
ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি, ওসির বিরুদ্ধে মামলা
ঢাকা, ২০ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):
রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসিসহ পুলিশের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক কলেজ শিক্ষককে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ সুপারকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
রাজশাহীর আমলী ৫নং আদালতে এই মামলা করেছেন চারঘাটের সরদহ ডিগ্রি কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক নাজমুল ইসলাম খোকন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল ফোনে পরিচয়ের সূত্র ধরে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ নাজমুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয় একই উপজেলার মিয়াপুর গ্রামের হুমায়ুন খানের মেয়ে নিভিয়া খান নিপুর। বর্তমানে তাদের তিন বছরের একজন পুত্রসন্তান রয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর নিপু অসামাজিক কাজে জড়িত থাকায় তাদের সংসারে অশান্তি তৈরি হয়। এ নিয়ে থানায় একাধিক জিডি করেন খোকন। তবে পুলিশের পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় খোকনের স্ত্রী নিপুর। এরই জের ধরে চলতি বছরের ২৯ জুন ও ১৬ জুলাই পুলিশ পরিদর্শক নিবারণ চন্দ্র বর্মণ ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে খোকনের কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু এই টাকা দিতে অস্বীকার করেন খোকন।
অবশেষে ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় তিনি স্ত্রী নিভিয়া খান নিপুকে তালাক দেন। পরদিন ১৭ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা করে কলেজ যাওয়ার পথে চারঘাট থানার এসআই আব্দুল খালেক ও এসআই খায়রুল ইসলাম তার গতিরোধ করেন। এসময় এসআই খালেক ওয়ারেন্টের কথা বলে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করেন। এতে চ্যালেঞ্জ করে বসেন খোকন। পরে তাকে এসআই খালেক ও এসআই খায়রুল তাদের মোটরসাইকেলে উঠিয়ে খোকনকে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পাশে পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের ফায়ারিং স্পটের গেটের সামনে নিয়ে যান। এরপর এসআই খালেক একটি অবৈধ পিস্তল খোকনের কোমরে গুঁজে দেওয়ার চেষ্টা করেন।
এ সময় খোকন চিৎকার শুরু করলে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসায় তাকে দ্রুত থানায় নেওয়া হয়। থানায় তিন ঘণ্টা আটক রেখে ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু এবারও টাকা দিতে রাজি হননি খোকন। পরে থানায় বসে এজাহার লিখে বাড়ি থেকে তার সাবেক স্ত্রী নিপুর কাছ স্বাক্ষর করে নেয় ওসি। ওই মামলায় খোকনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এজাহার থেকে আরও জানা গেছে, এ ঘটনার দুই দিন পর ১৯ জুলাই ওসির নির্দেশে খোকনের বাড়ি গিয়ে এসআই আব্দুল খালেক ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। গ্রেফতার এড়াতে খোকনের মা এসআই খালেককে ১৭ হাজার টাকা দেন।
এ দিকে আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসার পর চারঘাট থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র ফের ক্রয়ফায়ারের ভয় দেখিয়ে খোকনের কাছে ফের ১০ লাখ টাকা দাবি করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী এডভোকেট মোখলেসুর রহমান জানান, আদালত মামলাটি গ্রহণ করে রাজশাহীর পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২১ নভেম্বরের মধ্যে জমা দিয়ে বলা হয়েছে।
এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- চারঘাট থানার ওসি নিবারণচন্দ্র বর্মণ, এসআই আবদুল খালেক, এসআই খায়রুল ইসলাম, এএসআই সাইফুল ইসলাম ও খোকনের সাবেক স্ত্রী নিভিয়া খান নিপু।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চারঘাট থানার ওসি নিবারণচন্দ্র বর্মণ বলেন, এসব ঘটনার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্কই নেই। বরং নাজমুল ইসলাম খোকনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তার সাবেক স্ত্রীর দায়ের করা মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহীর পুলিশ সুপার মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঞাঁ বলেন, আদালতে মামলা হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু এখনো কাগজপত্র হাতে পাইনি। পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র: দৈনিক যুগান্তর