
ফরিদপুরে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী
ঢাকা, ০৩ আগস্ট, (ডেইলি টাইমস ২৪):
ফরিদপুরে পদ্মা নদীর তীরবর্তী চারটি উপজেলা প্লাবিত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে বন্যাকবলিত মানুষ। বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ১৭টি ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি। সেই সঙ্গে দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট।
পদ্মা নদীর পানি ১০১ সেন্টিমিটার থেকে কমে বুধবার পর্যন্ত তা বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ফরিদপুর সদর, চর ভদ্রাসন, সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার।
এছাড়া বন্যার পানিতে ওইসব এলাকার হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। বন্যার ফলে ধান, পাটসহ সব ধরনের কৃষি পানিতে তলিয়ে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অধিকাংশ মানুষ উঁচু স্থানসহ স্থানীয় বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি ও বন্যার্ত মানুষ একত্রে উঁচু রাস্তা ও বেড়িবাঁধগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যা অপরিবর্তিত থাকায় চারটি উপজেলার প্রায় ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।
জানা যায়, সময় যত গড়াচ্ছে এসব এলাকার মানুষের দুর্ভোগ ততই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট। চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীরটেক এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বন্যার পানিতে ১৫টি গ্রাম তলিয়ে গেছে।
চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীরটেকের বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেয়া আছিয়া খাতুন বলেন, ঘর-বাড়ি পানিতে ডুবে যাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছি। অনেক দূরে গিয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানি আনতে হচ্ছে। বাঁধের উপর কোনো পয়নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় নারীদের কষ্ট সবচেয়ে বেশি বলেও জানান তিনি।
এদিকে সদর উপজেলার আলীয়াবাদ এলাকায় পানি প্রবেশ করায় ফরিদপুর-চরভদ্রাসন আঞ্চলিক সড়কটি এখন হুমকির মুখে। আবার পানি বাড়তে থাকলে যেকোনো সময় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
আলিয়াবাদ উপজেলার চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক ডাবলু জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করে জেলা প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে এবং সরকারের বরাদ্দ অনুযায়ী পর্যায়ক্রমে অন্যদের মাঝে ত্রাণ সরবরাহ করা হবে।
সদর উপজেলার ডিক্রির চর ইউনিয়নের বাসিন্দা মানিক শেখ বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কয়েকটি গরু পালন করছি। কিন্তু বন্যায় গরুর খাবারের সংকট হওয়ায় খুব সমস্যায় পড়েছি। বন্যার পানি বেশিদিন স্থায়ী হলে হয়তো ঈদের আগেই গরুগুলি বিক্রি করে ফেলতে হতে পারে বলেও জানান তিনি।
এদিকে বন্যাদুর্গত এলাকায় চর্মরোগসহ পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দিয়েছে। এ ধরনের রোগে পানিবন্দী মানুষসহ গবাদি পশুও আক্রান্ত হচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে চিকিৎসা সেবা না থাকায় দ্রুত এ রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী জানান, ইতিমধ্যে ৪টি উপজেলার বন্যার্ত মানুষের সব ধরনের সহযোগিতা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিদিনই বন্যাকবলিতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ পর্যন্ত পানিবন্দী মানুষের জন্য ২৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।