ কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে। এতে এখনো কোনো অবকাঠামো তৈরি হয়নি।
প্লটটির বিষয়ে রাজউকের এক কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, ‘সাঈদীর প্লটটি বাতিল করা রাজউকের পক্ষে খুবই সহজ কাজ। কারণ এতে এখনো কোনো অবকাঠামো তৈরি হয়নি। তবে অন্যদের প্লট বাতিলের বিষয়ে আইনি জটিলতা দেখা দিতে পারে।’
একই সঙ্গে রাজউকের পূর্বাচল প্রকল্পের উত্তরা ১১নং সেক্টরের ১০নং সড়কের ২/১ এর ৫ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে। প্লটটি বরাদ্দ পেলেও জামায়াত নেতাদের পরিচালিত মিশন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানিকে ডেভেলপ করার জন্য তা দিয়ে দেন মুজাহিদ। এতে বর্তমানে ছয় তলা ভবন নির্মিত হয়েছে।
রাজউক কর্মকর্তারা জানান, মুজাহিদ প্লট বরাদ্দ নিয়ে আইন অমান্য করে ভবন নির্মাণ করেছেন। সে ক্ষেত্রে প্লটের বর্তমান মালিকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেয়া যাবে। তারা সে বিষয়টি মাথায় রেখেই এগুচ্ছে।
রাজউকের মূল্যবান প্লট বরাদ্দ থেকে বাদ যায়নি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরেক যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামানও। তিনিও সাংবাদিক কোঠায় ভাগিয়ে নিয়েছেন মিরপুরের সাংবাদিক কলোনির ১১নং সেকশনের ১নং ব্লকের ৪নং সড়কের ১০৫ নম্বর প্লটটি। বর্তমানে এই বাড়িতেই থাকে তার পরিবার।
একইভাবে জামায়াতের আমির ও তৎকালীর শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর নামেও একটি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। ২০০৬ সালে ‘রাষ্ট্রীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ’ বনানী ঝিলপাড়ে জে ব্লকের ১৮ নম্বর সড়কের ৬০ নম্বর প্লটটি তাকে বরাদ্দ দেয় রাজউক। বর্তমানে বাড়িটির নাম ‘মিশন নাহার’। ভবনটি ডেভেলপ করেছে মিশন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘মিশন’ আর নিজামীর স্ত্রী শামসুন নাহার নিজামীর নাম থেকে ভবনটির এ নাম। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে গত ১০ মে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
বনানীর এই প্লটটি ১৯৯৫ সালে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান আজিজুর রহমান নামে এক প্রবাসীকে প্রবাসী কোঠায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। ২০০৬ সালের ২১ মে রাজউকের বোর্ড সভায় তা বাতিল করে ৫ কাঠার ওই প্লট নিজামীকে দেয়া হয়। কিন্তু প্লট বরাদ্দ বাতিলের বিষয়ে আজিজুরকে কোনো চিঠি, কাগজপত্র কিংবা কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি। তিনি প্লটটির বিপরীতে কিস্তিতিতে ৩ লাখ টাকাও পরিশোধ করেছেন। এ নিয়ে আজিজুর গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে সচিবের কাছে অভিযোগ করলে বিষটির তদন্ত শুরু হয়।
এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বাংলামেইলকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করে নিজামী দেশের জন্য যে অবদান রেখেছেন তার স্বীকৃতিস্বরূপ খালেদা জিয়া তাকে এই প্লটটি দিয়েছিলেন। যে স্বাধীনতার বিরোধিতা করে সে কখনো দেশের জন্য অবদান রাখতে পারে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘যেসব যুদ্ধাপরাধী প্লট ডেভেলপারকে দিয়েছেন সে ক্ষেত্রে ডেভেলপারের অংশ রেখে বাকি অংশ আমরা নিয়ে নেব। কারণ, ডেভেলপারের তো কোনো দোষ নেই।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের সংশ্লিষ্ট শাখার এক কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধীদের প্লট বাতিলের বিষয়ে আমাদের কাছে এখনো মন্ত্রণালয়ের কোনো কাগজপত্র আসেনি। এক্ষেত্রে মন্ত্রী মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন- যুদ্ধাপরাধীদের প্লট বাতিল করতে আইনি জটিলতাসহ অন্যান্য দিকগুলো খতিয়ে দেখতে। আমরা এ বিষয়ে আগামী সপ্তাহের বোর্ড মিটিংয়ে এ বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যাবে।’