
সার্কে ভারতের প্রভাব ঠেকাতে নতুন জোট চায় পাকিস্তান
ঢাকা, ১৩ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):
দক্ষিণ এশীয় সহযোগিতা সংস্থা-সার্কের উপর ভারতীয় প্রভাব মোকাবেলায় বৃহৎ পরিসরে একটি দক্ষিণ এশীয় অর্থনৈতিক জোট গঠনের পরিকল্পনা করেছে পাকিস্তান।
যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ দিনের সফরে যাওয়া পাকিস্তানের একটি পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি দল এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে।খবর ডন অনলাইনের।
প্রতিনিধি দলের সদস্য সিনেটর মুশাহিদ হোসেইন বলেন, ইতোমধ্যে বড় পরিসরের দক্ষিণ এশিয়ার উত্থান ঘটেছে। এর মধ্যে চীন,ইরান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলো রয়েছে।
তিনি জানান, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর দক্ষিণ এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার মধ্যে প্রধান অর্থনৈতিক সংযোগ গড়ে তুলছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তানের গোয়েদার সমুদ্রবন্দর শুধু চীন নয়, স্থলবেষ্টিত মধ্য এশীয় দেশগুলোও ব্যবহার করতে পারবে।
এই নতুন জোটে ভারতও যোগ দেবে বলে পাকিস্তানের প্রত্যাশার কথা উল্লেখ করেছেন মুশাহিদ হোসেইন।
উল্লেখ্য, আগামী ১৫ ও ১৬ নভেম্বর পাকিস্তানে সার্কের ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভারত নিয়ন্ত্রিণত কাশ্মীরের উরির সেনাঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলায় ১৯ জন ভারতীয় সেনা নিহতের ঘটনায় সার্ক সম্মেলন বাতিল হয়ে যায়।
এ ঘটনায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা রয়েছে অভিযোগ করে পাকিস্তানকে কূটনৈতিকভাবে এক ঘরে করে ফেলার ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
যার ধারাবাহিকতায় গত মাসে সার্ক সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেয় ভারত। এরপর বাংলাদেশ, ভূটান, আফগানিস্তান এবং শ্রীলংকাও একই ঘোষণা দেয়।
বেশিরভাগ সদস্য দেশের বর্জনের মুখে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সম্মেলন স্থগিত ঘোষণা করতে বাধ্য হয় সার্কের চেয়ারম্যান নেপাল। পরে ইসলামাবাদও একই ঘোষণা দেয়।
ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,আট দেশের আঞ্চলিক জোট সার্কের সদস্যের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের শক্তিশালী মৈত্রী রয়েছে।
আর চারদিকে থেকে ভারত বেষ্টিত ভুটান এতই ক্ষুদ্রাকৃতির দেশ, যার পক্ষে নয়াদিল্লির কোনো পদক্ষেপের বিরোধিতা করা সম্ভব হয় না।
অন্যদিকে সার্কের তিন দেশ মালদ্বীপ,নেপাল এবং শ্রীলংকার সঙ্গে পাকিস্তানের সুসম্পর্ক থাকলেও ভারতের বিরুদ্ধে যাওয়ার মতো বড় দেশ নয়।
এই পরিস্থিতিতে ইসলামাবাদে সার্ক সম্মেলনে বর্জনের ঘটনাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে পাকিস্তান।
দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, সার্ক বর্তমান যে রূপে আছে তা যদি বহাল থাকে তাহলে সংস্থাটির উপর সব সময় ভারতের কর্তৃত্ব চলবে। এ কারণে পাকিস্তান বৃহত্তর দক্ষিণ এশিয়ার কথা বলছে।
অপর একজন কূটনীতিক বলেন, পাকিস্তান আশা করছে নতুন আয়োজনে সার্কে ভারতের প্রভাব মোকাবেলা করার সুযোগ তৈরি হবে।
এদিকে ওয়াশিংটনে কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলেছেন, পাকিস্তানের প্রস্তাবের ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব বলয় নিয়ে চীনের দুশ্চিন্তার অবসান ঘটবে।
তাদের মতে, এ কারণে ইরান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোকে নতুন জোটে যোগদান করাতে চীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তবে পাকিস্তানের পরিকল্পনার ব্যাপারে সার্কের সদস্য দেশগুলো খুব একটা আগ্রহ দেখাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন পর্যবেক্ষকরা।
বিশেষ করে বাংলাদেশ, নেপাল ও শ্রীলংকার সীমান্ত থেকে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের দূরত্ব বেশি হওয়ায় এতে যোগ দিয়ে এ তিন দেশ তেমন একটা উপকৃত হবে না।
তবে বৃহৎ দক্ষিণ এশীয় জোট হলে সার্ক সদস্যদের মধ্যে শুধু আফগানিস্তানই উপকৃত হবে। কিন্তু ভারতের স্বার্থ বিঘ্নিত হয় এমন কোনও পদক্ষেপ দেশটি নেবে না বলে উল্লেখ করেছেন পর্যবেক্ষকরা।
একজন দক্ষিণ এশীয় কূটনীতিকের মতে, যদি বৃহৎ দক্ষিণ এশীয় ফোরাম গঠিত হয়ও তাতে ভারতের সঙ্গে বিরোধের ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলো পাকিস্তানকে সমর্থন করবে বলে কোনো নিশ্চয়তা নেই।
তিনি বলেন, মধ্য এশিয়ার অনেক দেশের সঙ্গেই ভারতের শক্তিশালী বন্ধন রয়েছে। আর পাকিস্তানের সঙ্গে ইরানের নানা সমস্যা রয়েছে।