
আবেগ-অ্যাকশনের মিশেলে ফিরছেন পরিচালক অজয় দেবগণ
ঢাকা, ২৫ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):
অ্যাকশন হোক অথবা কমেডি সিনেমা, পছন্দের তালিকায় ভারতীয় অভিনেতা অজয় দেবগণ একটি জনপ্রিয় নাম। ৪৬ বছর বয়সী এই তারকার চেহারায় ছিল না কোন অভিনেতা সুলভ ব্যাপার। আঁকাবাঁকা দাঁত নিয়ে সিনেমার ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন অজয়। বাবা ভীরু দেবগণ অ্যাকশন সিনেমা দুনিয়ার পুরোনো মানুষ। তিনি একজন অ্যাকশন ডিরেক্টর। তার অনুপ্রেরণায় বলিউডে আগমন অজয়ের।
তাকে অজয় দেবগণ হিসেবেই এক নামে চিনি আমরা। কিন্তু অনেকেরই জানা নেই, অজয়ের আসল নাম হল বিশাল ভিরু দেবগাণ। হিন্দি সিনেমার নায়ক হতে গিয়ে নিজের নাম পাল্টান তিনি। নিজের পদবীও খানিকটা বদলেছেন অজয়, ‘দেবগান’ থেকে হয়েছেন ‘দেবগণ’।
নব্বইয়ের দশকের বেশ কয়েকটি সুপারহিট সিনেমার জন্য পরিচালকদের প্রথম পছন্দ ছিলেন অজয়, কিন্তু শেষমেশ কাজগুলো করা হয়নি তার। ‘ডর’ এবং ‘করণ অর্জুন’ সিনেমাতে অভিনয় করে শাহরুখ খান সবার মন জয় করে নিয়েছিলেন। কিন্তু সবার অজানা বিষয় হচ্ছে এই দুই চরিত্রের জন্য নির্মাতাদের প্রথম পছন্দ ছিলেন অজয় দেবগন।
সাম্প্রতিক সময়গুলোতে অ্যাকশন এবং কমেডি নায়ক হিসেবে বক্স-অফিস মাতানোর জন্যেই বেশি পরিচিত অজয়। কিন্তু দীর্ঘ ক্যারিয়ারে অভিনেতা হিসেবেও পেয়েছেন স্বীকৃতি। এখন পর্যন্ত দুবার জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন তিনি। ১৯৯৮ সালে ‘জখম’ ছবিতে অভিনয় করে জিতে নেন জীবনের প্রথম পুরস্কারটি। এছাড়া ‘দ্য লেজেন্ড অব ভগত সিং’ সিনেমার জন্য দ্বিতীয়বারের মত পেয়েছিলেন জাতীয় পুরস্কার।
গত বছর ২০১৫ সালে অজয় অভিনীত ‘দৃশ্যম’ ছবিটি মুক্তি পায়। বলাই বাহুল্য, অসাধারণ অভিনয় করে সব মহলের দর্শক থেকে শুরু করে নির্মাতাদের প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। এ বছর ‘শিভায়’ ছবিটি নিয়ে পর্দায় ফিরছেন তিনি। এই ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনাও করেছেন অজয়। এই অভিনেতাকে একজন রক্ষক, পরিবর্তনশীল ও ধ্বংসাত্মক ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যাবে। এই সিনেমার মাধ্যমেই অজয়ের ঝুলিতে প্রযোজকের খেতাব জমা হতে চলেছে। উল্লেখ্য, ‘শিভায়’ ছবির আগে ২০০৮ সালে ‘ইউ মি অউর হাম’ নামের একটি ছবি পরিচালনা করেছিলেন তিনি।
শোনা গেছে, অজয়ের আসন্ন ছবি ‘শিভায়’ ছবিতে নাকি একটি বিশেষ ভূমিকায় থাকছেন কাজল। তবে দর্শকরা তাদেরকে লিড রোলে ফের দেখতে চাইছেন বড়পর্দায়। কিন্তু কাজলের সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করার আগে একটি বিশেষ শর্ত দিয়েছেন অজয়। অজয়ের দাবি, তাদের কামব্যাকের জন্য জমজমাট স্ক্রিপ্ট হতে হবে। নারীকেন্দ্রিক একটি চরিত্রে নাম ভূমিকায় কাজলকে ভেবে ইতিমধ্যেই নাকি একটি চিত্রনাট্যের কাজ শুরু করেছেন তিনি। তবে অন্য কোনও পরিচালকের সঙ্গেও তারা কাজ করতে রাজি। শুধু গল্পে চমক থাকতে হবে।
সম্প্রতি আসন্ন ছবি ‘শিভায়’ প্রসঙ্গে বিদেশি গণমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন রসিক মেজাজের অভিনেতা অজয় দেবগণ। প্রিয়.কমের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি দেয়া হল এই প্রতিবেদনে।
‘শিভায়’ ছবির প্রথম ট্রেলার অ্যাকশনে ভরপুর। গানের প্রোমোয় আবার শুধু ইমোশন। পরিকল্পনা করে প্রচারণা করেছেন কি?
অজয় দেবগণ: একেবারেই। পুরোটা সচেতনভাবে করা। থিয়েট্রিক্যাল ট্রেলারে মানুষ অ্যাকশনটাই দেখবেন। কিন্তু গল্পটা ধরতে পারবেন না। আবার গানের প্রোমো’তে গল্পের নরম দিকটাও দেখানো যাবে। আসলে আমার ছবিতে গানগুলো গল্প বলতে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে প্রোমো হিসেবে ওগুলো ব্যবহার করার একটা মানেও হয়। টেকনিক্যালি ‘শিভায়’ খুব আবেগপ্রবণ ছবি। অ্যাকশনও প্রচুর।
আরেকটা ট্রেলার প্রকাশ করবেন কি?
অজয় দেবগণ: ভেবেছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে তো আর সে রকম কোনও মুক্তি পেতে যাওয়া সিনেমা নেই, যার সঙ্গে ট্রেলার রিলিজ করা যায়। তাই ভাবছি কী করা যায়!
স্বপ্নের প্রজেক্ট কেন বলছেন ‘শিভায়’কে, ব্যাখ্যা করবেন?
অজয় দেবগণ: গল্পটা লেখার অনেক পরে সিনেমার ভাবনা আসে আমার একটা অনুভব থেকে। বাবা-মেয়ের সম্পর্ক থেকে যে অনুভবটা তৈরি হয়। সেটা থেকেই গল্প বুনেছি। গল্পটা কিন্তু সাধারণ। স্ক্রিনপ্লে আর প্রেজেন্টেশন দিয়ে জিনিসটাকে আরও ভাল করে সাজানো হয়েছে।
এত হাইপ তৈরি হল ছবিটাকে নিয়ে, যদি ব্যবসাসফল না হয়?
অজয় দেবগণ: হাইপটা কিন্তু এমনি এমনি তৈরি হয়নি। একটা প্রতিশ্রুতি দিতে পারি, যে ট্রেলারে যা অ্যাকশন দেখা গিয়েছে, তার কয়েকগুণ বেশি ছবিতে আছে। আসলে আমাদের দেশের অল্পবয়সিরা মনে করে, ভারতীয় ছবিতে অ্যাকশন খুব বোকা বোকা। মানে, ভিজ্যুয়াল এফেক্টের নিরিখে। এই ছবি সেই ধারণা ভাঙতে পারে। হলিউডি মাপকাঠির কাছাকাছি অন্তত পৌঁছতে পারা গিয়েছে, সেটা ট্রেলারেই দর্শক বুঝেছেন। ‘শিভায়’এর মতো ছবি যে ভারতেই তৈরি হয়েছে, তাতে আমার অন্তত খুব গর্ব হচ্ছে।
‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’ ছবিটি ভাবাচ্ছে না? বক্স অফিসের অঙ্কটা তো ভাগ হয়ে যাবে।
অজয় দেবগণ: কিছু করার নেই। দর্শকও ভাগ হয়ে যাবে। কিন্তু ভাল ছবি এগিয়ে যাবে। সেটাই নিয়ম। প্রথম দিনেই সবটা বোঝা যাবে না। কারণ দিনটা দিওয়ালির আগের দিন। ফলে মুক্তির দিনে বড় অঙ্কের হিসেব না করাই ভাল। তার পরের সোমবার পর্যন্ত দেখলে ব্যাপারটা বোঝা যাবে। তখনই ভাল ছবিটা নিজের কদর বুঝিয়ে দেবে।
করণ জোহরের সঙ্গে আপনার ঝামেলাটা তো বিরাট হয়ে দাঁড়িয়েছিল…।
অজয় দেবগণ: সেটা খুব দুঃখের। তবে বলিউডে দু’টো ছবি একই দিনে শান্তিপূর্ণভাবে মুক্তি পেয়েছে, এ রকম অনেকবারই হয়েছে। ‘রুস্তম’ আর ‘মহেঞ্জোদারো’ই তো তাই। তাদের অবশ্য ঝগড়াও ছিল না।
‘শিভায়’ ছবির বাজেট নাকি বাড়তে বাড়তে সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল?
অজয় দেবগণ: সে রকম কিছুই হয়নি। আর পাঁচটা অজয় দেবগণের ছবির মতোই বাজেট ‘শিভায়’ এর। ফলে প্রযোজক হিসেবে আমার উপর কোনও চাপ ছিল না। আমার ডিস্ট্রিবিউটরের উপরও না। একটা উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন আপনার কাছে ১০ টাকা আছে ছবি বানানোর জন্য। পরিচালক আর অভিনেতা মিলে কিন্তু সাত টাকা নিয়ে যাবেন তার থেকে। ছবি বানানোর সম্বল ওই তিন টাকা! কিন্তু এই প্রজেক্টে তো আমিই পরিচালক, আমিই অভিনেতা। ফলে পুরো দশই দিচ্ছি। অনেকটা টাকা ঢালতে পেরেছি আসলে।
‘ইউ মি অওর হাম’ এর পর নয়বছর সময় লাগল কেন আরেকটা ছবি বানাতে?
অজয় দেবগণ: আসলে ছবি বানাতেই হবে, এমন কোনও অঙ্গীকার নেই আমার (হাসি)। নিজের কোনও চিন্তা থেকে একটা গল্প যদি বানাতে পারি যেটা বলার মতো, তাহলে বানাব। তবে আশা করি, ‘শিভায়’ এর পরেরটা আর এত দেরিতে হবে না!
অন্য অভিনেতাদের নির্দেশনা দিতে ইচ্ছে করে না?
অজয় দেবগণ: ছবিতে আমি অন্যদের নির্দেশনা দিতে অবশ্যই চাই। অভিনয় আর পরিচালনা একসঙ্গে করাটা খুবই ক্লান্তিকর। অন্য কাউকে নিলে তো এক জায়গায় বসে সিকোয়েন্স ন্যারেট করব, কাজ মিটে যাবে (হাসি)!
‘শিভায়’তে যদি কোনও পাক অভিনেতা থাকতেন, কী করতেন এই সময় এই পরিস্থিতিতে?
অজয় দেবগণ: জনমত যা বলত, তাই করতাম। আগেও বলেছি, যে ছবিগুলো বানানো হয়ে গিয়েছে, সেগুলোকে নিষিদ্ধ করাটা অন্যায়। কিন্তু যারা কাজ শুরু করতে যাবেন, তাদের একটু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। পরিস্থিতি না বদলানো পর্যন্ত পাক অভিনেতাদের নেওয়া উচিত নয়।