
শতবছরের মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন
ঢাকা, ২৩ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের শতবছরের ঐতিহ্যবাহী কদিরপণ্ডিতেরহাট দারুস সালাম জামে মসজিদ মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে এখন নদীগর্ভে। নদীতে মসজিদ ভেঙে পড়ায় স্থানীয় মুসল্লিরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তাদের আহাজারি করতে দেখা গেছে।
বুধবার (১৯ অক্টোবর) রাতে দ্বিতল ভবনের মসজিদটি মেঘনা নদীতে ভেঙে পড়ে। এর আগে মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) রাত থেকে মসজিদের পশ্চিমাংশে ভাঙন শুরু হয়।
সমজিদ সংলগ্ন চর জগবন্ধু কাদিরপণ্ডিতেরহাট ইসলামিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ নুরুন নবী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয় সাহেবের হাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল খায়ের বাংলানিউজকে জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে কাদিরপণ্ডিতের হাট বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে ছিলো বাজারের মসজিদটি। গত দুই দিনের ভাঙনে মসজিদটিও নদীতে পড়ে যায়।
স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি শতবছর আগে মরহুম হাজী মুসলিম মিয়া স্থানীয়দের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে প্রবাসী, ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ডা. আমির হোসেন, মাস্টার নুরুল আলমসহ কমিটির লোকজন মসজিদটির উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেন। দারুস সালাম জামে মসজিদ উপজেলার প্রথম পাকা মসজিদ। এ মসজিদে দেশ-বিদেশ থেকে তাবলীগ জামাতের মুসল্লিরা আসতেন। বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতাসহ আশ পাশের কয়েক গ্রামের মুসল্লিরা এ মসজিদে নামাজ আদায় করতেন। সকালে শিশুদের দেওয়া হতো নামাজ ও কোরআন শিক্ষা।
স্থানীয় বাসিন্দা লেখক ম. নুরুল আলম ও ঐতিহাসিক গ্রন্থ রামগতি দর্পণ থেকে জানা গেছে, উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে মরহুম হাজী মুসলিম নিজ বাড়ির দরজায় এ মসজিদ স্থাপন করেন। পরে স্থানীয় মরহুম ওমর আলী ফরাজী এ মসজিদের জন্য ৬৫ শতক জমি দান করেন। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ঘূর্ণিঝড়ে মসজিদটির ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে বাজার কমিটির অনুরোধে মসজিদটি বাজারের পাশে এনে স্থাপন করা হয়। এ মসজিদই এক সময়ে বৃহত্তর রামগতির প্রথম দ্বিতল মসজিদ হিসেবে পরিচিতি পায়।
মসজিদের ইমাম মাওলানা হাফেজ ফয়েজ আহাম্মদ বলেন, ৪০ বছর ধরে এ সমজিদে ইমামতি করেছি। এ মসজিদে বাকি জীবন পার করতে চেয়েছি। কখনো মনে করিনি মসজিদটি এভাবে নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
কমলনগরের হাজিরহাট হামেদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা জায়েদ হোসাইন ফারুকী বাংলানিউজকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী ও শতাব্দীর প্রাচীনতম মসজিদ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দোয়া করি, দোয়া করুন, আল্লাহ যেন সবাইকে উত্তম প্রতিফল দান করে। মসজিদের লাখো-কোটি সেজদা কবুল করে আল্লাহ কমলনগর উপজেলার বাকি অংশ হেফাজত করুন; আমিন।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের মেঘনা নদী দীর্ঘ চার যুগ ধরে অব্যাহতভাবে ভাঙছে। গত ৭/৮ বছরের ভাঙনে উপজেলার কয়েকটি হাটবাজার, রাস্তাঘাট, ঘুর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,ফসলি জমি, ঘর-বাড়ি, সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা নদী গর্ভে হারিয়ে গেছে।