
গ্রাহকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা বায়রা লাইফ!
ঢাকা, ২০ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):
একক ও ক্ষুদ্র বিমার নামে প্রায় দেড় হাজার মানুষের টাকা নিয়ে লাপাত্তা বায়রা লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি।
ঘটনাটি ঘটেছে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে। দ্বিগুন লাভ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামের মানুষের টাকা তুলে নেওয়ার পর কোম্পানিটির অফিস উধাও। গ্রাহকদের বেশিরভাগ মানুষই দরিদ্র।
ফলে ওই এলাকার কোম্পানির এজেন্ট এবং যাদের মাধ্যমে গ্রাহকরা বিমা করেছেন তাদের ওপরে নেমে এসেছে বিপদ, চলছে নির্যাতন। পলিসিহোল্ডারদের ভয়ে স্ত্রী-সন্তান ও পরিবার-পরিজন ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারাও। সমস্ত টাকা গ্রাহকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে প্রধান কার্যালয়ে জমা দিয়েছিলেন তারা।
জানা গেছে, ২০০৪ সালে বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জে ৪টি শাখা চালু করে বেসরকারি জীবন বিমা খাতের কোম্পানি বায়রা লাইফ। শাখাগুলো হচ্ছে- মোড়েলগঞ্জের বৌলপুর, নারিকেলবাড়িয়া, বর্শিবাওয়া ও শৌলখালী বাজার। এছাড়াও কচুবুনিয়া ও পার্শ্ববতী পিরোজপুরের বলেশ্বর শাখা চালু হয়। এসব শাখার জন্য বনগ্রামকে ডিভিশনাল শাখায় উন্নীত করে কোম্পানিটি। এখন এসব এলাকায় কোম্পানির কোনো অফিসই নেই।
বনগ্রাম শাখার ক্ষুদ্র বিমাকারী জাহিদুর রহমান বাংলানিউউজকে অভিযোগ করেন, ২০০৪ সালে তিনি বিমা করেন এলাকার মেম্বার ননী গোপাল বাছাড়ের মাধ্যমে (পলিসি নম্বর-২৫৩০০১৫৪)। ১০ বছর মেয়াদী পলিসিটির কিস্তি শেষ হয়েছে ২০১৪ সালে। কিন্তু এ এলাকাটির অফিসই উধাও হয়ে গেছে।
বৌলপুর শাখায় একক বিমা করেছেন মনির শেখ। তিনি বলেন, ‘বৌলপুর শাখার ম্যানেজার মোফাজ্জল হোসেনের কথায় ১০ বছর মেয়াদী ৬০ হাজার টাকার পলিসি করি। মেয়াদ শেষে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেবে বলে বলা হয়েছিল। বাসের হেল্পারি ও কন্ট্রাক্টরি করে প্রতি মাসে ৫শ’ টাকা কিস্তি দেই। ১০ বছর পর একসঙ্গে ওই টাকা পেয়ে ব্যবসা করবো বলে ভেবেছিলাম। কিন্তু ৫৩ হাজার টাকা কিস্তি দেওয়ার পর মোফাজ্জল বলেন, টাকা দেওয়া লাগবে না। এরপর আর কিস্তি নেন না। পরে শুনি, খাতায় সাড়ে ৪৬ হাজার টাকা জমা হয়েছে। তাকে জানালে তিনি বলেন, আপনি সবই পাবেন। এখন বৌলপুরে কোম্পানির শাখাও নেই, মোফাজ্জলও নেই। শুনেছি, ওমানে চলে গেছেন’।
মোফাজ্জল হোসেনের স্ত্রী জানান, গ্রাহকের টাকা না দিতে পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তার স্বামী। তিনি কোথায় আছেন জানতে চাইলে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
এভাবে মোড়েলগঞ্জের বনগ্রামের ৪২৫টি, বৌলপুরের ৬১০টি, নারিকেলবাড়িয়ার ৫৪টি, বর্শিবাওয়ার ১৫৭টি, শৌলখালীর ৯০টি, কচুবুনিয়ার ৫৩টি এবং পিরোজপুরের বলেশ্বর শাখার ৭০টি পলিসির টাকা নিয়ে লাপাত্তা বায়রা লাইফের অফিস, যেগুলো ১০ হাজার টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পলিসি ছিলো।
ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার ও বনগ্রাম শাখার ম্যানেজার ননী গোপাল বাছাড় বাংলানিউজকে বলেন, ‘খুলনা শাখার পিডি নুরুল কাদের চৌধুরীর মাধ্যমে ২০০৫ সালে খুলনা সার্ভিসিংয়ের আওতায় বায়রা লাইফে যুক্ত হই। এলাকায় তিনবার মেম্বার থাকায় লোকেরা আমাকে সম্মান দিতেন। এখন পলিসিহোল্ডাররা সম্মান দেওয়ার পরিবর্তে গাল-মন্দ করেন। কয়েকবার আমাকে আটকেও রেখেছেন। তৎকালীন মেম্বার ও চেয়ারম্যান ইলিয়াস হোসেন এবং বর্তমান চেয়ারম্যানের জিম্মায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছি। গ্রাহকরা যাতে টাকা পান, সেজন্য কোম্পানির ঢাকার বিজয়নগর প্রধান কার্যালয়ে প্রতি মাসে দুই থেকে তিনবার আসি, অনুরোধ করি। গত মাসে কোম্পানির হিসাবরক্ষককে বলি, যদি আপনারা আমার পলিসিহোল্ডারদের টাকা না দেন, তাহলে আত্মহত্যা করবো। তখন সহকারী হিসাবরক্ষক সাইফুল বলেন, নিচতলায় গিয়ে আত্মহত্যা করেন’।
ননী গোপাল বাছাড় বলেন, ‘বৃদ্ধ বয়সে ৪শ’ থেকে ৫শ’ মানুষের প্রায় ১ কোটি টাকার বিমার বোঝা বইছি’।
নারিকেলবাড়িয়া শাখার ম্যানেজার রইসুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। পরিবারকে নিয়ে বেঁচে থাকতে খুলনায় প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। পাশাপাশি প্রতি মাসে বায়রার অফিসে ২ থেকে ৩ বার যাচ্ছি। কিন্তু কোনো ভালো খবর পাচ্ছি না। বরং ঢাকা আসা-যাওয়ার খরচে আমি ফতুর হয়ে যাচ্ছি’।
বায়রার চেয়ারম্যান মো. আবুল বাশার বলেন, ‘ছোট ছোট শাখা ছিলো, এখন বন্ধ হয়েছে হয়তো। তবে এ বিষয়ে কোম্পানির এমডি ভালো বলতে পারবেন’।
এমডির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগের এমডির দায়িত্ব পালনের সময় কিছু সমস্যা ছিলো। তবে এখন আর সে সমস্যা নেই। সঠিক কাগজপত্র নিয়ে এলে যার যা পাওনা, তা পরিশোধ করে দেওয়া হবে’।