আন্তর্জাতিক

নোবেল শান্তি পুরস্কারের দৌঁড়ে এগিয়ে যারা

ঢাকা, ০৫ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

এ বছরের নোবেল পুরস্কার ঘোষণা শুরু হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে চিকিৎসা,পদার্থ আর রসায়নের পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি রয়েছে, শান্তি, সাহিত্য আর অর্থনীতি।

তবে নোবেল পুরস্কারের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে শান্তি পুরস্কার। যুদ্ধবাজ থেকে শুরু করে শিক্ষায় অবদান রাখা ব্যক্তিও পেয়েছেন এ পুরস্কার। শুক্রবার ঘোষণা করা হবে এ পুরস্কার।

এবছর রেকর্ড সংখ্যক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছে। মোট ৩৭৬ প্রতিযোগীর মধ্যে রয়েছে, ২২৮ জন ব্যক্তি ও ১৪৮টি সংগঠন।

নোবেল পুরস্কারের জন্য নির্বাচন সবসময় গোপন থাকে। এরপরও মনোনয়ন তালিকা দেখে পুরস্কারের দৌঁড়ে এগিয়ে থাকাদের বিষয়ে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।

সিরিয়ার ‘হোয়াইট হেলমেটস’
এবারের নোবেল শান্তি পুরস্কারের তালিকায় সবচেয়ে আলোচিত নাম উদ্ধারকর্মীদের দল সিরিয়ার ‘হোয়াইট হেলমেটস’। দেশটিতে গত পাঁচ বছরের গৃহযুদ্ধে বোমা হামলার পর ধ্বংসস্তুপ এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রায় ৬০ হাজার মানুষকে উদ্ধার করেছে তারা।

সাধারণত এই উদ্ধারকর্মীরা সরকারি বাহিনীর বোমা হামলার পর ধ্বংস্তুপ থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে। হামলার পর জীবন বাজি রেখে দ্রুত সময়ে আক্রান্ত স্থানে ছুঁটে যান ‘হোয়াইট হেলমেটস’ সদস্যরা। নিজেদের ব্যবহৃত সাদা হেলমেটের জন্যই তারা ‘হোয়াইট হেলমেটস’ নামে পরিচিত।

এই কাজ করতে গিয়ে ‘হোয়াইট হেলমেটসের’ ১৬০ জন সদস্যকে তাদের জীবন দিতে হয়েছে। অধিকাংশ সময় যে ভবনে সরকারি বাহিনীর বিমান একবার বোমা হামলার পর ফের হামলা করেছে, সেখানে এ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

অ্যাঙ্গেলা মেরকেল
নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য আলোচিত আরেকটি নাম জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। নিজ দেশে পাহাড়সম বিরোধিতা সত্ত্বেও শরণার্থীদের জন্য জার্মানির দরজা খোলা রেখেছেন মেরকেল।

শরণার্থীদের জন্য উদারতা দেখিয়ে বিদেশে প্রশংসিত হলেও নিজ দেশে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন মেরকেল। উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রচারণার ফলে সর্বশেষ স্থানীয় নির্বাচনে হেরেছে তার দল। এছাড়া এই ইস্যুতে তিনি নোবেল পেলে আসন্ন নির্বাচনে এটি তার জন্য হিতে বিপরীতও হতে পারে।

পোপ ফ্রান্সিস
এখন পর্যন্ত কোনো পোপ নোবেল শান্তি পুরস্কার পাননি। তবে এবছরের নোবেল শান্তি পুরস্কারের দৌঁড়ে বেশ এগিয়ে আছেন পোপ ফ্রান্সিস। নানা ইস্যুতে কথা বলে ইতিমধ্যে গণমাধ্যমের নজর কাড়তে সমর্থ হয়েছেন তিনি।

বিশেষ করে শরণার্থী, দারিদ্র্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থান নিয়ে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের বাইরেও লাখ লাখ মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন তিনি।

গ্রিক দ্বীপবাসী
নোবেল শান্তি পুরস্কার এবার গ্রিসের দ্বীপবাসীর হাতে উঠলে বিস্ময়ের কিছু হবে না, যদিও তাদের কেউই এটি চায়নি। শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে এই সময়ে সবচেয়ে মানবতাবাদী কাজের জন্য লেসবস দ্বীপপুঞ্জের মানুষ এ পুরস্কারে ভূষিত হতেই পারেন।

অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যেই সিরীয় শরণার্থীদের জন্য নিজেদের দরজা খোলা রেখেছেন এজিয়েন সাগরের তীরের এই মানুষগুলো।

এই দ্বীপপুঞ্জের একটি দ্বীপকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে। অবশ্য নোবেল কমিটি মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করেনি। প্রস্তাবে প্রতীকী হিসেবে তিন ব্যক্তিকে পুরস্কারটি দেয়ার প্রস্তাব করা হয়। এদের মধ্যে দুজন হলেন স্কালা স্কামনিয়াসের এমিলিয়া কামভিসি (৮৫) এবং জেলে স্টেটিস ভালিয়ামোস (৪০)। প্রথমজনকে সমুদ্র তীরে এক সিরীয় শিশুকে বোতলে করে খাওয়াতে দেখা যায়। দ্বিতীয়জন অথৈ সমুদ্রে ডুবতে থাকা শত শত মানুষকে উদ্ধার করেন। অন্যজন হলে উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে সুসান সারানদন।

হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস এবং তিমোশেঙ্কো
শান্তিচুক্তির মধ্যদিয়ে প্রায় ৫২ বছরের রক্তাক্ত সংঘাতের সমাপ্তি টানায় কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট হুয়ান ম্যানুয়েল সান্তোস এবং ফার্ক বিদ্রোহী নেতা রদ্রিগো লোন্দোনিও তিমোশেঙ্কো নোবেল শান্তি পুরস্কার পেতেই পারতেন।

কিন্তু নানা কাঠখড় পুড়িয়ে করা এই শান্তিচুক্তি শেষ পর্যন্ত গণভোটে নাকচ করে দিয়েছেন কলম্বিয়ার জনগণ। এখনও শান্তিচুক্তি বহালের শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট সান্তোস।

সর্বোপরি, অনুমানের বাইরেও যে কেউ কিংবা যেকোনো সংগঠন নোবেল শান্তি পুরস্কায় জিততে পারেন। যেমন- গত বছর শান্তিতে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার লাভ করলেন পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী মালালা ইউসুফজাই (১৭) এবং ভারতের শিশু অধিকার কর্মী কৈলাশ সত্যার্থী (৬০)। শিক্ষায় অবদানের জন্য তারা এ পুরস্কারে ভূষিত হন।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button