
এক সপ্তাহে বন্যায় শিশুসহ ২২ জনের মৃত্যু
ঢাকা, ৩১ জুলাই, (ডেইলি টাইমস ২৪):
বন্যায় দেশের বিভিন্ন জেলায় হাজারো ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে। গত এক সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে পাঁচ জেলায় কমপক্ষে ২২ শিশু ও বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে ৭ জন করে, সিরাজগঞ্জে ৪ জন, লালমনিরহাটে ৩ জন ও গাইবান্ধায় ১ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার ও রোগনিয়ন্ত্রণ কক্ষের ইনচার্জ ডা. আয়েশা আখতার আজ (রোববার) সকালে জানান, বন্যায় আশ্রয়স্থল ডুবে যাওয়ায় পানিতে ডুবে শিশু ও বৃদ্ধের মৃত্যুঝুঁকি বাড়ছে।
তিনি জানান, শনিবার পর্যন্ত পাঁচ জেলায় ২২ শিশু ও বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া বন্যাকবলিত জেলাগুলোতে কমপক্ষে দেড় সহস্রাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু পানিবাহিতসহ বিভিন্ন রোগব্যাধি যেমন ডায়রিয়া, তীব্র শ্বাসকষ্ট, সাপেকাটা, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহে আক্রান্ত হয়েছেন।
আক্রান্তদের মধ্যে ডায়রিয়ায় ২৫০ জন, তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত ১০২ জন, চর্ম ৮১ জন, চোখের প্রদাহে ৭৮ জন, সাপেকাটা ৪ জন, বিভিন্ন ধরনের আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ৭৭ জন ও অন্যান্য রোগে ১৩৩ জনসহ মোট ১ হাজার ৪শ’৬৫ জন আক্রান্ত হন। রোগব্যাধি দেখা দিলেও এসব জেলায় পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে বলে দাবি করেন ডা. আয়েশা।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি সমতলের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে নদী সংলগ্ন রাজবাড়ি, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও শরীয়তপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি অব্যাহত থাকতে পারে। ঢাকার আশেপাশের বুড়িগঙ্গা, বালু ও শীতলক্ষা প্রভৃতি নদীর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে সূত্র জানায়।
এদিকে জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য থেকে জানা যায়, দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের রৌমারী-রাজীবপুর উপজেলার কিছু এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও পাহাড়ি ঢলে সীমান্ত এলাকায় অবনতি হয়েছে। শনিবার সীমান্ত এলাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বন্যায় সীমান্তের পাঁচটি বিজিবি ক্যাম্পের চারপাশে পানি উঠেছে। এর মধ্যে গয়টাপাড়া ও মোলারচর বিজিবি ক্যাম্পের ভেতরে পানি ঢুকে পড়েছে বলে জানা গেছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের চিলমারী পয়েন্টে তিন সেন্টিমিটার পানি কমে বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়াসহ সবগুলো নদীর পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করেছে। তবে ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি এখনো বিপদসীমার অনেক উপরে থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যাকবলিত সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ লাখ লোক এখন পানিবন্দি।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বন্যা কবলিত ৪টি উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নের ২৩৪টি গ্রামের দুর্গত মানুষদের আশ্রয়ের জন্য ৯৩টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ওইসব আশ্রয়কেন্দ্রে ইতোমধ্যে ১১ হাজার ৪১ জন লোকসহ গবাদি প্রাণি আশ্রয় নিয়েছে।
যমুনা নদীর পানি কিছুটা কমলেও জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৪ সেন্টিমিটার কমলেও এখনও বিপদসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নতুন করে জামালপুরের সাত উপজেলার ৫০টি ইউনিয়নের তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
বন্যার পানিতে রেললাইন ডুবে যাওয়ায় জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও সরিষাবাড়ির ফুলবাড়িয়া এলাকায় বন্যায় রাস্তা ভেঙে জামালপুর-সরিষাবাড়ি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি চার সেন্টিমিটার কমলেও এখনও বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি কম বাড়লেও সিরাজগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। শনিবার পর্যন্তও যমুনার পানি ৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। অব্যাহতভাবে পানি বৃদ্ধির কারণে জেলার পাঁচ উপজেলার চরাঞ্চলের ৩৩টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
রাজবাড়ির দৌলতদিয়ার নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে চারটি ফেরিঘাটের (২ নং ও ৪ নং) দুটি ঘাট বন্ধ রয়েছে। এমনকি এ নৌরুটের ১৮টি ফেরির মধ্যে পাঁচটি বিকল ও স্রোতের প্রতিকূলে চলতে গিয়ে পারাপারে সময় বেশি নিচ্ছে। ফেরি ও ঘাটের সংকট দেখা দেয়ায় গতকাল শনিবার দৌলতদিয়া জিরোপয়েন্ট থেকে গোয়ালন্দ ফিডমিল এলাকা পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।