
শেষ অতিকায় হাতির মৃত্যুরহস্য ভেদ
ঢাকা, ০২ আগস্ট, (ডেইলি টাইমস ২৪):
একটা সময়ের কথা। যখন শিশুদের পাঠ্যপুস্তকে অতিকায় হাতি বা ম্যামথের কথা লিখা থাকতো। শিশু থেকে শুরু করে বুড়োরা পর্যন্ত নিশ্চিত ছিলেন না, পৃতিবীতে সত্যিই কি ইয়া বিশাল হাতি ছিল! বিজ্ঞান এবং অবাধ তথ্য ভান্ডারের কারণে আজ অবশ্য আর কারও স্বীকার করতে বাধা নেই যে, একটা সময় পৃথিবীর উপরিতল দাবড়ে বেড়াতো বিশালাকার সব হাতি। কিন্তু তাদের অস্তিত্ব না হয় স্বীকার করা গেল, কিন্তু তারা কিভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেল সেনিয়ে আছে অনেক মতপার্থক্য। কিন্তু যাই হোক, এটা সকলেই স্বীকার করেন যে, বিশালাকার ওই ম্যামথরা দেখতে বিশাল হলেও আদতে ছিল খুবই শান্তশিষ্ট।
সম্প্রতি একদল পরিবেশ ও জীব বিজ্ঞানী গবেষণা করে দেখেছেন যে, আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছরে আগে পৃথিবী থেকে সর্বশেষ ম্যামথ যুথ পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর তাদের ওই বিলুপ্তির একমাত্র কারণে ছিল পানি শূন্যতা। বরফ যুগের সেই সময়ে বর্তমান আলাস্কার নিকটবর্তী স্থানটি ছিল প্রায় শুষ্ক ও পানিহীন। বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, উষ্ণ আবহাওয়া এবং পানি না থাকায় হাতি যুথ টিকে থাকতে পারেনি। তাদের মধ্যে কিছু হাতি অন্যত্র যাবার চেষ্টা করলেও তা সম্ভবপর হয়নি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, পৃথিবী থেকে আজ থেকে প্রায় দশ হাজার পাঁচশ বছর আগেই ম্যামথ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল।
এছাড়াও তৎকালীন সময়কার মানুষের শিকার প্রবনতা এবং জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণেও ম্যামথরা বিলুপ্ত হতে পারে বলে বিশ্বাস করেন অনেক গবেষক। কিন্তু আলাস্কার সেন্ট পল আইল্যান্ডে একটি যুথ রয়ে গিয়েছিল তখন পর্যন্ত জীবিত। কোনো মতে তারা আরও পাঁচ হাজার বছর টিকে গিয়েছিল। হয়তো পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি এবং জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে শিখেছিল ম্যামথরা। কিন্তু ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়ান্সের পক্ষ থেকে ওই ম্যামথদের ব্যাপারে বলা হয় যে, অন্যান্য অতিকায় হাতির তুলনায় এরা ভিন্নভাবে বাঁচতে শিখেছিল। আর এজন্যই হয়তো তারা বরফ যুগ চূড়ান্তভাবে শেষ হওয়া পর্যন্ত টিকে ছিল।
অর্থাৎ বিজ্ঞানীদের ভাষ্যমতে, বরফ যুগ শেষ হয়ে যাবার সময় ম্যামথদের বসবাসের জায়গা ধ্বংস হয়ে যায়। বিশেষ করে লেকের পানিতে নোনা পানি প্রবেশ করতে শুরু করলে মিঠা পানির উৎস নষ্ট হয়ে যায় এবং হাতিদের বাস্তসংস্থান প্রক্রিয়ায় ব্যাপক প্রভাব পরে। এর ফলে অতিকায় হাতিরা মিঠা পানির সর্বশেষ উৎসগুলোও খালি করে ফেলেছিল। আর যার ফলে শেষমেষ পানি শূণ্যতায় মৃত্যুর দিকে ধাবিত হতে হয় তাদের। এবিষয়ে পেনসিলভানিয়া স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাসেল গ্রাহাম বলেন, ‘লেকগুলো শুকিয়ে যেতেই প্রাণীরা পানির ছোটো ছোটো গর্তগুলোর দিকে আগাতে থাকে। চর্তুপাশ ঘিরে তারা বাস করতে শুরু করে এবং মাংসাসী প্রাণীটিও বাধ্য হয়ে তৃণভোজী হয়ে ওঠে। আজকের যে তৃণভোজী হাতি আমরা দেখতে পাচ্ছি, তারাও কিন্তু একই পরিবর্তনের শিকার।’