জাতীয়

আ’লীগ-বিএনপিকে নিয়ে সার্চ কমিটির প্রস্তাব সুজনের

ঢাকা, ১৫ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪): বর্তমান মেয়াদ শেষে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের একজন করে প্রতিনিধিসহ ৫ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে সুশাসনে জন্য নাগরিক-সুজন।

সুজন আয়োজিত জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় শনিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে এই প্রস্তাব দেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। লিখিত বক্তব্যে তিনি ওই কমিটির সভাপতি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারপতিকে রাখার পরামর্শ দেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী হলেই নির্বাচন যে সঠিক হবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই। কারো প্রতি ইঙ্গিত না করে বলতে পারি প্রশাসনিক যে ব্যবস্থা বিদ্যমান আছে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা প্রয়োজন। নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির জন্য তিনি যেন সবদলের সঙ্গে আলোচনা করেন।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, এর আগে যতোগুলো নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা আইন ছাড়া নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সে নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। এখনো যদি আইন ছাড়া নির্বাচন কমিশন গঠন হয়, তবে আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি সেটি আদালতে চ্যালেঞ্জ হবে। সার্চ কমিটিতে বিচারপতি রাখতেই হবে এমনটি আমি মনে করি না।

দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনগুলোর উদাহরণ নিয়ে শাহদীন মালিক আরও বলেন, এ পর্যন্ত ৭৩, ৭৯ ৮৬, ৮৮, ৯৬ ও ২০১৪ সালে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। এসব নির্বাচনের কোনোটিই সঠিক হয়নি। যদি এবারও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, তবে এখন যারা সরকারে আছে তারাই দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হবে।

বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আস্থাহীনতার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ আশঙ্কা করছে সরকার হয়তো কমিশনে তাদেরকেই নিয়োগ দেবে যারা সরকারের পক্ষেই কাজ করবে। তাই তাদের পক্ষে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সার্চ কমিটি গঠনে রাষ্ট্রপতি সাবেক রাষ্ট্রপতি, সাবেক প্রধান বিচারপতি, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিবদের পরামর্শ নিতে পারেন।

গণমাধ্যমব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা এখানে যেসব বিষয়ে আলোচনা করছি আমার মনে হয় সরকার এগুলোর প্রতি নজর দেবে। সরকার কেমন নির্বাচন চায় বিগত জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে সবশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পর্যন্ত সেই মডেল প্রতিষ্ঠা করে তারা দেখিয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে যেসব নির্বাচন হয়েছে সেগুলো যদি ৯০ শতাংশ নিখুঁত ধরা হয়, তবে দলীয় সরকারের সময়ে যেসব নির্বাচন হয়েছে তার ৯০ শতাংশ নির্বাচনই কারচুপি হয়েছে। বর্তমানে দেশে নানা কৃত্রিম ইস্যু সৃষ্টি করে নির্বাচন ইস্যুতে আলাপ-আলোচনা বন্ধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন আর নির্বাচন নিয়ে কোথাও কোনো আলাপ-আলোচনা হয় না।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সদিচ্ছাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকার যদি সহযোগিতা না করে তবে নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। ২০১৯ সালে অবশ্যই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন ঠিক না থাকলে কোনো প্লেয়ার (রাজনৈতিক দল) ঠিকভাবে খেলতে পারবে না।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা বলেন, এদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থাহীনতা। যা থেকেই পরবর্তীতে নির্বাচনের ফল না মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়। সবার মতামত নিয়ে গঠিত ইসির অধীনে নির্বাচন হলে তা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর সম্পৃক্ততা দরকার।

বর্তমানে গণতন্ত্রের ভিত্তি দুর্বল হয়ে গেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশ না নেওয়া ছিল বিএনপির বিরাট ঐতিহাসিক ভুল। তারা নির্বাচনে অংশ নিলে পরিস্থিতি এতো খারাপ হতো না।

সভাপতির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম. হাফিজউদ্দিন খান বলেন, মরার আগে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখে যেতে পারব কি না জানি না।

‘নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, নারী নেত্রী হামিদা হোসেন, সাবেক সংসদ সদস্য ও নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম প্রমুখ।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button