বিনোদন

অন্তরালে চলে যাওয়া সুপারহিট নায়িকারা

ঢাকা, ১৬ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):

বাংলা সিনেমায় একসময় যাদের বিশাল আধিপত্য ছিল, ছিল অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা আর তুমুল জনপ্রিয়তা, সেই সুপারহিট নায়িকাদের আজ তেমন একটা দেখা যায় না। কেউ পারিবারিক কারণে, কেউ বা সিনেপর্দায় নিজের চাহিদা কমে যাওয়ায় একেবারে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন।

শাবানা :

ষাট থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা চিত্রনায়িকা শাবানা। তখনকার সময়ে ঢালিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা ছিলেন তিনি। সিনেমা পর্দায় অভিষেক ঘটে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার আজিজুর রহমানের হাত ধরে। ১৯৬৭ সালে অভিনয় করেন ‘চকোরী’ নামে একটি চলচ্চিত্রে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

তারপর থেকেই শুরু হয় নায়িকা শাবানার রূপালি পর্দায় রঙিন জীবন। ছবিটির পরিচালক ছিলেন বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার এহতেশাম। তিনিই প্রথম রত্না নাম বদলে শাবানা নাম দেন। চিত্রনায়িকা শাবানা চলচ্চিত্র জীবনে পাঁচ শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন এবং ২৫টি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেছেন।

দীর্ঘ চলচ্চিত্র জীবনে তিনি ১১বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। তবে দাপুটে থাকা গুণী এ শিল্পী ২০০০ সালে রূপালি জগত থেকে নিজেকে আড়াল করে ফেলেন। মিডিয়া থেকে একেবারেই দূরে সরে যান। বর্তমানে সপরিবার তিনি আমেরিকায় থাকেন।

দু-একবার পারিবারিক কাজে দেশে এলেও একটিবারের জন্য মিডিয়ামুখী হননি হাজারো দর্শকের হৃদয় জয় করা এ অভিনেত্রী। চিত্রনায়িকা শাবানা অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র ছিল ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’।

অঞ্জু ঘোষ
‘বেদের মেয়ে জোছনা খ্যাত প্রতিভাবান অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ। চলচ্চিত্র নির্মাতা এফ কবির চৌধুরীর হাত ১৯৮২ সালে তিনি সিনেমা জগতে আসেন। ‘সওদাগর’ দিয়ে অঞ্জুর অভিষেক এরপর ‘নরম গরম’, ‘আবেহায়াত’, ‘পদ্মাবতী’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

অভিনয় করেন ‘বড় ভালো লোক ছিল’, ‘আশীর্বাদ’, ‘রাই বিনোদিনী’, ‘আয়না বিবির পালা’, ‘আশা নিরাশা’, ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’, ‘রক্তের বন্দী’, ‘পদ্মগোখরা’র মত সফল চলচ্চিত্রে। এ ছাড়া অপার বাংলা তাপস পাল ও প্রসেনজিতের সঙ্গে অঞ্জু ঘোষের ছিল একাধিক সফল ছবি।

তবে ১৯৮৯ সালে অঞ্জু ঘোষ ও ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনীত ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ ঢালিউড ইতিহাস। এ ছবির ব্যবসায়িক রেকর্ড এখনো কোনো চলচ্চিত্র অতিক্রম করতে পারেনি।

কিন্তু বিভিন্ন নির্মাতা ও স্থানীয় মাস্তানদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে অঞ্জুর ওপর। তারা তাকে নানাভাবে হয়রানি শুরু করলে ১৯৯৬ সালে বাধ্য হয়ে মিডিয়া থেকে দূরে সরে যান তিনি এবং সপরিবারকে নিয়ে কলকাতায় চলে যান অঞ্জু। এরপর তাকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কলকাতার মিডিয়ায় খবর হলেও তাকে আর মিডিয়ায় দেখা যায়নি।

পপি
তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। বর্তমানে চলচ্চিত্র ও মিডিয়া থেকে নিজেকে পুরোপুরি আড়াল করে রেখেছেন। দীর্ঘদিন ধরে নতুন কোনো চলচ্চিত্রে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন না তিনি। তা ছাড়া মিডিয়ার কারো সঙ্গে তার তেমন কোনো যোগাযোগ নেই। মাঝেমধ্যে ঘনিষ্ঠ কিছু সহকর্মীর অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যায়।

নতুনদের ভিড়ে সিনেমায় তার চাহিদা কমে যাওয়ায় নতুন কোনো ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন না। আর সে কারণেই নিজেকে আড়াল করে রাখা। পপি অভিনীত সর্বশেষ চলচ্চিত্র গত বছরের শুরুর দিকে মুক্তি পায়।

অপু বিশ্বাস
শাবানা পপির মতো অপু বিশ্বাস একই পথেই হাঁটছেন ঢালিউডের বর্তমান সুপারহিট নায়িকা অপু বিশ্বাস। বেশকিছু মাস ধরে একেবারে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন অপু বিশ্বাস। মুটিয়ে যাওয়া’র দোহাই দিয়ে তিনি একাধিক চুক্তি হওয়া ছবিগুলোর কাজ ছেড়ে দিয়েছেন মাঝপথে। মিডিয়ার সঙ্গে কোনোপ্রকার যোগাযোগ করছেন না তিনি।

নিজের মোবাইল নম্বর বন্ধ করে রেখেছেন অপু। এবারের ঈদে তার অভিনীত ‘সম্রাট’ ছবিটি মুক্তি পেলেও মিডিয়ার সামনে তো দূরের কথা ছবির সংশ্লিষ্ট কারো সঙ্গেই যোগাযোগ করছেন তিনি। তবে মাঝে মধ্যে ফেসবুকে ছোট ছোট স্টেটাস দিয়ে ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন অপু।

শাবনাজ
নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনাজ। অভিনয় করেছেন ‘চাঁদনি’, ‘জিদ’, ‘লাভ’, ‘সাক্ষাত্, ‘আশা-ভালোবাসা’, ‘আঞ্জুমান’র মতো অসংখ্যা হিট ছবিতে তার ঝুলিতে। তবে শাবনাজ মানে ছিল চিত্রনায়ক নাঈম। তাদের জুটি সেসময়ে সবচেয়ে হিট জুটি। জুটি থেকে মন দেওয়ার পর্ব শেষ করেন শাবনাজ নাঈম। এরপর বিয়ে করে একেবারে সিনেমার অন্তরালে চলে যান এ জুটি। এরপর আর কোনো সিনেমায় দেখা যায়নি তাদেরকে।

রোজিনা

জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা রোজিনা। ছাত্রী অবস্থাতেই ঢাকায় মঞ্চনাটকের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। সত্তরের দশকে প্রথমে একটি বিজ্ঞাপনে মডেল হন। ১৯৭৬ সালে কালিদাসের ‘জানোয়ার’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে তার অভিষেক। টানা ১৯৯২ সাল পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেন তিনি।

এর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের চলচ্চিত্রেও কাজ করেছেন এ অভিনেত্রী। অর্জন করেছেন দুবার জাতীয় পুরস্কারসহ বাচসাস, প্রযোজক সমিতি ও পাকিস্তানের নিগার অ্যাওয়ার্ড। পারিবারিক কারণে দাপুটে এ অভিনেত্রী মিডিয়ার অন্তরালে চলে যান।

 

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button