
অষ্টমবারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হচ্ছেন শেখ হাসিনা
ঢাকা, ২০ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):
একদিন পরই আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। অষ্টমবারের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দলের সভাপতি নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
যদিও সম্প্রতি দু’টি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দল তাকে অবসরের সুযোগ দিলে খুশি হবেন।
কথাটি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না এলেও ভবিষ্যত নিয়ে ভাবছেন অনেক নেতাই।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, শেখ হাসিনা যতোদিন বেঁচে থাকবেন- তাকে এ পদে থাকতেই হবে। আওয়ামী লীগে এখনো শেখ হাসিনার বিকল্প নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। সুতরাং, তিনি চাইলেও তাকে ছাড়া হবে না।
অনেকে মনে করেন, প্রধানমন্ত্রী আসলে এ বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য নেতা হিসেবে গ্রহণ করতে কারো দিকে ইঙ্গিত করছেন।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো বলছে, শেখ হাসিনা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত কেউ সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি, এবারও করবেন না। শেখ হাসিনাকেই সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হবে।
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের দুর্দিনে দলের হাল ধরেছিলেন দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া এই ক্যারিশম্যাটিক নেতা।
১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আওয়ামী লীগের ত্রয়োদশ জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ১৭ মে দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেন তিনি।
এরপর ১৯৮৭, ১৯৯২, ১৯৯৭, ২০০২, ২০০৯ এবং ২০১২ সালে আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা।
সম্মেলনের আগ মুহূর্তে গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির বৈঠকের শুরুতে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘১৯৮১ থেকে ২০১৬- ৩৫ বছর, আর কতো?’
নতুন নেতা নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি চাইবো, সবাই নতুন নেতা নির্বাচিত করুক। দলটা আরও সুন্দরভাবে এগিয়ে যাক’।
তিনি আরো বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চারা রোপণ করে গিয়েছিলেন, তা মহিরুহ হয়ে এতো বড় হয়েছে। কাজেই ভবিষ্যতের জন্য আপনারা নতুন চারা রোপণ করুন। দলকে আরও সুসংগঠিত করুন, সেটাই কামনা করি’।
গত ০২ অক্টোবর গণভবনে সংবাদ সম্মেলনেও শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘দল যদি আমাকে অবসরের সুযোগ দেয়, তাহলে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হবো’।
সভাপতির সিদ্ধান্ত নেতাকর্মীরা টু শব্দ না করে মেনে নেন। তাই এমন সিদ্ধান্ত যেনো না আসে যাতে নেতাকর্মীদের বিপক্ষে অবস্থান নিতে হয়, সেটাই চাইছেন সবাই।
১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পরও শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতির পদ থেকে সরে যেতে চেয়েছিলেন। নেতাকর্মীদের চাপেই তখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তিনি।
এতোদিন আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর হিসেবে শুধুমাত্র শেখ হাসিনা থাকলেও এবার বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও কাউন্সিলর হিসেবে থাকছেন।
আগামী শনি ও রোববার (২২ ও ২৩ অক্টোবর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে দলটি।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বলছেন, শেখ হাসিনা অবসর চাইলে তারা তা মেনে নেবেন না। যেকোনো মূল্যে তারা শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দেখতে চান।
কাউন্সিলে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের কয়েকজন বাংলানিউজকে বলেন, ‘কেউ শেখ হাসিনার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার করবেন! প্রশ্নই ওঠে না’।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তিনবার ক্ষমতায় এসেছে। তিনি আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক। তিনিই ফের দলের সভাপতি হবেন’।
‘দলে শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নাই’।
সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য নূহ উল আলম লেনিন বলেন, ‘শেখ হাসিনা শেখ হাসিনার কথা বলবেন, এটা স্বাভাবিক। এখানে শেখ হাসিনার বিকল্প কোনো নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। ওই পদে পরিবর্তন আসার প্রশ্নই ওঠে না’।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘দেশবাসী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আরো চান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে আরো চান। সবাই চান, তার নেতৃত্বেই দেশ আরো এগিয়ে যাক, দল আরো এগিয়ে যাক’।
তিনি বলেন, ‘যতোদিন পর্যন্ত তার সামর্থ্য থাকবে, ততোদিন পর্যন্ত শেখ হাসিনা দলকে নেতৃত্ব দেবেন, রাষ্ট্রকে নেতৃত্ব দেবেন। এর বাইরে জনগণ কিছু ভাবছেন না, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কিছু ভাবছেন না’।
‘বিকল্প শব্দটাই আমি আনতে চাই না। শেখ হাসিনার বিকল্প তো প্রশ্নই ওঠে না। শেখ হাসিনা শেখ হাসিনাই’।
চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দলে এখনো কোনো বিকল্প নাই। নেত্রীর কথা নেত্রী বলছেন। তিনি যতোদিন বেঁচে থাকবেন, আমরা চাই, তিনি ততোদিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। যেকোনো মূল্যে আমরা তাকে দলের নেতৃত্বে রাখবো’।
তিনি আরো বলেন, ‘বাস্তবতা হলো, নেত্রী যদি না থাকতেন, আর দায়িত্ব যদি না নিতেন, তাহলে আজকে বাংলাদেশের অবস্থা আফগানিস্তানের চেয়েও খারাপ হতো। সুতরাং, তাকেই দলের সভাপতির দায়িত্বে থাকতে হবে। দলকে নেতৃত্ব দিতে হবে, দেশকে নেতৃত্ব দিতে হবে’।