
আগুন নিয়ে খেলছেন সৌদি যুবরাজ
ঢাকা, ২৫ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):
গত বছরের শেষের দিককার কথা। জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি সৌদি আরবের পররাষ্ট্রনীতি প্রশ্নে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। সেই রিপোর্টে বলা হয়, সৌদিআরব সাম্প্রতিক সময়ে অসন্তোষজনক হস্তক্ষেপের নীতি গ্রহন করেছে। ওই রিপোর্টে সৌদি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং ডেপুটি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য প্রকাশ করা হয়। ২৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ বিন সালমান বাদশা সালমানের প্রিয় পুত্রদের মধ্যে অন্যতম। ক্ষমতায় বসেই ইয়েমেন এবং সিরিয়াতে অসন্তোষের রাজনীতির মাধ্যমে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরির জন্যও তাকে দায়ি করে গোয়েন্দা সংস্থাটি।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলো স্বাভাবিক ভাবেই চাইবে না রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এমন বিস্ফোরক সমতুল্য তথ্য পত্রিকার হাতে দিতে। কারণ সৌদিআরবের মতো নিকটবর্তী মিত্রকে স্রেফ সমালোচনা করে হারাতে চাইবে না কোনো পক্ষই। কিন্তু তারপরেও বিএনডি’র এমন রিপোর্টে সন্তুষ্ট হতে পারেনি সৌদিআরব। সৌদি কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর প্রতিবাদ করে। যদিও দুই দেশের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা হয়ে গেলেও, জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা আবারও সতর্ক করে দেয় যে, সৌদিআরব যেকোনো মুহূর্তে অনির্দেশ্য ওয়াইল্ড কার্ডে পরিনত হতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের এক সাবেক মন্ত্রী নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অতীতে সাধারণত সৌদিরা আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত রাখতো এবং যখন কেউ কোনো সরকারকে উৎখাত করতে চাইতো তখন সৌদিরা সেটা পছন্দ করতো না।’
বিএনডি’র ওই রিপোর্ট জার্মানিতে যে কোনো প্রভাব বিস্তার করেনি তা কিন্তু বলা যাবে না। কারণ গত ১৩ নভেম্বর প্যারিসের রক্তক্ষয়ী হামলার পর ২ ডিসেম্বর তারিখে ওই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়, যখন গোটা বিশ্বের সরকার প্রধানেরা এবং মিডিয়া ইসলামিক স্টেটের ভয়ে ভীত এবং কিভাবে এই হুমকি মোকাবেলা করা যায় তা নিয়ে ভাবিত ছিল। ব্রিটেনের রাজকীয় বিমান বাহিনী ইসলামিক স্টেটের উপর বিমান হামলা চালাবে কি চালাবে না এবিষয়ক বিতর্ক চলার মাঝেই ক্যালিফোর্নিয়াতে ইসলামিক স্টেট অনুসারী এক দম্পতি রক্তাক্ত ঘটনার অবতারনা ঘটায়। সার্বিক ঘটনা বিচারে জার্মান গোয়েন্দা সংস্থার ওই রিপোর্ট জার্মান রাজনীতিতেও এক গভীর ছাপ পড়েছিল, যার পরিনতি আমরা বর্তমানে জার্মান রাজনীতিতে ডানপন্থীদের আস্ফালন দেখেই বুঝতে পারি।
গত জানুয়ারিতে সাবেক বাদশা আবদুল্লাহ মারা গেলে ক্ষমতায় বসেন বাদশাহ ফয়সাল। আলঝেইমার রোগে আক্রান্ত বাদশা ক্ষমতায় বসেই যুবরাজ হিসেবে নিযুক্ত করেন মোহাম্মদ বিন ফয়সালকে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় বসার পর থেকে সুন্নী শিয়া দ্বন্দ্বকে উস্কে দিতে নিজের আভ্যন্তরীন সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পিছপা হননি তিনি। শিয়া মতাবলম্বী শেখ নিমর আল নিমরসহ বহু শিয়া-সুন্নী মুসলিমকে শিরশ্চেদের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশ ইরানকে লড়াইয়ে টেনে আনার চেষ্টা করা হয় বারবার। কিন্তু ইরান এই উস্কানিতে সাড়া না দিলেও সিরিয়া ও ইরাকে যুদ্ধরত কুর্দি ও শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপগুলোকে অর্থায়ন ও অস্ত্র সহায়তা দিয়ে কৌশলগত অবস্থানে আছে ইরান।
ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদিআরবই সর্বপ্রথম সামরিক হামলা চালানো শুরু করে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিমান হামলা শুরু করলেও, পরবর্তীতে পদাতিক বাহিনী পাঠানোর প্রক্রিয়াও চালু করেছিল সৌদিআরব। কিন্তু নিজ সেনাবাহিনীর মধ্যে ইয়েমেনি বংশোদ্ভুত সৈন্যই সর্বাধিক হওয়ায় মোহাম্মদ বিন ফয়সালের পক্ষে সেই ঝুঁকি নেয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু একদিকে অসফল হলেও অন্যদিকে আলকায়েদা সমর্থিত কিছু সন্ত্রাসী গোষ্ঠিকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়ে গোটা আরব বিশ্বে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করে রেখেছে সৌদিআরব। জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা বিএনডি’র রিপোর্টের বক্তব্য যেন মিলে যাচ্ছিল ঘটনার পরম্পরার সঙ্গে।