বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

অনলাইন ডেটিংয়ে যুক্ত হয়েছে কয়েক লক্ষ বাঙালি

ঢাকা, ২১ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):

অনলাইন ডেটিং সাইট এবং অ্যাপগুলোর ব্যবহার দ্রুতগতিতে বেড়ে চলছে বাংলাদেশ ও ভারতের বাঙ্গালী সমাজে। প্রচুর বাঙ্গালি ইউজার এখন ডেটিং সাইটে দিনরাত চ্যাটিং করে চলছে। দরকার শুধু একটা স্মার্টফোন আর ইন্টারনেট কানেকশন। বিষয়টির নানা দিক নিয়ে ওপার বাংলার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধ তুলে ধরা হলো :

ঘটনা ১ : মেয়ের হাতে মোবাইল দেওয়ার পর থেকেই মনের কোণে সন্দেহ উঁকি মারছিল৷ খালি মনে হত , ফোন পেয়ে মেয়ের মাথাটা বিগড়ে যাবে না তো ? কিন্ত্ত তার পরিণতি যে এমনটা হবে , তা ভাবতেই পারেননি রেলের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সব্যসাচী ঘোষ (নাম পরিবর্তিত)৷ তার কথায় , মেয়ে একদিন স্কুল থেকে ফিরে মাকে বলল , “মা আমার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে সানডে ডেটিংয়ে বেরোচ্ছি৷ “ স্কুলে তার অন্য বন্ধুরাও নাকি মাঝে -মধ্যেই ডেটিংয়ে যায়৷ মেয়ের কথা শুনে মায়ের তো মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগাড়৷ বকাঝকা , মারধর কোনও কিছুতেই কাজ হয়নি৷ তারপর বন্ধুদের পরামর্শে আপাতত শহরের এক খ্যাতনামা মনোবিদের কাছে ক্লাস টুয়েলভে পড়া একমাত্র মেয়ের কাউন্সেলিং করাচ্ছেন তিনি৷

ঘটনা ২: মনের কোণে ইচ্ছা বাসা বাঁধলেও ছাত্রজীবনে কোনও দিন প্রেম করা হয়ে ওঠেনি সুকল্যাণ চৌধুরীর (নাম পরিবর্তিত)৷ স্কুল -কলেজে পড়ার সময় বন্ধুরা যখন প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে , তখন বইয়ের পাতায় মগ্ন থেকেছে মাধ্যমিকের মেধাতালিকায় জায়গা করে নেওয়া গ্রামের ছেলেটি৷ কিন্ত্ত মোটা মাইনের চাকরি পাওয়ার পর সেই ছেলেটিই যে এতটা বদলে যাবে , তা কোনও দিন কল্পনাও করেননি তার বন্ধুরা৷ চাকরি পাওয়ার পরই অনলাইন ডেটিং সাইটের মাধ্যমে কলেজ পড়ুয়া এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রথম আলাপ৷ হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুকের মেসেঞ্জারে প্রেমালাপ৷ তারপর মাস ঘুরতে না ঘুরতে গোপনে মন্দারমণি সমুদ্র সৈকতে ডেটিং৷ বছর দু”য়েক এ ভাবে চলার পর অবশেষে সাত পাকে বাঁধা পড়তে চলেছেন শিবপুর বিই কলেজের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওই মেধাবী ছাত্র৷

মনের মতো জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতে , কে না চায়৷ একটা সময় পর্যন্ত দু”হাত এক করার কাজটা করতেন মূলত ঘটকরা৷ প্রথমে কনে দেখার পালা৷ বিনম্র হয়ে বসতে হত পাত্রপক্ষের সামনে৷ উল্টো দিক থেকে ধেয়ে আসত চোখা চোখা প্রশ্ন৷ সেই পরীক্ষায় উতরানোর পর আসত দেনা -পাওনার প্রসঙ্গ৷ তার পর ঠিকুজি মিলিয়ে বিয়ের দিন স্থির হত৷ তার আগে পাত্র -পাত্রীর দেখা -সাক্ষাত্ , মেলামেশা ছিল কল্পনাতীত৷ পাত্র -পাত্রী নির্বাচনে অভিভাবকদের ইচ্ছাই ছিল শেষ কথা৷ কিন্ত্ত সময় বদলেছে৷ দেখাশোনার বিয়ের সংখ্যায় ক্রমে থাবা বসাচ্ছে প্রেমের পরিণয়৷ সঙ্গে ইন্টারনেট খুললেই ডেটিং সাইটের ছড়াছড়ি৷ তাদের কত কী নাম৷ মেট ফর অল , মেট্রোডেট ডট কম , কোয়াক কোয়াক ডট ইন , শাদি ডট কম , ভিভা স্ট্রিট , কলকাতা পার্সোনালস , সাইবার ডেটিং , দেশি কিস ডট কম৷ একেক সাইটের একেক রকম নাম৷ সেখান থেকেই মনের মানুষ খুঁজে নিচ্ছেন নতুন প্রজন্মের বাঙালি তরুণ -তরুণীরা৷ ডেটিং সাইটগুলি ওয়েবকাস্ট , অন লাইন চ্যাট , টেলিফোনিক চ্যাটেরও সুবিধা দিচ্ছে৷ তার বিনিময়ে অনেকে নির্দিষ্ট হারে টাকা নিচ্ছে৷ ফ্রি ডেটিং সাইটেরও অভাব নেই৷ অ্যাপস এবং মোবাইল ডেটিংও ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে৷ কলকাতার এক অনলাইন ডেটিং সাইট সংস্থার কর্ণধার জানাচ্ছেন , যত দিন যাচ্ছে , তাদের নথিভুক্ত গ্রাহকের সংখ্যা বাড়ছে৷ কলেজ ছাত্রী থেকে ডিভোর্সি, এমনকি বিবাহিতরাও রয়েছেন৷ তাদের ছবি , জীবনপঞ্জী , ফোন নম্বরও মিলছে সাইট থেকেই৷ তাদের মধ্যে থেকেই সঙ্গী বাছাই করে নিচ্ছে বাংলার নতুন প্রজন্ম৷ তার পর একদিন হয়তো পরিবারকে অন্ধকারে রেখেই তারা ডেটিংয়ে বেড়িয়ে পড়ছেন৷ যৌন সংসর্গেও সাহসী হয়ে উঠছে তারা৷ সব সম্পর্ক যে দানা বাঁধছে , তেমনটা নয়৷ কেউ মাঝপথে সম্পর্কে ইতি টেনে দিচ্ছেন৷ কেউ আবার শেষ পর্যন্ত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছেন৷ তার উল্টো দিকও রয়েছে৷ ডেটিং সাইট থেকে বন্ধু খুঁজে অনেকেই প্রতারিত হচ্ছেন৷ অচেনা বন্ধুর সঙ্গে ডেটিংয়ে বেরিয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অনেকে৷ তার মধ্যে বেশির ভাগই ছাত্র -ছাত্রী৷ মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, ডেটিংজনিত সমস্যা নিয়ে স্কুল -কলেজের ছাত্র -ছাত্রীরাই বেশি আসছেন৷ তবে এর মধ্যে অন্যায় কিছু দেখছেন না তিনি৷ তার ব্যাখ্যা , “নির্দিষ্ট বয়সে কারও প্রতি রোম্যান্টিক অ্যাট্রাকশন তৈরি হতেই পারে৷ এখন বাচ্চারা অনেক তাড়াতাড়ি মানসিক ভাবে বড় হয়ে ওঠে৷ ছেলে -মেয়ের ইচ্ছা -আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বাবা -মায়েরা নিজেকে মেলাতে পারেন না৷ তার ফলেই সমস্যা দেখা দেয়৷ “ তার পরামর্শ, “ছেলে -মেয়ে বন্ধুর সঙ্গে ডেটিংয়ে যেতে চাইলে তাকে বাধা না দিয়ে সতর্ক করা দরকার এর সম্ভাব্য ক্ষতিকারক দিক থেকে৷ ডেটিংয়ে গিয়ে ছেলেমেয়েরা যাতে তাদের মাত্রা না ছাড়ায় , সেটা বোঝাতে হবে৷ যার সঙ্গে ছেলে -মেয়ে ডেটিং করতে যাচ্ছে তাকেই সে জীবনসঙ্গী বেছে নেবে , এমনটা সবসময় না -ও হতে পারে৷ সে ব্যাপারে বাবা -মাদেরও মানসিক ভাবে তৈরি থাকতে হবে৷ “ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন , ডেটিং সাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বন্ধুত্ব পাতানোর প্রবণতা স্কুল -কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সবথেকে বেশি করে দেখা যাচ্ছে৷ এই বয়সে ছেলেমেয়েরা নিজেদের বেশি করে “এক্সপ্লোর “ করে৷ আবেগ সামলাতে না -পারে তাদের অনেকে অচেনা “বন্ধুর “ সঙ্গে ডেটিং করছেন৷ সেটা করতে গিয়ে অনেকেই নিজেদের বিপদ ডেকে আনছেন৷ তার ব্যাখ্যা , “যাদের ইমপালস কন্ট্রোল এবং পার্সোনালিটি প্রবলেম তথা ব্যক্তিত্বের সমস্যা আছে তারাই বেশি করে অনলাইনে বন্ধুত্ব পাতায়৷ ক্লাস এইট -নাইনের ছেলেমেয়েরাও বাড়ির লোককে কিছু না জানিয়েই বন্ধুর সঙ্গে বাইরে বেড়াতে চলে যাচ্ছে৷ ফলে ছেলেমেয়ে তো বটেই বাবা -মায়ের উপরও “স্ট্রেস “ তৈরি হচ্ছে৷” – See more at: http://www.kalerkantho.com/online/info-tech/2016/07/21/383687#sthash.SMvYtFca.dpuf

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button