
ধর্মীয় শিক্ষা ও পারিবারিক মূল্যবোধের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য
ঢাকা, ২১ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের সমস্যা দূর করতে সন্তানদের সঠিক ধর্মীয় শিক্ষা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে তিনি পরিবারের পিতা-মাতাদের তাদের উঠতি বয়েসী সন্তানদের আরও বেশি সঙ্গ দিয়ে তাদের মনের কথা শোনা ও বুঝার আহ্বান জানিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন আহবান অবশ্যই সময়োচিত। আমরা মনে করি, পাঠ্যসূচিতে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা এ মুহূর্তে জরুরি। সেই সঙ্গে অনুরোধ থাকবে, কোরআন-হাদিস এবং ধর্মীয় শিক্ষাকে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে অন্তর্ভুক্ত ও পাঠ নিশ্চিত করা যায় কি-না সে বিষয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করার বিষয়েও।
সাম্প্রতিক ভয়াবহ সন্ত্রাসী ঘটনাগুলোতে ইংরেজি মাধ্যমের নামী-দামী স্কুল ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততার কথা শোনা যাচ্ছে। আধুনিক নাগরিক জীবন ধারায় মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের জড়িত থাকার বিষয়টি অবশ্যই গভীর ভাবনার দাবী রাখে।
চলমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বিশ্লেষকদের অভিমত হলো- প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা বর্তমান প্রজন্মকে ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বিচ্যুত করে তুলছে। পক্ষান্তরে অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনেকেই উগ্রবাদী সংগঠন, ভ্রান্ত মতবাদ ও শিক্ষার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। পেশা ও বিত্ত-বৈভবের মোহে অতি ব্যস্ত পিতা-মাতারা সন্তানদের শিক্ষা ও জীবনযাত্রার পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করলেও তারা তাদের সময় বা সঙ্গ দিতে পারছেন না। তাছাড়া পরিবারের সদস্যরা যার যার মতো ব্যস্ত থাকার কারণে একই ছাদের নিচে থাকার পরও পরস্পরের মধ্যে এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হচ্ছে। এমতাবস্থায়, সত্যিকার অর্থে ধর্মীয় শিক্ষা এবং পারিবারিক বন্ধনকে আরও সুসংহত করা গেলে সন্তানের বিপথগামিতা রোধ করা অনেকাংশেই সম্ভব।
বাংলাদেশসহ এ উপমহাদেশের হিন্দু-মুসলমানরা হাজার বছর ধরে নিজস্ব ধর্মীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ অটুট রেখে শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। শত শত বছরের সুলতানি ও মুঘল শাসনের সময়ও কোনো ধর্মীয় জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের ইতিহাস নেই। সারাবিশ্বে চলমান সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে নানাবিধ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়াবলী জড়িত। এক অর্থে এ সমস্যা এখন আর কোনো দেশের একক সমস্যা নয়। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তবে দেশিয় বাস্তবতা কিংবা আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও জাতিগত বিরোধকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো তাদের থাবা বিস্তার করে থাকে। অনেক দেরীতে হলেও তরুণ সমাজের বিপথগামিতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে তাদের জড়িয়ে পড়ার সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসমুখের দিকে দৃষ্টি পড়েছে সরকারের। ধর্মীয় শিক্ষা এবং পারিবারিক সম্পর্কের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় ও অর্থবহ করে তোলার প্রয়োজনীয়তার এই উপলব্ধি সমাজে একটি ইতিবাচক আবহ সৃষ্টি করতে পারে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
ধর্মীয় শিক্ষা না থাকলে ধর্ম সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করা অনেক সহজ। বিশেষত, ইসলামের অপব্যাখ্যা করে একটি পক্ষ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে একদিকে মুসলমান তরুণদের সহজেই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করছে, অন্যদিকে এসব সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ডকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমাবিশ্ব ইসলামভীতি ছড়াচ্ছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনের নামে মুসলিম বিশ্বে পশ্চিমা বিশ্বের সামরিক আগ্রাসন ও টার্গেট কিলিং কোনো কাজে আসেনি। উল্টো আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষী মহল মুসলিম বিশ্বের বিক্ষুব্ধ তরুণদের সহজেই জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত করতে পেরেছে। গতানুগতিক নিরাপত্তা প্রযুক্তি, পুলিশি ও সামরিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণেই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক মনস্তাত্ত্বিক কারণসমূহ নিয়ে নতুন চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।
ইসলামসহ সব ধর্ম শান্তির কথা বলে এবং ধর্মীয় শিক্ষাকে কাজে লাগানোর কথা বলা হলেও বিদ্যমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতার পরিবর্তনে কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। মূলত, দেশের রাজনৈতিক অনৈক্য ও অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়েই জঙ্গি-সন্ত্রাসীরা তাদের ছক তৈরি করেছে এবং পারস্পরিক দোষারোপের রাজনীতিতে তারা দীর্ঘদিন নিজেদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, নতুন প্রজন্মকে প্রকৃত অর্থে ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষা কারিকুলাম সম্পর্কে নতুনভাবে ভাবতে হবে। সেই সঙ্গে সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা দূর করার কার্যকর রাজনৈতিক উদ্যোগে সবাইকে নিয়ে পথ চলতে হবে।