জাতীয়

মশক নিধনে ব্যর্থ দুই সিটি কর্পোরেশন

ঢাকা, ১৭ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):

সম্প্রতি রাজধানীতে মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। কয়েল জ্বালিয়ে বা ওষুধ স্প্রে না করে কোথাও স্থির থাকা যাচ্ছে না। বাসা-বাড়ি কিংবা বাইরের কর্মস্থল সর্বত্র একই চিত্র। মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ নগরবাসী দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর ওপর বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে।

খোঁজখবের জানা যায়, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পুরাতন আয়তন ১২৭ বর্গকিলোমিটার। এখন পর্যন্ত এই এলাকার মধ্যে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করছে দুই সিটি কর্পোরেশন। সম্প্রসারিত আয়তনের এখনও সেবা কার্যক্রম শুরু হয়নি। মশক নিধনে দুই সিটি কর্পোরেশনকে সহায়তা করছে ঢাকা মশক নিবারণী দফতর। মশক নিধনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এ তিন সংস্থা বছরে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করলেও মশক নিধনে কার্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ তিনটি সংস্থা সরঞ্জামাদি ক্রয়, ওষুধ ক্রয় এবং কচুরিপনা পরিষ্কারসহ অন্যান্য মিলিয়ে প্রায় ৪০ কোটি টাকা খরচ করছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না।

রাজধানীবাসীর অভিযোগ, মশক নিয়ন্ত্রণ খাতের বরাদ্দ লুটপাট করে খাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ কারণে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। এছাড়াও মশক নিধন শ্রমিকদের কাজে ফাঁকি দেয়ার বিষয়েও অন্তহীন অভিযোগ নগরবাসীর। যদিও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করছেন। এর সপক্ষে তারা ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।

হাজারীবাগের কোম্পানীঘাট বাজারের বাসিন্দা শাফায়েত হোসেন যুগান্তরকে জানান, প্রতিদিন মশক নিধন শ্রমিকদের প্রত্যেক এলাকায় ওষুধ ছিঁটানোর কথা থাকলেও মাসেও একবার তাদের দেখা মিলে না। কয়েল বা স্প্রে না করে দিনের বেলায়ও দোকানপাটে বসা যায় না। আর ঘরে তো রাত-দিন সবসময় কয়েল জ্বালিয়ে রাখা হচ্ছে বা স্প্রে করা হচ্ছে।

কুড়িল বিশ্ব রোড চৌরাস্তার মুদি দোকানদার আনোয়ার হোসেন জানান, সকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। কখনও ওই এলাকায় কোনো মশক নিধন শ্রমিক দেখেনি। তার অভিযোগ, ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত মশক নিধন কর্মীরা সেখানে ওষুধ ছিঁটান না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও ওই এলাকার বিষয়ে কোনো দৃষ্টিপাত করেন না।

এ মুদি দোকান মালিক আরও জানান, সাম্প্রতিক সময়ে মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ তারা। দিনের বেলায়ও দোকানে কয়েল জ্বালিয়ে রাখতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এসএমএম সালেহ ভূঁইয়া জানান, ডিএনসিসির মশক নিধন খাতের বরাদ্দ যথাযথভাবে খরচ করা হয়। রাজধানীর এ অংশের মশার উপদ্রব অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে কম। তবে কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। সেগুলো হল- ১. কার্পেটিং ড্রেন : বেশির ভাগ ড্রেন কার্পেটিং করায় সেসব ড্রেন পরিষ্কার করা এবং ওষুধ ছিঁটানো যাচ্ছে না। ২. জলাধারের আবর্জনা : ডিএনসিসি অংশে সিটি কর্পোরেশনের বাইরের অনেক সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থার জলাধার রয়েছে। সেগুলো পরিষ্কারের জন্য সিটি কর্পোরেশন অর্থ খরচ করতে পারছে না। ৩. যানবাহন সংকট : ডিএনসিসি এলাকার মশক নিধনের জন্য পর্যাপ্ত যানবাহন নেই। এ কারণে সঠিক ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরও জানান, বিদ্যমান সামর্থ্য নিয়ে ডিএনসিসি রাজধানীর একাংশের মশক নিধনের জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে, ‘আমরা সীমাবদ্ধতাগুলোর কারণে পুরোপুরি সাফল্য পাচ্ছি না।’ সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. সাইদুর রহমান ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কিছু কাজ আমরা করতে পারছি না। এ কারণে মশার উপদ্রব পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। এরমধ্যে অন্যতম- পর্যাপ্ত বরাদ্দ না দেয়ায় জলাধারগুলো পরিষ্কার হচ্ছে না। এছাড়া জ্বালানি স্বল্পতার কারণে সঠিক নিয়মে মশার ওষুধ ছিঁটানো সম্ভব হচ্ছে না।’

তিনি আরও জানান, ‘বিদ্যমান সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করছি, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।’ প্রাপ্ত তথ্যমতে,

ডিএসসিসির মশক নিধন বিভাগে স্প্রেম্যান রয়েছে ১৮৩, ‘ত্রুদ্ধ’ রয়েছে ১৫১, সুপার ভাইজার রয়েছে ১০ জন। ফগার মেশিন রয়েছে ২১৪টি, হস্ত চালিত মেশিন রয়েছে ২৯২টি, হুইল ব্যারো মেশিন রয়েছে ২০টি। আর ডিএসসিসি এলাকায় জলাধার রয়েছে ৪৮৮ বিঘা। কাগজে-কলমে দেখানো হচ্ছে, ডিএসসিসির ৩৬টি ওয়ার্ডে মাসে আড়াইশ’ লিটার লার্বিসাইট, ৩৫ হাজার লিটার ‘ম্যালেরিয়া ওয়েল বি’, ৪ হাজার ৯৭১ লিটার ‘অ্যাডাল্টি সাইট’ ওষুধ খরচ করা হচ্ছে। ডিএনসিসির সূত্রমতে, উত্তর ঢাকা এলাকায় ৩০৯ জন মশক নিধন শ্রমিক রয়েছে। এরমধ্যে ‘ত্রুদ্ধ’ রয়েছে ১৮৯ জন। আর স্পেম্যান রয়েছে ১২০ জন। সুপার ভাইজার ১০ জনের স্থলে রয়েছে ৮ জন। ডিএনসিসি এলাকায় মোট জলাধার রয়েছে ১ হাজার ৮৭৫ বিঘা। জলাধার পরিষ্কার ও মশক নিধনে বছরে ২ লাখ ৪২ হাজার লিটার, লার্বিসাইট ব্যবহার করা হয় ৪ হাজার লিটার, ‘ম্যালেরিয়া ওয়েল বি’ ৫০ হাজার লিটার খরচ করা হয়। এছাড়া ফগার মেশিন রয়েছে ২১৭টি, হস্তচালিত মেশিন রয়েছে ২৮৭টি, হুইল ব্যারো মেশিন রয়েছে ১টি।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button