জাতীয়

দ্বিপক্ষীয় ঋণ সরবরাহে আগ্রহী চীন

ঢাকা, ১৩ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

আঞ্চলিক যোগাযোগ স্থাপনে ঐতিহাসিক সিল্ক রুট পুনরায় চালু করতে চায় চীন। সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আদলে এশিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ইনফ্রাসট্রাকচার ব্যাংক (এআইআইবি) প্রতিষ্ঠা করছে দেশটি।

তবে মেগা প্রকল্পগুলোতে এ ব্যাংকটির মাধ্যমে ঋণ বিতরণের চেয়ে দ্বিপক্ষীয় প্রক্রিয়ায় ঋণ দিতে আগ্রহী চীন। যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ব্যয়বহুল। ফলে চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের আসন্ন সফরে এআইআইবি’র ট্রাস্ট ফান্ড গঠনে প্রস্তাব উঠতে পারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

সংশ্লিষ্ট সরকারি সূত্র জানায়, এআইআইবিতে যে দেশগুলোর অংশিদারিত্ব রয়েছে, সে অনুযায়ী এর অর্থ জোগাড় হয়। আর সে অনুযায়ী বর্তমানে সদস্য রাষ্ট্রগুলো ঋণ পাওয়ার যোগ্য। যদি ব্যাংকটির ট্রাস্ট ফান্ড গঠিত হয়, তবে সদস্য রাষ্ট্র এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো এ ব্যাংকটি থেকে চাহিদা অনুযায়ী স্বল্প সুদে সহজ শর্তে ঋণ পেতে পারে।

আর যদি চীন দ্বিপক্ষীয় ঋণ সরবরাহ করে, তবে ঋণ পেতে হলে দেশটি থেকে প্রকল্পের যাবতীয় কেনা-কাটা করতে হয়। শর্তগুলোও খুব বেশি সুবিধার হয় না। যা দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য বোঝাস্বরূপ। ফলে বাংলাদেশ চাইছে সকল সদস্য রাষ্ট্রকে সঙ্গে নিয়ে এ ট্রাস্ট ফান্ড গঠনে চাপের সৃষ্টি করা।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে সরকারের শীর্ষস্থানীয় একজন নীতিনির্ধারক বলেন, ‘এআইআইবি কবে কাজ শুরু করবে- এ প্রশ্নটি থেকেই যায়। যদিও বাংলাদেশ দু’টি ঋণ পাচ্ছে এআইআইবি থেকে। তবে একই সময়ে বড় অংকের প্রকল্পগুলোতে দ্বিপক্ষীয় আরো বেশি ঋণ পাচ্ছি দেশটির কাছ থেকে। চীন আঞ্চলিক অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে ঋণ বিতরণে যে মাল্টিলেটারাল ব্যাংক (এআইআইবি) করলো, তার ফাংশনিং খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। বরং দেখা যাচ্ছে, এ ব্যাংকটির মাধ্যমে তারা যে পরিমাণ ঋণ দিচ্ছে তার চেয়ে দ্বিপক্ষীয় ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। যদি এটিকে কার্যকর ব্যাংক করতে হয়, তবে সকল ধরনের সেবা রাখতে হবে। কিন্তু তারা কেন বড় অংকের ঋণগুলো দ্বিপক্ষীয়ভাবে দিতে চাইছে তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়’।

শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) ঢাকা  সফরে আসছেন চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং। তার সফরকালে ২৫টিরও বেশি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে।

এর বাইরে ব্লু-ইকোনমির সহযোগিতা, চীনের অর্থায়নে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের জন্য জাহাজ সংগ্রহসহ বেশ কিছু মেগা প্রকল্পগুলোতে চীনের সহযোগিতা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। ঢাকায় ২২ ঘণ্টারও কম সময় কাটাবেন শি জিনপিং। সফরকালে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন চীনা রাষ্ট্রপতি।

চীনের সঙ্গে ঋণ প্রকল্পের বিষয়ে চৌকস কূটনৈতিক তত্পরতা ও বিচক্ষণ দেন-দরবারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সেগুলোর বিষয়ে আলোচনা সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। আমরা এ বিষয়ে কোনো ভুল করলে অনেক খেসারত দিতে হবে। কারণ, এসব প্রকল্পের অর্থ আমাদের ফেরত দিতে হবে’।
শ্রীলঙ্কার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, বড় দু’টি প্রকল্পে চীনের অর্থায়নের কারণে তাদের বিদেশি ঋণের বোঝা অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ৪৫ বিলিয়ন ডলার রফতানি ও রেমিট্যান্স থেকে পায়। আমরা বিদেশি ঋণ পরিশোধ করি এক বিলিয়ন ডলারের মতো। ফলে আমরা অনেক দেশি-বিদেশি ঋণ নেওয়ার ক্ষমতা রাখি। কিন্তু এ ঋণের আলোচনা আমাদের সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে’।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবিরও বলেন, বড় প্রকল্পগুলোতে যদি দ্বিপক্ষীয় ঋণের পরিবর্তে এআইআইবি থেকে পাওয়া যায়, তবে তা বাংলাদেশের জন্য সাশ্রয়ী হবে।
সূত্র জানায়, অর্থায়নের জন্য চীনকে পাঠানো প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে দু’টির। ‘ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গর্ভমেন্ট ফেজ-৩’ এবং ‘কনসট্রাকশন অব টানেল আন্ডার দ্য রিভার কর্ণফূলি’ শীর্ষক প্রকল্প দু’টির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে যথাক্রমে ১৫ কোটি ডলার ও ৭০ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। উভয় প্রকল্পের জন্যই এক্সিম ব্যাংকের কাছে ঋণের আবেদন পাঠানো হয়েছে।

আর বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার প্রক্রিয়ায় থাকা প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ৫০ কোটি ডলারের ‘ইন্সটলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’, ৫০ কোটি ডলারের ‘রাজশাহী ওয়াসার সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট প্রজেক্ট’, ১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলারের ‘সিস্টেম লস রিডাকশন বাই রিপ্লেসিং ৫ মিলিয়ন ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল এনার্জি মিটার উইথ ইলেকট্রিক এনার্জি মিটার’, ২শ’ ৩ কোটি ৮০ লাখ ডলারের ‘এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেন্দিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রজেক্ট’, ১৬৫ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের ‘পদ্মা ব্রিজ রেল লিংক (ফেজ-১)’, ৯১ কোটি ৭১ লাখ ডলারের ‘পদ্মা ব্রিজ রেল লিংক (ফেজ-২)’, ১৩২ কোটি ১৮ লাখ ডলারের ‘পাওয়ার গ্রিড নেটওয়ার্ক স্ট্রেন্দিং প্রোজেক্ট আন্ডার পিজিসিবি’ ও  ‘কনস্ট্রাকশন অব ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ এবং ২০ কোটি ডলারের ‘মর্ডানাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেক্টিভিটি’ প্রকল্প।
২০১৪ সালে চীন সফরে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় চীনের রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান তিনি। পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষ থেকেও প্রেসিডেন্ট শিং জিন পিং বরাবর আনুষ্ঠানিক পত্র পাঠানো হয়। এসব আমন্ত্রণের জবাবে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের কথা জানিয়েছিলেন চীনের রাষ্ট্রপতি।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button