
হিরোর মতো কিছু করতে চাই : হিরো আলম
ঢাকা, ২৫ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):
‘যখন আপনাকে নিয়ে কেউ সমালোচনা করবে, তখন বুঝতে হবে আপনি অচিরেই আলোচিত কিছু হতে যাচ্ছেন।` বগুড়ার আশরাফুল হোসেন আলম উক্তিটি জানেন কিনা জানা নেই। তিনি এখন ‘হিরো আলম’ নামে পরিচিত। তবে তাকে নিয়ে যত আলোচনা বা সমালোচনা হোক না কেন তিনি দমে যেতে রাজি নন। হঠাৎ করেই চলতি বছরের জুন মাসের শুরুতে আলোচনায় উঠে আসেন বগুড়ার এই ডিশ ব্যবসায়ী।
যদিও মডেল হিসেবেই তিনি জনপ্রিয়। ফেসবুকে তার নামে দুই শতাধিক ফেক আইডি রয়েছে। ইউটিউবেও রয়েছে। তার এই জনপ্রিয়তা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, তিনি এক মাসের ব্যবধানে দেশের জাতীয় দৈনিক ও জনপ্রিয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সংবাদ শিরোনাম হন। প্রান্তিক পর্যায়ের এই হিরো আলম এখন একটি অতি পরিচিত নাম।
ইতিমধ্যে তিনি বেশ কয়েকবার ঢাকায় এসেছেন। উদ্দেশ্য বিজ্ঞাপণ চিত্র ও নাটকে অভিনয় করা। ইতিমধ্যে বেশ কিছু কাজ হাতে নিয়েছেন বগুড়ার এই অদম্য তরুণ। পাশাপাশি দেশের বাইরে থেকেও পারফর্ম করার প্রস্তাব পাচ্ছেন। তার শুরু, কাজের ধারা, এ পর্যায়ে উঠে আসা বিভিন্ন বিষয়ে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান ভবিষ্যত পরিকল্পনা কথা। তার সেই সাক্ষাৎকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল। কৌতূহলী পাঠক সেখান থেকে হিরো আলমকে আরেকবার দেখে নিতে পারেন।
আপনার অনেকগুলো মিউজিক ভিডিও আমরা দেখেছি। শুরুটা কীভাবে হলো?
হিরো আলম : আমি ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম নাচ-গান করার। প্রথমে সিডির ব্যবসা করেছিলাম। এরপর ডিশের ব্যবসা শুরু করি। এই সময় আমি প্রচুর বিভিন্ন গান, নাটক ও সিনেমা দেখি। এগুলো দেখতে দেখতে এক সময় আমারও শখ জাগল অভিনয় করার। সিদ্ধান্ত নিই নিজেই অভিনয় করব। গান করব। এরপর সেটা নিজে নিজেই দেখব (নিজের ক্যাবল টিভিতে)। এরপর একটা-দুটো করে গান করতে থাকলাম। হঠাৎ করে লোকজন বলতে শুরু করল যে ভালোই হচ্ছে আমার গান। এরপর শখ করে আরো কয়েকটি গান করলাম।
আপনার প্রথম মিউজিক ভিডিও কত সালে রিলিজ হয়?
হিরো আলম : ২০০৮ সালে প্রথম মিউজিক ভিডিও করি। সেটি ধীরে ধীরে ক্যাবল টিভিতে চালাতে থাকলাম। তবে শুরুতে অনেক সমালোচনার শিকার হয়েছি। অনেকে বলত, আমার হিরো হওয়ার স্বপ্ন দেখে লাভ নাই। কারণ, আমার হিরোর মতো চেহারা নাই। আমি চাইলেই অ্যাক্টর হতে পারব না। আমি আসলে কেবল শখ করেই করতাম এগুলো। নিজের শখেই দেখতাম।
ফেসবুকে আপনি কীভাবে জনপ্রিয়তা পেলেন?
হিরো আলম : বছর খানেক আগে আমি ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলি। আসলে ফেসবুক কাকে বলে আমি সেটা বুঝতাম না তখন। আমি গ্রামের ছেলে। এলাকার সবাই আমাকে ‘হিরো’ বলে ডাকে। তাই ফেসবুকের নাম দিলাম ‘হিরো আলম’। এরপর আমি ইউটিউবে আমার গানগুলো দিতে থাকলাম। যদিও গানগুলো আমার নিজের না। কপিরাইট আমার না। ওগুলো সিনেমার গান। আমি শখ করে গেয়েছি। হঠাৎ করে আমি কিছু কৌতুকধর্মী গান বানালাম। ওখানে একটি ডায়লগ খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে- ‘আমার একটা কথা শুনবে তো। শোন আমার একটা কথা।’ এই কৌতুকটা যখন আমি ইউটিউবে ছাড়লাম তখন আস্তে আস্তে সেটার ভিউয়ার বাড়তে থাকল। সেখান থেকে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ল। চতুর্দিকে হৈচৈ পড়ে গেল। কে এই হিরো আলম? এরপর এ ফোন করে, ও ফোন করে। আমি প্রথমে কেয়ার করিনি। কিন্তু এরপর সমানে সবাই ফোন দিতে লাগল। এরপর একদিন একটি রেডিও থেকে আমার কাছে ফোন এলো। পত্রিকা থেকেও অনেকে ফোন করে তথ্য নিয়ে নিউজ করলেন।
ফেসবুকে আপনার কোন আইডি নিজের?
হিরো আলম : ফেসবুকে আমার নামে এখন ২০০-এর উপরে ফেইক আইডি আছে। অবশ্য আমার প্রথম ফেসবুক আইডিটা ‘হিরো আলম’ নামেই ছিল। কিন্তু সেটা হ্যাক হয়ে যায়। কারা যেন ভ্যানিশ করে দেয়। এরপর আমি নতুনভাবে একটি আইডি খুলি। সেটা আমার পুরো নাম ‘আশরাফুল হোসেন আলম’ নামে।
ইউটিউবে আপনার নামে কোনো চ্যানেল আছে?
হিরো আলম : হ্যাঁ, হিরো আলম নামে আছে। সেখানে আমার সবগুলো ভিডিও আছে।
আলোচিত হওয়ার পর আপনি প্রথম কবে ঢাকায় আসেন?
হিরো আলম : চলতি বছরের ৫ জুন আমি প্রথম ঢাকায় আসি। সাংবাদিকরা আমাকে নিয়ে আসেন। ঢাকায় আসার পর এটিএন বাংলা আমাকে নিয়ে একটি নিউজ করে। এরপর থেকে আরো বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল, অনলাইন নিউজ করতে থাকে।
প্রথম আপনি কী উদ্দেশ্যে ঢাকায় এসেছিলেন?
হিরো আলম : আমি প্রথমে বুঝতে এসেছিলাম যে, সবাই আমাকে ডাকে কেন? ফোন করে কেন? তারা কী বলতে চায়? শুধু কথা বলার জন্য এসেছিলাম। অন্য কোনো টার্গেট ছিল না।
এবার আবার ঢাকায় এসেছেন। কী করতে যাচ্ছেন?
হিরো আলম : আরএফএল-এর একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করার কথা আছে। বনানীতে একটি প্রজেক্টে কাজ করার কথা হয়েছে। একটি শর্ট ফিল্ম হচ্ছে। আমার নিজের কণ্ঠে একটা র্যাপ গান বানাচ্ছি। শিগগিরই সেটি রিলিজ হবে। দুটি নাটকের কথা হচ্ছে। তার একটি এটিএন বাংলায়। ঈদের পরে কক্সবাজারে প্রোগ্রাম আছে। আমেরিকা থেকে একটি প্রস্তাব এসেছে। তারা আমার পুরো টিমকে ২ মাসের জন্য সেখানে নিতে আগ্রহী। সিঙ্গাপুরেও প্রোগ্রাম করার প্রস্তাব পেয়েছি। আসলে যেটা দেখতে পাচ্ছি সেটা হল- বাংলাদেশে আমি যেমন জনপ্রিয়তা পাচ্ছি, বাইরেও ঠিক একই রকম পাচ্ছি। সবচেয়ে ভালো লেগেছে সালমান খানের একটি গানের মিউজিক ভিডিও করেছিলাম। সেটা নিয়ে ভারতের বিভিন্ন মাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে বেশ ভালো যাচ্ছে সময়। তবে একা চলা বেশ কঠিন হয়ে গেছে।
পরিবারে আপনার কে কে আছে?
হিরো আলম : আমার বাবা আছেন, আম্মা আছেন, স্ত্রী, দুটো বাচ্চা আছে। একটা ছেলে, একটা মেয়ে। একজনের বয়স পাঁচ বছর। একজনের বয়স দুই।
আপনার মিউজিক ভিডিওর মডেল মূলত কারা?
হিরো আলম : এই মডেলগুলো বিভিন্ন জেলা থেকে নেওয়া। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনে এরা কাজ করে। অনেকে ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত।
এ পর্যন্ত আপনি কয়টি মিউজিক ভিডিও করেছেন? কো-আর্টিস্টদের সম্মানী দেন?
হিরো আলম : ৫০৩টি মিউজিক ভিডিও করেছি। হ্যাঁ, আমি নিজের থেকেই তাদের টাকা দিতাম।
আপনার এ কাজে পরিবার কতটা সহযোগিতা করেছে?
হিরো আলম : আমি পরিবার থেকে পুরো সাপোর্ট পেয়েছি। তারা আমাকে এখনও সাপোর্ট করছে। কারণ, এগুলোর প্রতি আগে থেকেই আমার আগ্রহ ছিল। পরিবার থেকে সাপোর্ট না পেলে এতোদূর আসা সম্ভব হত না। টিকে থাকাও সম্ভব হত না। সংসার ভেঙে চৌচিড় হয়ে যেত।
মিউজিক ভিডিও নিয়ে আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?
হিরো আলম : প্রথমে অনেকে নেতিবাচকভাবে দেখলেও এখন মানুষ আমাকে অন্যরকমভাবে গ্রহণ করছে। তাই আমি তাদেরকে হিরোর মতো কিছু উপহার দিতে চাই। নতুন কিছু, ভালো কিছু উপহার অবশ্যই দেব। তবে কেউ যদি ফান করার মতো কিছু করাতে চায় তাহলে করব না। তাহলে আমি হিরো আলম যে একটা-দুইটা গান বানাই, ওভাবেই চলব।
আপনার সবচেয়ে স্মরণীয় ভিডিও কোনটি?
হিরো আলম : বাসর ঘর নিয়ে একটি গান করেছি ওটা সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে।
আপনার পছন্দের একটি ডায়লগ বলুন।
হিরো আলম : যে ডায়লগটি নিয়ে তোলপাড় সেটা হলো- ‘শোন আমার একটা কথা। একটা কথা শুনবে তো।’
যারা আপনার সমালোচনা করে, তাদের উদ্দেশ্যে আপনার কী বলার আছে?
হিরো আলম : তাদের বলব, আপনাদের সমালোচনাও আমার ভালো লাগে। কারণ, আপনারাও আমাকে নিয়ে ভাবেন।
মানুষের জীবনে ভালো কিছু করার লক্ষ্য থাকে। আপনার আছে কী?
হিরো আলম : হ্যাঁ, আছে। আমি একটি অনাথ আশ্রম করতে চাই।