
তুরস্কের বিদ্রোহী সেনারা যেভাবে অভ্যুত্থান শুরু করেছিল
ঢাকা, ১৭ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):
ইস্তাম্বুলের বসফোরাস ব্রিজ ও কামাল আতাতুর্ক বিমান বন্দরে ট্যাঙ্ক মোতায়েনের আগেই শুক্রবার রাতে তুরস্কের শহরটির আকাশে একটা গুমোটে ভাব বিরাজ করছিল। বলছিলেন, লন্ডন থেকে ছুটি কাটাতে আসা ২৩ বছর বয়সী ব্যবস্থাপনা পরামর্শক গ্যাব্রিয়েল টার্নার। শহরে ঘোরার সময় অতিরিক্ত পুলিশ দেখে তার সঙ্গে থাকা দুই তুর্কী বান্ধবী তাকে বলছিল যে, অশুভ কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। এর কয়েকঘন্টা পরে রাত আটটার দিকে বাড়ির ছাদ ঘেঁষে একটি পুলিশ হেলিকপ্টারও উড়ে যেতে দেখেন তিনি। তবে রাত সাড়ে দশটার আগে সেনা বিদ্রোহের বিষয়টি পুরোপুরি বুঝা যায়নি। ইস্তাম্বুলের কেন্দ্রস্থলে আড্ডায় জড়ো হওয়া কয়েকজন বন্ধু মোবাইলে অনলাইন ব্রাউজিং করছিল। হঠাৎ করেই তারা খবর দেখতে পেল, তুরস্ক ফের আরেকবার সেনা অভ্যুত্থানের কবলে। উত্তোরত্তর কর্তৃত্ববাদি হয়ে ওঠা তুর্কী প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ছুটিতে থাকার সুযোগে দেশটির সেনাবাহিনীর অসন্তুষ্ট একটি অংশ বিদ্রোহ করেছে। রাত সাড়ে দশটার মধ্যেই বসফোরাস ব্রিজ, রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল ও কামাল আতাতুর্ক বিমান বন্দর দখল করে নেয় বিদ্রোহী সেনারা। রাত ১০টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানী আঙ্কারার আকাশে বড়ির ছাদ ঘেঁষে তুর্কী এফ-১৬ জঙ্গি বিমান উড়তে শুরু করে।
একই সময়ে বসফোরাসের ফেইথ ব্রিজটি বন্ধ করে দিয়ে এশিয়ার সঙ্গে ইউরোপের যোগাযোগও ছিন্ন করা হয়। এর কিছু্ক্ষণ পরই ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক বিমান বন্দরে সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক মোতোয়েনের ছবি সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে আতঙ্ক আরো গভীর হতে থাকে। এর ঘন্টা খানেক পরই ঘোষণা আসে একটি শান্তি পরিষদের অধীনে তুরস্কে সামরিক শাসন জারি করা হয়েছে। বিদ্রোহী সেনারা ঘোষণা করে জনগনের জানমালের নিরাপত্তা বজায় রেখেই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ওপর হামলা করা হবে। বিদ্রোহীরা তার বিরুদ্ধে তুরস্কে আইনের শাসন ধ্বংসের অভিযোগ এনে যুদ্ধের এই ঘোষণা দেয়।
রাত ১১টার মধ্যেই সেনারা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে পুরো দেশের ক্ষমতা নিজেদের দখলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয় এবং টুইটার, ফেসবুক ও ইউটিউব ব্লক করে দেয়। এর পরপরই আঙ্কারার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের প্রহরায় নিযুক্ত পুলিশদের নিরস্ত্র করা হয়। বিদ্রোহী সেনা সদস্যদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের খবরও ছড়িয়ে পড়তে থাকে চারদিকে। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রিপোর্ট করে, সেনা প্রধান হুলুসি আকারকে অপহরণ করা হয়েছে। বিদ্রোহী সেনাদের পরিকল্পনা স্পষ্টতই পুরন হয়নি। সম্প্রতি নিয়োগপ্রাপ্ত তুর্কী প্রধানমন্ত্রী কোনো সেনা অভ্যুত্থানের দাবি নাকচ করে দিয়ে নিরাপত্তাবাহিনীগুলোকে বিদ্রোহ দমনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আদেশ দেন। ওদিকে আঙ্কারার তাকসীম চত্বরে অবস্থান নেওয়া সেনা সদস্যদের দেখে উল্লাস শুরু করেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সরকারবিরোধীরা। অনেকে মোস্তফা কামাল পাশার নাম উচ্চারণ করে স্লোগান দিতে থাকেন। এক তরুণী চিৎকার বলে ওঠেন এবার একেপি ধ্বংস হবে! বিশ্বাসঘাতক! তুরস্কে সর্বশেষ সফল সেনা অভ্যুত্থান হয় ১৯৫০ এর দশকের দ্বিতীয়ার্ধে।
তবে সম্প্রতি দেশটির সেক্যুলার মতাদর্শী লোকদের মধ্যে মডারেট ইসলামপন্থী এরদোয়ান সরকারের বিরুদ্ধে অসন্তোষ দানা বাঁধতে থাকায় অনেকে সেনা অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা করছিল। যাইহোক এর দু্ই ঘন্টা পর মি. এরদোয়ান মার্কিন টিভি চ্যানেল সিএনএন টার্কিতে এক ভিডিও বক্তব্যে সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার ঘোষণা করেন। এসময় তিনি “ষড়যন্ত্রকারীদে”র এর জন্য চড়া মূল্য পরিশোধ করতে হবে বলেও ঘোষণা করেন। কিন্তু তিনি কথা বলার সময়ও আঙ্কারার পার্লামেন্ট ভবনের দিকে সামরিক ট্যাঙ্ক এগিয়ে যেতে দেখা যায়। রাজধানী শহরটির আকাশে জঙ্গি বিমান ওড়ার পাশাপাশি বিস্ফোরণের আওয়াজও আসতে থাকে। বিস্ফোরণের ফলে রাতের আকাশে আলোর ঝলকানি দেখা যায়। সূত্র: দ্য টেলিগ্রাফ