
কী শিখিয়ে গেল রমজান
ঢাকা, ১৫ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):
অসীম সওয়াবের ডালি ভরিয়ে দিয়ে বিদায় নিয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। আল্লাহ পাকের মুমিন বান্দারা এ মাসকে বিদায় দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের শংকা আগামী বছর তারা আবার এ মাসে জীবিত থাকবেন কি না। জীবনের পুঞ্জি জোগাড়ের মাস ছিল এটি। কবরবাসী কেঁদে আকুল হচ্ছেন কারণ তারা এ মাসে আজাব থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। তবে দুনিয়াদারেরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছেন। দিনেরবেলায় লুকিয়ে খাওয়াটা তাদের জন্য খুবই কষ্টকর ছিল। রাস্তায় রাস্তায় পর্দায় ঢাকা ছিল রেস্তরাঁ। পর্দা ফাঁক করে তারা টুক করে ঢুকে পড়তেন ভূরিভোজের জন্য। তারা এখন হাঁফ ছাড়ছেন।
এখন এসে হাজির হয়েছে আর এক মহা রহমতের মাস শওয়াল। খাতেমুন নাবিয়্যিন (সা.) এরশাদ করেছেন ‘যে ব্যক্তি রমজানে রোজা রাখে অতঃপর শওয়ালের ছয়টি রোজা রাখে, সে যেন সারা বছর রোজা রাখল।’ [বুখারি ও মুসলিম]। রমজানের ভাংতি রোজা থাকলে তা পূরণ করার পর শওয়ালের ছয় রোজা রাখতে হবে।
রমজান ছিল কৃচ্ছ্র সাধনের, সংযমের ও রিপু দমনের মাস। দেহের সব জানালা বন্ধ করে দেয়ার প্রচেষ্টার মাস ছিল এটি। দিনে পানাহার থেকে বিরত থেকে মুখ ও জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। শুধু তাই নয় চোখের পবিত্রতাও ছিল তার এক পথ, যা দিয়ে খারাপ কিছু দেখলে আমাদের আল্লাহ থেকে মনযোগ দূরে সরে যায়। কানের বাতায়ন বন্ধ করতে এমন কিছু সুরে আমরা বিভোর হয়ে পড়ব না যা শুনে আমাদের একাগ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। অপ্রয়োজনীয় কথা বলা থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। এ ছাড়াও প্রধান পথ হচ্ছে মানব হৃদয়। অন্তঃকরণে কুচিন্তা বাদ দিয়ে কর্মের ফাঁকে পলে পলে প্রভুর নাম স্মরণ করা।
এ সবই ছিল পবিত্র রমজান মাসের বিশেষ করণীয় কর্ম। তবে কি তা শুধু ওই মাসের জন্যই ছিল? না তা একেবারেই নয়। বাকি ১১ মাসের জন্য ছিল প্রশিক্ষণ পর্বের সময়কাল।
প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তা যদি আমরা বাস্তবে প্রতিফলিত না করি তবে তো সবই যাবে বিফলে।
তারই রেশ ধরে শওয়াল মাসের ছয় রোজার উপহারের বার্তা এসেছে। যাতে করে আমরা হঠাৎ ছেড়ে না দিই রোজা। রমজানে যা আমরা অভ্যাসে এনেছি তা আমাদের সারা বছর করে যাওয়ার চেষ্টা করে যেতে হবে। যেসব অন্যায় পথকে রমজানে বন্ধ রাখার চেষ্টায় ছিলাম তা কার্যকর করতে হবে। মসজিদে উপস্থিতির এবং ইবাদত-বন্দেগির যেন কোনো কমতি না হয়। রমণীরা যারা শরিয়তের সঠিক নিয়ম অনুযায়ী হিজাব ধরেছিলেন তারা যেন তা ধরে রাখেন। তবেই তারা সবসময় অনেক বিপদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাবেন।
এ ছাড়াও যারা আল্লাহতায়ালাকে রাজি খুশি করার জন্য শেষ দশ দিন এতেকাফ করেছেন। তাদের মাঝে এক বড় রকমের পরিবর্তন এসেছে। সবার কাছ থেকে আলাদা হয়ে শুধু মাওলার ইবাদতে মগ্ন ছিলেন। প্রেমময়ের স্মরণের স্বাদই আলাদা। জীবনের অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতির দৃশ্য মানস চোখে ভাসতে দেখেছেন। তাই আগামীতে তার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। এ মাসে বাক-সংযমের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। নফসের প্রভাবমুক্ত হয়ে পরম সত্তার উপলব্ধি কর্মে সচেষ্ট হয়েছেন। পরমাত্মার প্রেমের আশায় আলোকিত হয়েছেন। রাত জাগরণের কারণে গভীর নিশিথে পৃথিবীর পলে পলে প্রভুর নাম উচ্চারণের শব্দে কানকে আনন্দদান করেছেন। ধ্যানমগ্ন হয়ে অস্থির চিত্তকে শান্ত করে নিজেকে চেনার পথ সুগম করেছেন। আশাকরি এ সাধনাকে তারা সযত্নে আগলে নিয়ে জীবনের বাকি পথ পাড়ি দেবেন।
রমজানে আমরা পানাহারের সময় পাল্টিয়ে ফেলেছিলাম। শরীরের জন্য এটি একটি উত্তম ব্যবস্থা। পাকস্থলীকে আমরা সারা দিনের জন্য আরাম দিয়েছি। পানাহারের সময়ের পরিবর্তনের কারণে মাস শেষে সবার শরীর বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। শুধু তাদেরই হয় যারা পরিমিত আহার করেন। ওই যে পথগুলোর মধ্যে ছিল স্বল্পাহারের কথা। অতি ভোজন থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছিল। যারা তা করেননি তাদের অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা যায়।
শওয়াল মাসে আমরা ছয় রোজা রাখার চেষ্টাই শুধু করব তাই নয় বরং প্রতি মাসে চাঁদের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে রোজা রাখার চেষ্টা করব। আইয়েম বেজের রোজার ফজিলত অশেষ। এতে করে রমজান এলে রোজা রাখার ভয়-ভীতি দূর হয়ে যায়। রমজানে আমরা শিখেছি প্রভুর প্রেম। প্রভুর হুকুম পালনের মাধ্যমে তাঁর প্রেম বাড়াতে চেষ্টা করেছি। তাঁর কথামতো ধৈর্য ধরে তাঁর উপস্থিতি অনুভব করে খাবার সামনে এলেও ক্ষুধা নিবৃত্ত করা থেকে বিরত থেকেছি। নফসকে শক্ত করে বেঁধে রেখেছি যেন বিপথে না যায়। দান-খয়রাতের মাধ্যমে আর্তপীড়িতদের সেবা এ সবই মহান স্রষ্টার ভালোবাসা পাওয়ার জন্যই করেছি। এ শিক্ষা যেন আমরা জীবনভর পালন করে যেতে পারি এবং প্রেমময় প্রভু যেন তাঁর ও তাঁর হাবিবের প্রেমে আমাদের হৃদয় আলোকিত করে দেন।