
লিভারের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার
ঢাকা, ০৩ আগস্ট, (ডেইলি টাইমস ২৪):
লিভার আমাদের শরীরের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঙ্গ যা দেহের বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। খাদ্যদ্রব্য পরিপাকের জন্য পিত্তরস তৈরি করা, অন্ত্র থেকে শোষিত খাদ্য উপাদানগুলো গ্রহণ ও শক্তি উৎপাদন করা লিভারের প্রধান কাজ। এ ছাড়া আমাদের শরীরের ক্ষতিকর উপাদানকে নির্জীব বা শরীর থেকে বের করে দেয়া লিভারের কাজ।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও লিভার
স্বাস্থ্যকর খাদ্য লিভারকে ভালোভাবে কাজ করতে এবং ভালো থাকতে সাহায্য করে থাকে। অস্বাস্থ্যকর খাবার লিভারের রোগ ঘটাতে পারে যেমন- যদি কেউ বেশি পরিমাণে তৈলাক্ত খাদ্য গ্রহণ করে তাহলে তার অতিরিক্ত ওজন এবং নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটিলিভার হতে পারে।
যাদের লিভারের রোগ আছে তাদেরও একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হবে। কারণ স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভাসের মাধ্যমেই আক্রান্ত লিভার ঠিকমতো কাজ করতে পারবে এবং যে ক্ষত হয়েছে তা ঠিক করতে পারে। লিভারের স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস হল-
* সব ধরনের খাদ্য গ্রহণ যেমন- কার্বহাইড্রেট, প্রোটিন, দুধজাতীয় খাদ্য, ফল, শাকসবজি এবং তেল।
* বেশি করে আঁশজাতীয় খাদ্য যেমন- তাজা ফল ও সবজি, লাল চা, আটা ইত্যাদি।
* ধূমপান ও অ্যালকোহলজাতীয় পানীয় অবশ্যই বর্জন করতে হবে।
লিভার সুরক্ষায় ১২ খাবার
১. বাদাম, ২. ওটস, ৩. সয়াবিন, ৪. চা (গ্রিন টি),
৫. দই (ননিমুক্ত দুধের তৈরি), ৬. ব্রোকলি, ৭. ডাল,
৮. পালং শাক, ৯. মিষ্টি কুমড়া, ১০. স্যালমোন মাছ,
১১. সবজির স্যুপ. ১২. ফলের রস।
লিভারের রোগ ও খাদ্য
যাদের লিভারের রোগ আছে তাদের অবশ্যই পরিমিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে শরীরের ওজন ঠিক করতে হবে। এ ছাড়া অতিরিক্ত চিনি ও লবণযুক্ত খাবার এবং অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার কম খেতে হবে।
সাধারণভাবে লিভারের রোগ বলতে আমরা জন্ডিসকে বুঝে থাকি। জন্ডিস হল বিভিন্ন ধরনের লিভারের রোগের লক্ষণ যেমন-
* হেপাটাইটিস
* সিরোসিস
লিভারের অন্যান্য রোগ হল
* ফ্যাটি লিভার
* হেপাটিক এনসেফালোপ্যাথি
হেপাটাইটিস
প্রধানত ভাইরাস হেপাটিইটিস পাঁচ ধরনের- হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি এবং ই। যে ধরনের হেপাটাইটিসই হোক না কেন, রোগীদের পূর্ণ বিশ্রাম নিতে হবে। এ ছাড়া এসব খাদ্যে উন্নত মান প্রোটিন যেমন- মুরগির মাংস, ডিমের সাদা অংশ, মাছ ইত্যাদি রোগীর খাবারে যুক্ত করতে হবে। সহজ পাচ্য শর্করা যেমন- চিনি, মধু, চাল, আটা ইত্যাদি দিতে হবে। ক্যালরি সরবরাহের জন্য তেলসমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে তবে অবশ্যই সেই তেল হবে। যেমন- সয়াবিন তেল। শরীরের ভিটামিন ও মিনারেল প্রয়োজন মেটানোর জন্য লাউ, পেঁপে, কুমড়া, গাজর, টমেটো, পালং শাক ইত্যাদি দেয়া যেতে পারে। আম, কমলা, পাকা পেঁপে, ইত্যাদি কম আঁশযুক্ত ও সহজে হজম হয় বলে হেপাটাইটিস রোগীদের দেয়া হয়।
সিরোসিস
দীর্ঘমেয়াদি হেপাটাইটিস এ বি ও সি এবং অ্যালকোহলের কারণে সিরোসিস হয়ে যায়। হেপাটাইটিস রোগের মতো এ রোগেও উচ্চমানের প্রোটিন দিতে হয়। এ ছাড়া শর্করা ও তেল দিতে হবে। তবে বেশি আঁশযুক্ত খাবার শরীরের জন্য ভালো হলেও সিরোসিসের রোগীদের জন্য কাঁচা কলা, লাল চাল ও আটা, বেশি আঁশযুক্ত শাকসবজি খাওয়া উচিত নয়। সিরোসিস রোগীর খাদ্যে অবশ্যই লবণ ও চিনি কম পরিমাণে থাকতে হবে।
রোগ পথ্য
পিত্তনালির রোগ
পিত্ত এক ধরনের তরল যা লিভারে তৈরি হয় এবং চর্বিজাতীয় খাদ্যকে হজম করতে সাহায্য করে।
* তৈলাক্ত খাবার কম খেতে হবে।
* সয়াবিন, সানফ্লাওয়ার ইত্যাদি তেল হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।
ফ্যাটি লিভার
লিভার বা যকৃতের কোষগুলোয় অতিরিক্ত চর্বি জমার কারণেই এ রোগটি হয়ে থাকে।
ফ্যাটি লিভার দুই রকম- আলকোহলিক (মদ্যপানজনিত) ফ্যাটি লিভার এবং নন অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার।
* উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে।
* যেসব খাবারে খাদ্য আঁশ বেশি থাকে যেমন- কাঁচা ফল, শাকসবজি, লাল চাল ও আটা ইত্যাদি বেশি খেতে হবে।
হেপাটাইটিস সি
লিভারের এ রোগ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের জন্য হয়ে থাকে।
* আয়রন কম আছে যেমন- গরুর মাংস, ডিমের কুসুম, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি কম খাবে।
* পরিমিত লবণ এবং বেশি লবণযুক্ত খাবার যেমন- আচার, পনির, যে কোনো টিন খাবার ইত্যাদি বর্জন করতে হবে।