
‘লাইভ নিউজ নেটওয়ার্ক’ হতে চলেছে ফেসবুক?
ঢাকা, ১৯ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):
সম্প্রতি খবরের দুনিয়ার বড় খবরটি ছিল, ফেসবুক সাংবাদিকতার দুনিয়া থেকে দূরে থাকছে। কিন্তু রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত কিছু সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে ফেসবুক বিতর্কের জন্ম দেয়। কিছু রক্ষণশীল ওয়েবসাইটের খবর কিভাব প্রচার করে ফেসবুক? বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোশাল মিডিয়া জানায়, তারা আসলে বিভিন্ন মিডিয়া কম্পানির মাধম্যে প্রচারিত বিয়ে ও শিশুর ছবি তুলে আনার জন্যে নতুন অ্যালগোরিদমের পরীক্ষা চালাচ্ছে।
এর পর ফেসবুকের ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ যখন ফেসবুকের লাইভ ভিডিও ফাংশনের ঘোষণা দিলেন, তখনও বন্ধুদের আরো কাছে থাকার প্রসঙ্গেই কথা বললেন তিনি। এপ্রিলে কিছু ভিডিও পরীক্ষামূলকভাব প্রচার করা হলো। সেখানে পারিবারিক বিষয় এবং মানুষের জীবনের মজার কিছু ভিডিও প্রকাশ পেলো। একে নতুন কিছু বলে অভিহিত করলেন জাকারবার্গ। কিন্তু জুলাইয়ে বিষয়টি অন্যদিকে মোড় নিলো। আমেরিকার মিনেয়াপোলিসে এক পুলিশ অফিসার যখন ফিলান্ডো ক্যাসটাইল নামের এক কালো তরুণকে কয়েকটি গুলি করলেন, তখন সে ঘটনা তরুণের প্রেমিকা স্মার্টফোনের ফেসবুকের ‘গো লাইভ’ বাটনে চাপ দিয়ে প্রকাশ করলেন ফেসবুকে। পরে তরুণীকে মাটিতে ফেলে হাতে হাতকড়া পরানো হয়। তখনই লাইভ চলছিল ঘটনাটি। এর পরে আবার ডালাসে পুলিশ অফিসারকে গুলি করে হত্যার ঘটনার লাইভ ব্রডকাস্ট প্রচারিত হলো ফেসবুক ভিডিওতে। এ ঘটনা ওই কালো তরুণকে গুলি করার প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা।
এই দুটি ঘটনার পর ফেসবুকের লাইভ খবরকে এড়িয়ে চলা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়লো। এ ঘটনার পর ফেসবুক লাইভ ইন্টারভিউয়ে নিউট গিনগ্রিচ সিএনএন’কে বললেন, আপনি যদি সাদা আমেরিকান হয়ে থাকেন, তবে এখানে কালোদের অবস্থা কখনো বুঝতে পারবেন না। স্মার্টফোনে রিয়েল টাইমে ভিডিও ব্রডকাস্ট নতুন কিছু নয়। টুইটারের পেরিস্কোপ গত বছর এ কাজটি করে খবরের শিরোনাম হয়। তবে যারাই এ কাজ করুক, ফেসবুকের মতো ১.৬৫ বিলিয়ন ব্যবহারকারী নিয়ে তা ইতিহাস ঘটিয়ে দিতে পারবে না। যেকোনো ফুটেজ গোটা বিশ্বে তড়িৎ গতিতে ছড়িয়ে দিতে ফেসবুকের মতো কোনো প্লাটফর্ম নেই। ক্যাসটাইলের মৃত্যুর ঘটনা তৎক্ষণাৎ ৫০ লাখ মানুষের কাছে ছড়িয়ে যায়। এর পর তা কয়েকটি নিউজ চ্যানেলে প্রচার করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার মেনলো পার্কে ফেসবুকের এক সভায় জাকারবার্গ প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যত বলতে এই লাইভ ভিডিও’র কথা তুলে ধরেন। তবে এটা তাদের প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। যখন ফেসবুক লাইভ ভিডিও দেখাবে তখন ফেসবুককে ফুটেজ দেখানোর প্রক্রিয়া, উৎস এবং তা তাৎক্ষণিক প্রচারের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ লাইভ-স্ট্রিমিং বিষয়টি সত্যিকার অর্থেই অনেক কঠিন বলে জানান চিফ প্রোডাক্ট অফিসার ক্রিস কক্স। এ ধরনের ঘটনা লাইভ প্রচারের বিষয়টি আইনগত এবং নীতিগত প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত। ফেসবুকে লাইভ দেখানো হয়ে যে অন্তত ৫ মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে। ভিডিও প্রচারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ বিরাজ করে। কারণ ফেসবুক মডারেটরদের নির্দেশ দিয়েছে যেন তা ফেসবুক কমিউনিটিতে একটা মানদণ্ড বজায় রাখে।
এর মধ্যে হুমকি প্রদান, আত্মহনন, মারাত্মক সব সংস্থার কর্মকাণ্ড, অপরাধ সংঘটন, নগ্নতা, ঘৃণাপূর্ণ বক্তব্য ইত্যাদি প্রচারের ক্ষেত্রে নানা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে ফেসবুকের। হার্ভার্ডের বার্কম্যান ক্লেইন সেন্টারের ইন্টারনেট সোসাইটির পরিচালক জোনাথন জিট্রেইন জানান, ফেসবুক এখন ক্ষমতার এক উৎস। কিছু বিষয় যেন ভাইরাল না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে ফেসবুককে। এ ধরনের কাজে ফেসবুক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু তাও অনেক দূরের পরিকল্পনা। ওই কালো তরুণের প্রেমিকার ভিডিও অতি গুরুত্বপূর্ণ খবর হতে পারে। কিন্তু তা মারাত্মক চিত্র প্রকাশ করছে। জুলাইয়ের ৭ তারিখে ফেসবুক কোনো ব্যাখ্যা ছাড়াই ভিডিওটি মুছে ফেলে। আবার ১ ঘণ্টা পর ক্ষমা চেয়ে তা তুলে দেওয়া হয়। অনেকেই অভিযোগ করেন, পুলিশ তা মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু ফেসবুক এটা তাদের যান্ত্রিক ত্রুটি বলে ব্যাখ্যা দেয়। জাকারবার্গ এক বিবৃতিতে বলেন, গুলির ঘটনার ছবি সত্যিকার অর্থে হৃদয়বিদারক। আশা করি এমন ভিডিও আমাদের আর দেখতে হবে না। কিন্তু এমন ভিডিও আসতেই থাকবে। আবার একই সংবাদমাদ্যম হয়ে উঠবে ফেসবুক। জাকারবার্গ তা চান বা নাই চান। সূত্র : ব্লুমবার্গ