জাতীয়

বাংলাদেশে বসবাস করা বিদেশিরা আতঙ্কে আছেন

ঢাকা, ৩০ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):

গুলশানে জঙ্গি হামলায় একসঙ্গে ১৭ জন বিদেশি নিহত হওয়ার পর বাংলাদেশে বসবাসরত বিদেশিদের মধ্যে আতঙ্ক কমছে না। ঢাকার জার্মান দূতাবাসে কর্মরত দুই জার্মান নাগরিক আর বাংলাদেশে ফিরবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।

ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. টোমাস প্রিনৎস বাংলাদেশের একটি টেলিভিশনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পহেলা জুলাইয়ের ঘটনার পর বিদেশিদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ‘আমার অন্তত দুই জন সহকর্মী গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে যাওয়ার পর আর ফিরবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। সব মিলিয়ে কতজন সহকর্মী আর ফিরবেন না সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ এখনও গ্রীষ্মকালীন ছুটি চলছে। ছুটি শেষ হলেই জানা যাবে কতজন আসছেন না। যাঁদের শিশু সন্তান রয়েছে তাঁদের মধ্যে আতঙ্কটা আরো বেশি।’

পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত

হলি আর্টিজান বেকারিতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল নীপিন গঙ্গাধরের। বিদেশি এক বেসরকারি সংস্থার শীর্ষ পদে আছেন এই ভারতীয়। গুলশানে হামলার পর তাঁর বন্ধুমহলের অনেকেই এখন ঢাকায় নেই। কয়েকদিন আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘হামলার কথা জেনে প্রথমে স্তম্ভিত হয়েছি। ওটা একটা নিরাপদ জায়গা ছিল। আমরা প্রায়ই সেখানে যেতাম। ওখানকার রুটি আমার বাসার নিয়মিত খাবার ছিল। ওই হামলা বিদেশিদের শঙ্কিত করে তুলেছে। কারণ অনেকে ওই হামলার গোলাগুলির শব্দ নিজ কানে শুনেছে, কোনো পত্রিকা পড়ে বা টিভিতে দেখে নয়।’

নীপিন গঙ্গাধর আরো জানান, সবাই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তবে তাঁর বিদেশি বন্ধুরা আরো কিছুটা সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান। মূলত নিজেদের এবং তাঁদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠা কাজ করছে বলে জানান তিনি।

সতর্ক হয়ে চলাফেরা

বাংলাদেশে একটি ভারতীয় এয়ারলাইন্সের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন শ্রীলংকান নাগরিক জে এফ মার্জিয়া। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘এটা একটা সুন্দর দেশ। ২৫ বছর আগে এই দেশে এসে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। এখনো ভালো লাগে। তবে সাম্প্রতিককালের ঘটনা খানিকটা উদ্বিগ্ন করেছে। এখন সতর্কভাবে চলাফেরা করি।’

বাড়তি নিরাপত্তা

গুলশানে সন্ত্রাসী হামলার পর কূটনৈতিক এলাকার বিদেশি নাগরিকদের বাড়তি নিরাপত্তা দিচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। দূতাবাসগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। নিরাপত্তার স্বার্থে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে বিদেশিদের চলাফেরায়। তবে জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ‘গুলশান এত জনবহুল যে এখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিচ্ছিদ্র করা সম্ভব নয়। কারণ অনেক মানুষ এখানে প্রতিদিন বাইরে থেকে আসেন।’

তৈরি পোশাক খাত নিয়ে শঙ্কা

পরপর দুটি বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা বিপাকে ফেলেছে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি আয়ের উৎস তৈরি পোশাক খাতকে। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ওই ঘটনার পর ক্রেতারা বাংলাদেশে আসতে চাইছেন না। পোশাক খাতে কমর্রত বেশ কিছু বিদেশি নাগরিক নিজ দেশে ফিরে গেছেন। নিরাপত্তাহীনতার কারণে অনেক ক্রেতা সাময়িকভাবে আসতে চাইছেন না। অনেকে তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে বৈঠক করতেও অনুরোধ করছেন।

এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, বাংলাদেশ থেকে কোনো ক্রয়-আদেশ এখনো বাতিল হয়নি। কোনো বিদেশি কোম্পানির ব্যবসা গুটিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তও জানা যায়নি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে কার্যাদেশ (অর্ডার) কমে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তিনি বলেন, ‘আশঙ্কা করছি যারা বেশি অর্ডার দিত তারা কমিয়ে দিতে পারে। গ্রীষ্মকালীন ক্রয়াদেশের জন্য আমাদের জুলাই থেকে নেগোসিয়েশন শুরু হয়। আল্লাহ না করুক এই পরিস্থিতি যদি চলতে থাকে আশঙ্কা তখন অ্যাবসলিউট হয়ে যাবে।’

ওই ব্যবসায়ী বলেন, ‘অনেক গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের বদলে দিল্লি, ব্যাংকক ও হংকংয়ে সভা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া নিজ দেশের নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ।’

তবে ২৮টি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের জোট ‘আল্যায়েন্স’ বাংলাদেশ থেকে পোশাক ক্রয় অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছে। অন্যদিকে ইউরোপীয় ক্রেতাদের জোট ‘অ্যাকর্ড’ বাংলাদেশে কর্মরত ইউরোপীয় কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। ডয়চে ভেলে

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button