
সাব্বির পারবেন তো?
ঢাকা, ২৩ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):
এ এক অন্যরকম টেস্ট ম্যাচ। ধ্রুপদী হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। আর ৩৩ রান করলেই অসম্ভবকে সম্ভব করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয় বাংলাদেশের। টেস্টের চরিত্রের সবই থাকলো। ইংলিশরা কাঁপতে থাকলো। অসাধারণ এক জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো স্বাগতিকরা। শেষ বিকেলের চুরি যাওয়া আলোয় টাইগারদের সেই স্বপ্নটাও ফিঁকে হতে শুরু করলো। মনে হলো শেষ বুঝি! কিন্তু সব কিছুর পরও অসাধারণ লড়াইয়ের গল্পটা চতুর্থ দিনে অসম্পূর্ণই রয়েই গেল। এ যেন শেষ হয়েও হলো না শেষ! পাল্লাটা ইংলিশদের দিকে ঝুঁকে বেশি। কিন্তু সাব্বির রহমান অসাধারণ মানসিকতার ইনিংস খেলে ৫৯ রানে অপরাজিত। সে কারণেই পঞ্চম ও শেষ দিনের সকালে চট্টগ্রামে আরো নাটকীয় কিছুর ভাবনায় বাড়ি গেল চতুর্থ দিন।
২৮৬ রানের লক্ষ্য। এই উইকেটে যা অসম্ভব বলা হচ্ছে শুরু থেকেই। সেখানেই মুশফিকুর রহিম ও সাব্বিরের অসাধারণ লড়াইয়ে বেশ খানিকটা সম্ভাবনা নিয়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। ৮ উইকেটে ২৫৩ রানে এই দিনটা শেষ। নতুন দিনের সকালে সাব্বিরের ব্যাটের সঙ্গী হয়ে তাইজুল ইসলাম (১১) কিংবা শেষ ব্যাটসম্যান শফিউল ইসলাম কি ইতিহাস রচনা করতে পারবেন? পারবেন তারা ইংল্যান্ডকে প্রথমবারের মতো টেস্টে হারাতে?
চা বিরতির পর ৯৬ বলে বাউন্ডারি নেই। স্টুয়ার্ট ব্রডকে আগের ওভারেই বাউন্ডারি মেরে প্রেশার রিলিজের চেষ্টা করেছেন মুশফিক। বিরতির ১৭ ওভার পর প্রথম বল পেলেন গ্যারেথ ব্যাটি। সাব্বির তাকে বাউন্ডারি মেরে দেন। কিন্তু মুশফিককে করা ওভারের পঞ্চম বলটি দারুণ ঘোরে, আচমকায় দেয় লাফ! মুশফিকের ব্যাটের হ্যান্ডল ছুঁয়ে শর্ট লেগে গ্যারি ব্যালান্সের হাতে জমা পড়ে। ১২৪ বলে ৩৯ রানের অসীম মনযোগের ইনিংসে খেলে ফেরেন মুশফিক। তীরের কাছে এসে তখন দিশা হারিয়ে ফেলার অবস্থা নাবিকের!
ফল যাই হোক গ্রেট টেস্ট ম্যাচ হিসেবে লেখা থাকবে এটি। বাংলাদেশের ব্যাটিং দাঁড়িয়ে প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানের ওপর। চতুর্থ ইনিংসে রেকর্ড গড়ে জেতার লক্ষ্যে তাদের ৫ জনের বিদায় ১৪০ রানে। যথেষ্ট লড়েই। প্রত্যেকটা উইকেট স্পিনারের। তামিম ইকবাল (৯)-ইমরুল কায়েসের (৪৩) জুটি ভালো শুরুর ইঙ্গিত দেন। চমৎকার ক্যাচে ফেরেন তামিম। লাঞ্চের আগে ইমরুলও নেই। ২ উইকেটে ৮৬ রান নিয়ে লাঞ্চে।
ফিরে মুমিনুল হক (২৭) ও মাহমুদ উল্লাহ (১৭) দ্রুত ১০০ পার হন। কিন্তু ৫ রানের ব্যবধানে ফিরতে হয় তাদের। সাকিব আল হাসান (২৪) ও মুশফিক হাল ধরেন। ৩২ রান পর তাও ভাঙে সাকিবের বিদায়ে। ওখান থেকেই শুরু টেস্টে ‘নবজাতক’ সাব্বিরকে নিয়ে মুশফিকের লড়াই।
সাব্বির শুরুতে দুই ওভারে ২ ছক্কা ১ চারে মঈনকে আক্রমণ থেকে সরিয়ে দেন। সেই আগ্রাসণেই ৫ উইকেটে ১৭৯ রানে চা বিরতিতে। আর ১০৭ রান! ফিরে এসে নতুন করে শুরু মুশফিক ও সাব্বিরের। চরম সতর্কতায়। উইকেটে মাথা গুজে লড়াই যাকে বলে। ব্যক্তিগত ৩৪ রানে সাব্বির নতুন জীবন পান জনি বেয়ারস্টো তার ক্যাচ ফেললে। মনে হলো ভাগ্যটা বুঝি বাংলাদেশকেই স্বপ্নের সীমানা পেরুনোর সাহস দিল আবার। চাপের মুখে একবার রিভিউ নিতে গিয়ে সময়ের কথা মাথা থেকে হারিয়ে রিভিউ হারান অ্যালিস্টার কুকরা!
কিন্তু ১১ বছর পর টেস্টে ফেরা ৩৯ বছরের ব্যাটি মুশফিককে তার তৃতীয় শিকার বানিয়ে ফেলেন। এরপরই জোড়া আঘাত স্টুয়ার্ট ব্রডের। অভিষিক্ত মেহেদী হাসান মিরাজ (১) এবারও ব্যাটে ব্যর্থ। ৫ উইকেটে ২২৭ থেকে চোখের পলকে ৮ উইকেটে ২৩৮! ইংলিশদের প্রাণে আনন্দ ফেরে। কিন্তু এই রাতের ঘুমে তাদের স্বপ্নে অবশ্যই হানা দিয়ে ফিরবেন সাহসী সাব্বির। ফ্লাডলাইটের আলোয় সন্ধ্যাকালে বাংলাদেশের ফিঁকে হয়ে যাওয়া স্বপ্ন কাঁধে যিনি তুলে নেন ফিফটি, বাউন্ডারিতে। প্রায় দেড় সেশনের লড়াইয়ে ৯৩ বল খেলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ‘নট আউট’ ৫৯ রানে। হার মানেননি সাব্বির। সোমবারের সকালে কি অসম্ভব স্বপ্নটাকে ইংলিশদের শক্ত মুঠি থেকে বের করে আনতে পারবেন সবুজ চোখের ব্যাটসম্যান? ভুললে চলবে না, শেষ পর্যন্ত ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তারই খেলা!