
জঙ্গিদের মতো হামলা চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী: রিজভী
ঢাকা, ২৩ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):
বিএনপির কর্মসূচি বানচাল করার জন্য সরকারের পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা রাত থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় দলটির নেতাকর্মীদের বাড়িতে জঙ্গিদের মতো হামলা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘ভোটারবিহীন সরকারের প্রতিহিংসা পূরণে বেকসুর খালাস পাওয়া মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে শনিবার বিএনপি ঘোষিত দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিল কর্মসূচি বানচাল করার জন্য সরকারের পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা রাত থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে জঙ্গিদের মতো হামলা চালাচ্ছে। এ হামলা চালিয়ে বাড়িঘরে লুটতরাজ, ভাঙচুর ও ধরপাকড়ের এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।’
শুক্রবার সকালে অর্থ পাচার মামলায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ২০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ ও প্রতিবাদ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে দলটি।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান, দেশের শান্তি ও স্থিতি রক্ষা করা, জঙ্গিদের সহিংস কর্মকাণ্ড দমন এবং সন্ত্রস্ত জনগণকে নিরাপত্তা বিধান সরকারের মুখ্য লক্ষ্য নয় বলে অভিযোগ করেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘সরকার বিদ্যমান জঙ্গি তৎপরতা টিকিয়ে রেখে অরাজকতার পরাক্রম থেকে দেশবাসীকে নিস্তার দিতে ইচ্ছুক নয়। কারণ, এ পরিস্থিতি একটি অবৈধ সরকারের জন্য পরমপ্রাপ্তি। সরকার দৃঢ়ভাবে মনে করে, এ পরিস্থিতি বজায় থাকলেই অনির্বাচিত এই সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবহমান থাকবে।’
জঙ্গিবাদ টিকে থাকলে বিরোধী দলের ওপর ক্রমাগত দায় চাপিয়ে যেতে পারলে তা সরকারের জন্য লাভজনক বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব। আর এ কারণেই জঙ্গি দমনে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ ছিল না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রিজভী বলেন, সরকারের এই নির্লিপ্ততায় উগ্রবাদীরা আরো বলশালী হয়েছে এবং তাদের শিকড় আরো গভীরে গেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, উগ্রবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী নিয়ে সরকারের রহস্যজনক আচরণে মানুষের মনে তীব্র সন্দেহ এবং প্রশ্ন জন্ম নিয়েছে। সেটিকে ঢেকে দিতেই অর্থ পাচারের মামলায় বিচারিক আদালত কর্তৃক খালাস পাওয়ার পরও তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয়েছে।
রুহুল কবির বলেন, ‘তারেক রহমানকে এই সাজা দেওয়া সরকারের অন্ধহিংসার বহিঃপ্রকাশ।’
তিনি বলেন, ‘গতকাল (শুক্রবার) আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, ‘‘ভারতের সাথে তাদের নাকি আত্মার সম্পর্ক’’। তিনি ঠিকই বলেছেন, কারণ যাদের দেশের মানুষের সাথে কোনো সম্পর্ক নেই তারা তো একটি বিশেষ শক্তির নিকট অনুগ্রহভাজন হয়েই থাকবেন, আত্মাকে বিক্রি করে দিবেন। কারণ দেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে তারা বাংলাদেশের বনাঞ্চল ধ্বংস করতে রামপাল বিদ্যূৎকেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে, অপমানজনকভাবে ট্রানজিটের নামে করিডোর দেওয়া হয়েছে, তিস্তার ন্যায্য পানির হিস্যা পাওয়া যায়নি, অন্যায়ভাবে সমুদ্রসীমা নির্ণয় করতে গিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্ভাগ দখল করা হয়েছে, প্রতিদিন সীমান্তে বিএসএফ’র নির্বিচারে বাংলাদেশী হত্যা অব্যাহত আছে, সীমান্তে একের পর এক কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ অব্যাহত আছে, ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশের ব্যাপারে শুল্ক অশুল্ক বাধা বজায় আছে, অথচ বাংলাদেশের বাজার ভারতীয় পণ্যে সয়লাব। এ সমস্ত বিষয়ে সরকার একটুও টু শব্দ করে না।’
নতজানু শাসকগোষ্ঠীর এ সমস্ত কর্মকাণ্ড ও কথাবার্তায় দেশের মানুষ লজ্জিত ও ক্ষুব্ধ উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘দেশের মানুষকে সহিংস অরাজকতার বাতাবরণে একটি অস্থির অরাজকতার কাল এ সরকার টিকিয়ে রেখেছে। সুতরাং এরা ঐক্যের কথা শুনবে না, দেশে শান্তি ও স্বস্তি আসুক সেটি চাইবে না। সে জন্য মানুষের নাগরিক স্বাধীনতাকে রক্তাক্ত পন্থায় পিষ্ট করে নিজেরা টিকে থাকার আয়োজন করে চলেছে। এদের ভ্রান্তনীতির কারণে রাজনৈতিক সঠিকতা অন্ধকারে দিক হারিয়ে ফেলেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ না ঘটলে জাতি হিসেবে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।’