ফিচার

কথা শোনার জন্য মানুষ ভাড়া

ঢাকা, ২৪ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):

তৃতীয় বিশ্বজুড়ে আজ বর্ধিত জনসংখ্যা সমস্যার আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে মানুষের অর্থ উপার্জনের চাহিদা ও চাহিদার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত জীবনযাপনের ব্যস্ততা। এশিয়ার মধ্যে এই ব্যস্ততায় এগিয়ে জাপানের অধিবাসীরা। দেশটির অধিবাসীরা এতটাই ব্যস্ত যে প্রত্যাহিক জীবনযাপনে পরিবারের মানুষদেরও তাদের পক্ষে সময় দেয়া সম্ভব হয় না। অবশ্য জাপানের এই মানবিক অবস্থাকে অনেক বিশ্লেষকই বহু বছরের জমানো ডিপ্রেসন বা হতাশা বলে আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু যাই হোক, জাপানে প্রবীণদের সংখ্যা দিন দিন যেন বেড়েই চলেছে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশই তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে।

ব্যস্ততম জাপানে প্রবৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাওয়ার এই অসম প্রতিযোগিতায় যখন সবাই ব্যস্ত, তখন পিছিয়ে পড়ছেন দেশটির প্রবীণরা। পরিবারের প্রবীণ ব্যক্তিটিকে যেন কারও একটু সময় দেবারও অবসর নেই। সকলেই উল্কার মতো ছুটছে এদিক থেকে ওদিক। ওই বৃদ্ধদের মনের অব্যক্ত কথাটুকু শোনারও কোনো মানুষ না থাকায়, শব্দেরা বৃদ্ধদের অন্তরে বার্ধক্যের বোঝা হয়েই রয়ে যায়। তবে জাপানেরই কিছু তরুণ দেশটির বৃদ্ধদের সেবার জন্য ভিন্নধর্মী এক পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে এসেছে। তারা নির্দিষ্ট পরিমান অর্থের বিনিময়ে প্রবীণদের সকল কথা মনোযগ দিয়ে শুনবে এবং একই সঙ্গে হবে তাদের একাকীত্বের সঙ্গী।

যদি কারো একাকীত্বের সঙ্গী দরকার হয় তাহলে ‘ওসান’ নামের একটি অনলাইনে সাইন ইন করে বেছে নিতে পারবে পছন্দের সঙ্গী। তবে এই ক্ষেত্রে রয়েছে একটু সীমাবদ্ধতা ব্যক্তিকে হতে হবে ৪৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। আর এর জন্য একঘণ্টায় তকে প্রদান করতে হবে এক হাজার ইয়ান বা দশ ডলার। ওসানের কর্ণধার নিশিমতো। তার ভাষ্যমতে, ‘আমার জন্য প্রবীণদের কথা শোনা পেশা নয় এটা আমার শখ। চার বছর আগে আমরা এই পরিসেবা চালু করি। তখন পুরো জাপান জুড়ে ৬০ জন মানুষ তাদের এই সেবা নিতে আসতো। এই পরিকল্পনাটি হঠাৎ করে আমি ও আমার বয়সী কয়েকজন বন্ধুর মাথায় আসে। এরপর থেকেই আমরা কাজ করতে শুরু করি।’ তবে যারা এখানে সেবা নিতে আসে তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নারী।

একবার এর ব্যাতিক্রম ছিল ৮০ বছর বয়সী একজন বৃদ্ধ। তিনি একজন তরুণকে ভাড়া করে যার কাজ ছিল প্রতি সপ্তাহে এক থেকে দুঘণ্টা তাকে কোন একটি পার্কে নিয়ে বই পড়ে শোনানো। এই কাজ করতে করতে লোকটি ওই তরুণকে ছেলের মতো ভাবতে শুরু করলো। পরে তার মৃত্যু হয়। আর একজন ছিল যিনি মৎস্য ব্যবসায়ী। যিনি অসুস্থ হয়ে পরলে তার ব্যবসা দেখার মতো কেউ ছিল না। তিনি একজন কলেজ ছাত্রকে ভাড়া করে যে কিনা তার অবর্তমানে তার ব্যবসা দেখাশোনা করতো।

জাপানে একটি বড় সমস্যা হচ্ছে দেশটির তরুণরা সাবলম্বী হলে সমাজ ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একা থাকার অভ্যাস করে। জাপানের এই সমস্যাকে জাপানি ভাষায় ‘হিকিকোমরি’ বলে। এই বয়সে তরুণরা সাধারণ নিজেকে ভিডিও গেমস ও এটি রুমের মধ্যে নিজেকে ব্যাস্ত রাখতে বেশি পছন্দ করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওই একটি কক্ষই তাদের পুরো পৃথিবী হয়ে পরে। বাবা-মাকে সময় দেয়া যেন তাদের মূল্যবোধের বাইরে। কিন্তু নিশিমিতোর কাছে যারা আসে তারা কেউ আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল নয় তাদের সবকিছুই আছে কেবল নেই মনের কথা ব্যাক্ত করার সঙ্গী কিংবা বন্ধু। নিশিমতোর মতে, ‘আজ যারা বাবাকে সময় দিচ্ছে না তারা ভুলেই যাচ্ছে যে তারাও একটা সময় এই পর্যায় আসবে। এই সেবাটি শুধু মাত্র আমরা অর্থ উপার্জনের জন্য করছি তা কিন্তু নয় জাপানের বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলোকে এক করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button