
বন্যায় চার লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত, মৃত্যু ১৪ জনের
ঢাকা, ৩০ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):
চলমান বন্যায় দেশের ১৬ জেলার ৫৯টি উপজেলায় প্রায় চার লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। আর মারা গেছেন ১৪ জন। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছয় শতাধিক।
শনিবার (৩০ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর মহাখালী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
বন্যার সর্বশেষ অবস্থা জানাতে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানান, মোট ১৬ জেলার ৫৯টি উপজেলার ৩০৯টি ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত বন্যা কবলিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সংখ্যা তিন লাখ ৯৩ হাজার ৪৯৬টি। আর মানুষের সংখ্যা ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৬১৫ জন।
এতে সম্পূর্ণ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯ হাজার ৩১৪টি ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১২ হাজার ৩৭১টি। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মধ্য সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২২টি এবং আংশিক ক্ষতিগ্রন্ত হয়েছে ৫৮৮টি।
সারাদেশে এ পর্যন্ত বন্যা কবলিত হয়ে ১৪ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে রংপুরে একজন, কুড়িগ্রামে দু’জন, গাইবান্ধায় চারজন ও জামালপুরে সাতজন মারা গেছেন। তবে উত্তরাঞ্চলে বন্যা কমতে শুরু করলে দক্ষিণাঞ্চলে পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
মোফাজ্জল হোসেন মায়া বলেন, বন্যা কবলিত জনগণের জন্য সহায়তা কার্যক্রম ও আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। এখন পর্যন্ত ৬৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রিত লোকসংখ্যা সাত হাজার ৩৭৫ জন। এ ছাড়া বন্যা কবলিত এলাকায় মোট ৩৪৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। আট হাজার প্যাকেট ও পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্লাবিত জেলাগুলোতে পাঠানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মলনে জানানো হয়, এ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে ১৩ হাজার টন জিআর চাল ছাড় করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ে থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে নয় হাজার ১০০ টন। আর ছাড়ের জন্য অধিদফতরে চাল মজুদ আছে ৩ হাজার ৯০০ টন।
মন্ত্রণালয় থেকে জিআর ক্যাশ হিসেবে ছাড় করা হয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। জেলা পর্যায়ে থোক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তিন কোটি সাড়ে সাত লাখ টাকা। আর অধিদফতরে বর্তমানে অবশিষ্ট আছে ২ কোটি সাড়ে ৪২ লাখ টাকা।
দেশের বেশ কয়েকটি নদীর স্রোত বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকে। এসব নদীর মধ্যে রয়েছে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমার, পদ্মা, ঘাঘট, করতোয়া ও সুরমা। নদীগুলোর মোট ১৯টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ত্রাণের অভাব নেই বলেও জানান মন্ত্রী।
তবে উত্তরাঞ্চলের পানি দক্ষিণে নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, লক্ষীপুর ও বরিশালসহ নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা কথা জানান ত্রাণমন্ত্রী। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় এসব এলাকার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
বন্যা প্লাবিত এলাকার মানুষদের দুর্দশা লাঘবে সরকারের পাশাপশি দল-মত নির্বিশেষে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শাহ কামাল এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ।