জাতীয়

নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন

ঢাকা, ২৫ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

নিউ ইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশিদের সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটির দ্বিবার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত রবিবার দিনব্যাপী এ নির্বাচনে ভোটারদের পরিচয়পত্র যাচাই ও জালভোট প্রদানের দুই-একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ  অনুষ্ঠিত হয়। সোসাইটির তালিকাভুক্ত ১৮ হাজার ৫৫১ জন ভোটারের মধ্যে ১১ হাজার ১৫৭ জন ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন।

নিউ ইয়র্কের উডসাইড, ব্রঙ্কস, জামাইকা, ব্রুকলিন এবং ওজোনপার্কের পাঁচটি কেন্দ্রে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা চলে ভোটগ্রহণ। এবার ১৯টি পদের জন্য দুটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল এবং সভাপতি পদে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট ৩৯ প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। তবে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি পদে হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। রবিবার মধ্যরাতে সব কেন্দ্রের ভোটগণনা শেষে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান সৈয়দ টিপু সুলতান ফল ঘোষণা করেন। নিউ ইয়র্কের উডসাইডের নির্বাচনী মূল পাঁচটি কেন্দ্রের চূড়ান্ত ফল ঘোষনা করা হয়। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী কুনু-আজম পরিষদকে পরাজিত করে কামাল-রুহুল পরিষদ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেন।

ঘোষিত ফল অনুযায়ী বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি পদে কামাল আহমেদ পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৭৪৪ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান সভাপতি আজমল হোসেন কুনু পেয়েছেন চার  হাজার ৭৬৬ ভোট। সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান চৌধুরী পেয়েছেন মাত্র ৩০৭ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে রুহুল আমিন সিদ্দিকী পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৫৮৪ ভোট, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম পেয়েছেন চার হাজার ৯৭২ ভোট। ফল ঘোষণার পর কামাল-রুহুল পরিষদের কর্মী-সমর্থকরা আনন্দ প্রকাশ করেন।

কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে বেশ কয়েকজন ভোটার জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে একই নিয়মেই এ সংগঠনটিকে পরিচালনা করা হচ্ছে। নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা প্রবাসীদের কল্যাণে নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনে জয়লাভের পর কেউ আর এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চিন্তাও করেন না। বাংলাদেশিদের জন্য কম্যুনিটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা, স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ, বাংলাদেশ ডে প্যারেডের আয়োজন, বাংলা স্কুল পুনরায় চালু, বাংলাদেশ সোসাইটিকে গণমুখীকরণ, নবাগত প্রবাসীদের বাসস্থান এবং চাকরির সহায়তা প্রদানসহ নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি ছিল এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে।

প্রবাসী বাংলাদেশিরা নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এবার নির্বাচিতরা যেন তাঁদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার চেষ্টা করেন। একইসঙ্গে সংগঠনটিকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটিকে আরো গতিশীল ও গণমুখী করার আহ্বান জানান।

এদিকে, রবিবার মধ্যরাতে চূড়ান্ত ফল ঘোষণার সময় ফলাফল যোগফলে ভুলের কারণে  গণসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক পদে কামাল-রুহুল পরিষদের সিরাজুল হক জামালকে পাঁচ  হাজার ৫০৬ ভোট দেখিয়ে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এ ঘটনার এক ঘণ্টা পরই কুনু-আজম পরিষদের প্রতিদ্বন্দ্বী রিজু মোহাম্মদের কর্মী-সমর্থকরা বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করেন। পাঁচটি কেন্দ্রের ফল পুনরায় যোগ করার পর নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত হন যে পূর্ব ঘোষিত ফল সঠিক ছিল না। মাত্র ৫২ ভোটের ব্যবধান খুঁজে পান তাঁরা। ফলে দুঃখ প্রকাশের পর কুনু-আজম পরিষদের রিজু মোহাম্মদকে গণসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক পদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

এ ব্যাপারে রিজু মোহাম্মদ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “ভোট গণনায় ভুল বা ইচ্ছাকৃত যেভাবেই হোক- আমার প্রতিদ্বন্দ্বীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন। পরে বারংবার সকল কেন্দ্রের ভোট গণনা করে দেখি আমি প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৫২ ভোটে এগিয়ে আছি। পরে বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কর্ণগোচরে দেওয়া হলে কমিশন ফল নিয়ে আবারো যোগ করতে বসেন। নিখুঁতভাবে প্রাপ্ত ভোটের ফল আবারো যোগ করতে বসেন তাঁরা। একপর্যায়ে জামাইকা কেন্দ্রে সিরাজুল হক জামালের ফল যোগের সময় ভুলক্রমে ৫৫৭ এর স্থলে ৯৫৭ লেখা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত হবার পর নির্বাচন মিশন নিজেদের ভুলের কারণে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে ৫২ ভোটের ব্যবধান দেখিয়ে গণসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক পদে রিজু মোহাম্মদকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন।

এদিকে, নিরঙ্কুশ জয় পাওয়া কামাল-রুহুল পরিষদের কার্যকরী পরিষদের সদস্য পদপ্রার্থী মইনুল ইসলাম তাঁর প্রাপ্ত ভোট পু্নরায় গণনার দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশন বরাবর  লিখিত আবেদন জানিয়েছেন বলে জানা গেছেন।

নির্বাচন কমিশনের ঘোষণায় নির্বাচনী ফল:
বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি পদে কামাল আহমেদ পাঁচ হাজার ৭৪৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বর্তমান সভাপতি আজমল হোসেন কুনু পেয়েছেন চার হাজার ৭৬৬ ভোট। সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান চৌধুরী পেয়েছেন মাত্র ৩০৭ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে রুহুল আমিন সিদ্দিকী পাঁচ হাজার ৫৮৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম পেয়েছেন চার হাজার ৯৭২ ভোট। সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুর রহিম হাওলাদার পাঁচ  হাজার ৪৮১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মো. শাহ নেওয়াজ পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৪২ ভোট। সহসভাপতি পদে আবুল খালেক খায়ের পাঁচ হাজার ৬৪৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শফি আলম লাল পেয়েছেন চার হাজার ৭৩২ ভোট। সহসাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ এম কে জামান পাঁচ হাজার ২৪৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মফিজুল ইসলাম ভূঁইয়া পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৩০ ভোট। কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ আলী পাঁচ হাজার ৬৪১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রহিম নিশান পেয়েছেন চার হাজার ৫৭২ ভোট। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আবুল কালাম ভূঁইয়া পাঁচ হাজার ৪৭৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রফিকুল ইসলাম ডালিম পেয়েছেন চার হাজার ৭৫০ ভোট। সাংস্কৃতিক সম্পাদিক পদে মনিকা রায় পাঁচ হাজার ৫৯২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সেলিম ইব্রাহিম পেয়েছেন চার হাজার ৬৮৬ ভোট। প্রচার সম্পাদক পদে রিজু মোহাম্মদ পাঁচ হাজার ১৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সিরাজুল হক জামাল পেয়েছেন পাঁচ হাজার ১০৬ ভোট। সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে নাদির এ আইয়ুব পাঁচ হাজার ৫২৭ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী টিপু খান পেয়েছেন চার হাজার ৭৩৪ ভোট। সাহিত্য সম্পাদক পদে নাসির উদ্দিন আহমেদ পাঁচ হাজার ৩৬৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হায়দার আলী পেয়েছেন চার হাজার ৭৯৮ ভোট। ক্রীড়া সম্পাদক পদে নওশেদ হোসেন পাঁচ হাজার ৩৬৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সম্রাট হোসেন এমেলি পেয়েছেন চার হাজার ৮৭২ ভোট। স্কুল ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক পদে আহসান হাবিব পাঁচ হাজার ৪৩৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়াহিদ কাজী এলিন পেয়েছেন চার হাজার ৭১০ ভোট।

কার্যকরী পরিষদের ছয়টি নির্বাহী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফারহানা চৌধুরী পাঁচ  হাজার ৫৫৫ ভোট, মইনুদ্দিন মাহবুব পাঁচ হাজার ৪১৮ ভোট, আজাদ বাকির পাঁচ  হাজার ২৯৭ ভোট, মোহাম্মদ সাদী মিন্টু পাঁচ হাজার ২৭৬ ভোট, আবুল কাশেম চৌধুরী পাঁচ হাজার ১০২ ভোট এবং সারওয়ার খান বাবু পাঁচ হাজার ৪৩ ভোটে।
নির্বাচনে সদস্য পদে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীরা হলেন হলেন মনিরুল ইসলাম (৫০২৭), শাহনাজ আলম লিপি (৫০২১), কাজী তোফায়েল ইসলাম (৪৬৬৩), জসীম উদ্দিন (৪৫৩২), আশরাফ আলী লিটন (৪৪১০) এবং খায়ের আকন্দ (৪২৯২)।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button