ওয়াটার বাস বাণিজ্য বিপর্যয়ের মুখে
ঢাকা, ১১ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):
রাজধানীর আমিনবাজার-বাদামতলী নৌরুটে ওয়াটার বাসগুলোর বেহাল দশা। অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যয়, ইঞ্জিন বিকল, যান্ত্রিক ত্রুটি, যাত্রাপথে ধীরগতি, সিডিউল বিপর্যয়, পর্যাপ্ত বাস না থাকা এবং যাত্রী সংকটে লোকসান গুনতে হচ্ছে রাজধানীর চারপাশে নদীপথে চালু ওয়াটার বাস সার্ভিসে। বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেয়া ইজারাদারের ভাষ্যমতে লাভের পরিবর্তে গত চার মাসে তাদের লোকসান গুনতে হয়েছে সাড়ে ৯ লাখ টাকা।
এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এ সার্ভিস সাময়িকভাবে লোকসান হচ্ছে, তবে আমরা এখানেই হাল ছেড়ে দেব না। বর্তমানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়া হয়েছে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ব্যর্থ হলেও ওয়াটার বাস বন্ধ করা হবে না।
জানা যায়, ২০০৪ সালে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে ১০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে গাবতলী থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত ওয়াটার বাস নামানো হয়। কিছুদিন পর যাত্রী না থাকার কারণ দেখিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় এ সার্ভিসটি। পরে ২০১০ সালের আগস্টে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে আরও দুটি ওয়াটার বাস নামানো হয়। সে সময় ১১ মাস যেতে না যেতেই আবারও লোকসানের মুখে পড়তে হয়। ২০১৩ সালে আগের ঘাট বাতিল করে আবার প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আরও ৪টি ওয়াটার বাস নামানো হয়। তখন প্রতিদিন ৪০ হাজার টাকা লোকসান দেখিয়ে ওয়াটার বাস সার্ভিসটি তুলে দেয়া হয় বেসরকারি মালিকানায়। কিন্তু তারাও লোকসানের কারণে বেশি দিন টিকে থাকতে পারেনি। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ১৬ নভেম্বর পাঁচ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে আরও ছয়টি বাস চালু করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ইজারা দেয়া হয় ব্যক্তি মালিকানাধীন ইমরান ট্রেডার্স নামে এক প্রতিষ্ঠানকে। বর্তমানে অধিকাংশই ওয়াটার বাস নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
প্রতি মাসে গড়ে ৩ লাখের বেশি লোকসান হেেচ্ছ জানিয়ে ওয়াটার বাসের ইজারা পাওয়া ইমরান ট্রেডার্সের মালিক আলী আশরাফ বলেন, ঘাট ও বাসের ইজারা নেয়ার পৌনে চার মাসে আমাদের লোকসান গুনতে হয়েছে সাড়ে ৯ লাখ টাকা। প্রতি মাসে প্রতিটি বাসের জন্য বিআইডব্লিউটিসিকে দিতে হয় ১৫ হাজার টাকা, এর পর স্টাফদের বেতন। ১৫ জুন বিআইডব্লিউটিসির কাছ থেকে আটটি ওয়াটার বাস ইজারা পাই। যার বেশিরভাগ বাসেরই যন্ত্রাংশ নষ্ট। আটটি বাসের মধ্যে চলার উপযোগী চারটি দিয়েই এখন সার্ভিসটি চলছে। এর মধ্যে আবার দুটি বড় আর দুটি ছোট বাস। বড় বাসে জ্বালানি বেশি লাগে বলে ছোট বাস দুটি চালাচ্ছি; তাই যাতায়াতে সময় একটু বেশি লাগে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি ট্রিপে যাত্রী পাওয়া যায় ১০ থেকে ১৫ জন, তাদের থেকে ভাড়া উঠে খুব সামান্য। সে তুলনায় বড় বাসের ক্ষেত্রে জ্বালানি প্রয়োজন হয় প্রায় ৮২ লিটার আর ছোট বাসের ক্ষেত্রে লাগে ৫২ লিটার, তাই পুরোটাই লস। বাসগুলোতে জ্বালানি খরচ অনেক বেশি। যে কারণে আমরা যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করি; ফলে সিডিউল বিপর্যয় হয়। এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) শহিদুল ইসলাম বলেন, লোকসানের কারণেই মূলত এটি ইমরান ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়া হয়েছে। তবে শুনেছি তাদেরও নাকি লোকসান হচ্ছে। আমরা খুব দ্রুতই একটা পরিকল্পনা করব কীভাবে এ খাতকে এগিয়ে নেয়া যায়। যদিও ইজারা দেয়ার পর এটা এখন আমাদের দেখাশোনার দায়িত্ব নয়, তার পরও আমরা দেখছি। দ্রুতই এ ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।