
নজর কাড়ছে মুখলেসের ৫৯ পদের চা
ঢাকা, ০৩ আগস্ট, (ডেইলি টাইমস ২৪):
বর্তমানে শহরের অট্টালিকা থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষের ঘরে সবখানেই চায়ের ঘ্রাণ। জনশ্রুতি রয়েছে, একটা সময় ব্রিটিশরা বিনামূল্যে এদেশের মানুষকে চা পান করাতেন এবং বাড়িতে গিয়ে চা পান করার জন্য তা বিনামূল্যে উপহার দিতেন। যদিও এদেশে ব্রিটিশদের হাত ধরে বাঙালি চা পান করতে শিখেছে।
বাস্তবিক অর্থে চা এর উৎপত্তি চীন দেশে। ১৬৫০ খ্রিষ্টাব্দে বাণিজ্যিকভাবে চীনে চায়ের চাষ শুরু হয়। আর ১৮৫৫ সালে ব্রিটিশরা সিলেটে এই চায়ের গাছ খুঁজে পায়। ১৮৫৭ সালে সিলেটের মালনীছড়ায় শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে চায়ের চাষ।
সিলেট শুধু চা উৎপাদনের জন্যই বিখ্যাত নয়, চা তৈরিতে আছে তাদের ব্যতিক্রমধর্মী ভাবনা। সিলেটের শ্রীমঙ্গলের রমেশ রাম গৌড়ের সাত রঙের চায়ের কথা শুনেছেন অনেকে, হয়ত বা খেয়েছেনও নিশ্চয়ই। এই চাষের বিশেষেত্ব হচ্ছে এক কাপ চায়ের রং ৭টি।
চা নিয়ে এমন ভাবনা রয়েছে আরো অনেকের মনে। তেমনি এক ব্যতিক্রমধর্মী চা তৈরির কথা মাথায় নিয়ে নেত্রকোনার মুখলেস উদ্দিনও চা বানান। সাদামাটা লাল চা, দুধ চা, গ্রিন টি এসবের বাইরে গিয়ে মজার মজার চা বানানোর তরিকা বের করেছেন মুখলেস। ফুল, ফল, মসলা ও গাছগাছড়া দিয়ে ৫৯ পদের চা বানাতে পারেন তিনি।
নেত্রকোনা শহরের মুক্তারপাড়ায় পুরাতন ফৌজদারির উল্টো পাশে ফুটপাতের ওপর মুখলেসের চায়ের দোকান। দোকানে সাদা কাগজে চায়ের তালিকা দেওয়া রয়েছে। যেমন- মরিচ চা, বেল চা, কমলা চা, মাল্টা চা, জাফরান চা, লবণ চা, জবা ফুলের চা, পাটপাতার চা, শিউলি পাতার চা, বাসকপাতার চাসহ ৫৯ পদের চা পাওয়া যায় তার দোকানে। ৫ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে এসব চা বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে ১০ টাকার চা বেশি বিক্রি করেন বলে জানিয়েছেন দোকানি।
চায়ের মূল্য তালিকার মধ্যে ‘মামা স্পেশাল মধু চা’ বিক্রি হয় ১০০ টাকা দামে । কী আছে এই স্পেশাল চায়ে এমন প্রশ্নের জবাবে দোকান মালিক মুখলেস উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, মধু তো আছেই। সঙ্গে ৫০ থেকে ৬০ রকমের মসলাও দেয়া হয় ওই চায়ে। স্পেশাল এই চা বানাতে চার-পাঁচ মিনিট সময় লাগে। এমনি দামি চা আরও আছে। যেমন অশ্বগন্ধা মধু চা। এই চায়ের দাম ৮০ টাকা। তবে এতো সব চায়ের চেয়ে বেশি চলে ৫ টাকা দামের কাঁচা মরিচের চা।
এক সময় সাধারণ চা বিক্রি করতেন মুখলেছ। বছর দুই-তিন ধরে নানা পদের চা বানানোর ফর্মুলা বের করেন। আয়-রোজগার ভালোই। দিনে ৫০০ কাপের মতো চা বিক্রি করেন। এক ছেলে, এক মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে ছোট্ট সংসারটা ভালোই চলছে তার। ৫৯ রকম চায়ের নাম ও দামের তালিকা, চা বানানোর বিভিন্ন ধরনের উপাদানের নাম টানানো রয়েছে তার দোকানে। দোকানে টাঙানো চায়ের এই তালিকা অনুযায়ী যে কোন চা চাইলে বানিয়ে দিতে পারবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাত্র ৫ মিনিট অপেক্ষা করলেই দেয়া সম্ভব।
এতো সব চায়ের নিয়ম কানুন কিভাবে শিখলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিজে নিজেই ভেবেচিন্তে বের করেছি। বই পড়ার অভ্যাস আছে, পত্র পত্রিকা পড়ি। গাছগাছড়া নিয়ে কোনো লেখা দেখলেই পড়ি। তা থেকেই হয়ত অনেকটা সহযোগিতা হয়েছে।
নানা রকম মসলাপাতি ছড়ানো রয়েছে টেবিলের ওপর। তার পাশেই একগাদা মগ। চুলায় চারটি কেটলি। দোকানে সহযোগিতার জন্য লোক রাখেন না কেন জানতে চাইলে তিনি জানান, কাউকে রাখলেই বিপদ। সব রসদ ঠিকমতো না দিলে চা তো হবেই না, উল্টো বিষ হয়ে যাবে। মূলত এই ভয়েই কাউকে রাখি না।
মুখলেসের এই ৫৯ পদের চা সবার নজর কাড়ছে বলে জানান এলাকাবাসী।