
বাড়ছে বিমান ভাড়া
ঢাকা, ১৭ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):
দেশি-বিদেশি সব এয়ারলাইন্সে শিগগিরই ভাড়া বাড়ছে। সঙ্গে বাড়ছে যাত্রীদের ভ্রমণ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের খরচ। বিমানের ল্যান্ডিং, পার্কিং, রুট নেভিগেশনসহ বিভিন্ন অ্যারোনটিক্যাল খাতের মাশুল বাবদ ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে অর্থ পরিশোধ করে এয়ারলাইন্সগুলো। তবে মূষক আরোপের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করে একাধিক এয়ারলাইন্স। যা সম্প্রতি খারিজ করে দেন আদালত। আদালতের এই সিদ্ধান্তের পর ভাড়া বাড়ার বিষয়টিও এক রকম নিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে জানা গেছে, এনবিআরের আরোপ মূষক নিয়ে হাইকোর্ট রিট পিটিশন-১০০০০/২০১৫ (এইচ জি এভিয়েশন লি. বনাম চেয়ারম্যান সিএএবি) এবং রিট পিটিশন-৯৮০৬/২০১৫ (অ্যামিরেটস এয়ারলাইনস বনাম চেয়ারম্যান সিএএবি’র গং) এর রায়/আদেশের সার্টিফাইড কপি প্রদান করা হয় গত ১ মার্চ। যা পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের জন্য বেবিচকে পাঠানো হয় গত ৩০ জুন। যার মাধ্যমে অ্যারোনটিক্যাল চার্জে ১৫ শতাংশ মূসক আরোপে আর কোনো বাধা থাকল না।
এ প্রসঙ্গে বেবিচকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে জানান, হাইকোট থেকে রায়ের কপি পাওয়ার প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এয়ারলাইন্সগুলো থেকে মূসক আদায়ের জন্য দেশের সব বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এয়ারলাইন্সগুলোর এরোনটিক্যাল চার্জের উপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক আদায়ের পাশাপাশি এয়ারলাইন্সগুলোকে ২০০৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রদেয় মূসক বকেয়া হিসেবে পরিশোধের আদেশ দিয়েছে এনবিআর। এতে নতুন করে ভাড়া বাড়ানোর পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে ভ্রমণ করা যাত্রীদের কাছ থেকে মূসক আদায় নিয়ে সংকটে পড়বে এয়ারলাইন্সগুলো। তিন বছরের বকেয়া হিসেবে মূসক দাঁড়ায় ২২০ কোটি ৯৬ লাখ ১৩ হাজার ৬২৭ টাকা। যা ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে বেবিচককে। পরবর্তীতে বেবিচক এয়ারলাইন্সগুলো থেকে বকেয়া আদায় করে নিবে।
সূত্র জানায়, এয়ারলাইন্স খাত কোনো ভাবেই মূসকের আওতায় পড়ে না। কারণ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আইন ১৯৯১ ও অর্থ আইন ২০১২ অনুযায়ী, মূসক থেকে অব্যাহতি পাওয়া সেবা খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে এয়ারলাইনস। শুধু চার্টার্ড ফ্লাইট ও হেলিকপ্টার ভাড়া প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে মূসক দিতে হবে। সেক্ষেত্রে এই আইন উপেক্ষা করেই এয়ারলাইন্সগুলোর এরোনটিক্যাল চার্জের উপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এ বিষয়ে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলো এমনিতেই টিকতে পারছে না। তার উপর আবার নতুন করে বাড়তি মূসক গুনতে হবে। এতে ইন্ড্রাস্ট্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাছাড়া উড়োজাহাজের সব ধরনের যন্ত্রাংশই আমদানি নির্ভর, শত ভাগ আমদানি নির্ভর এসব যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করতে গিয়েও বিভিন্নভাবে মূসক দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় এয়ারলাইন্সগুলোর উপর বাড়তি মূসক চাপিয়ে দেওয়া হলে পরিচালন ব্যয় আরও বাড়বে। যা এ খাতে সংকট তৈরির পাশাপাশি যাত্রীদেরও ভ্রমণ ব্যয় বাড়াবে।
উল্লেখ্য, এর আগে অ্যারোনটিক্যাল চার্জ থেকে মূসক আদায়ে গত ২৯ জুন ২০১৫ সালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে এনবিআর কর্তৃপক্ষ। এ সময় বেবিচকের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে এয়ারলাইন্সগুলোর কাছ থেকে এরোনটিক্যাল চার্জের উপর ১৫ শতাংশ হারে মূসক আদায়ের সিদ্ধান্ত দেয় এনবিআর। পরবর্তীতে মূসক আদায়ের বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনায় থাকা দেশি-বিদেশি সব এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে বেবিচক। বৈঠকে দেশের সবগুলো বিমানবন্দরে অ্যারোনটিক্যাল চার্জের সঙ্গে মূসক আদায়ের বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে ২০০৯ সাল থেকে বকেয়া মূসক আদায়ের বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর প্রতিনিধিরা।