আন্তর্জাতিক

অস্ত্রের জাদুকর দারা আদম খেলের আদিবাসীরা

ঢাকা, ২৯ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনের একটি ছোট গ্রামের নাম দারা আদম খেল। পেশোয়ার ও কোহাটের মধ্যবর্তী অঞ্চলে এর অবস্থান। অবৈধ অস্ত্র তৈরী ও বিক্রি করাই এই পাহাড়ী গ্রামের বাসিন্দাদের মূল ব্যবসা।

গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলাকারীরা যে অস্ত্র ব্যবহার করেছিল তা এখানকার কোনো অধিবাসী তৈরী করে দিয়েছিল বলে শনিবার ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে। ফলে ফের আলোচনায় উঠে এসেছে গ্রামটির নাম।

শান্ত ও নিরিবিলি গ্রামটির মূল রাস্তার পাশে সার বেঁধে রয়েছে সেই সব অবৈধ অস্ত্রের দোকান। এই সব দোকানে খুব অল্প দামেই মিলে রিভলবার, অটোমেটিক পিস্তল, শটগানসহ অত্যাধুনিক কালাশনিকভ রাইফেলও। এছাড়া অত্যাধুনিক যেকোনো অস্ত্রের নকল করা এখানকার কারিগরদের তুড়ির কাজ।

জাহাজ নির্মাণ এলাকার অতিরিক্ত বা বাদ পড়া ধাতুতেই তৈরী হয় এখানকার অস্ত্র। আর অস্ত্র নির্মাণে ব্যবহার হয় হাতে চালিত সাধারণ যন্ত্র।

গ্রামটির ৭৫ ভাগেরও বেশি জনসংখ্যা অস্ত্র তৈরীর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এদের প্রায় সবাই পূর্ব পুরুষ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে এসব কাজের দায়িত্ব পান। যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরেই চলে আসছে।

দারা গ্রামে বর্তমানে আড়াই হাজারেরও বেশি দক্ষ কারিগর রয়েছে। তাদের নির্মিত অনস্ত্রের বড় চালানই পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে চলে যায়। বিশেষ করে তালিবানসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসবাদী সংগঠন ও গোষ্ঠিই এখানকার অস্ত্রের প্রধান ক্রেতা।

দারা আদম খেলের কারিগররা বাজারে প্রচলিত যেকোনো অস্ত্রের নকল তৈরীতে ওস্তাদ। সে হোক ‘বিমান বিধ্বংসী বন্দুক’ কিংবা লুকিয়ে রাখার উপযোগী ‘পেন গান’।

বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এখানকার এক কারিগর বলেন, ‘এমন কোনো অস্ত্র নেই যা আমরা বানাতে পারি না। আমাদের বিমান বিধ্বংসী মিসাইল এনে দিলে আমরা তাও বানিয়ে দিতে পারবো। যার থেকে আসলটার তফাত করা খুবই কঠিন।’

বলা হয় আগে দেখেনি এমন কোনো রাইফেল দারা গ্রামের কোনো বন্দুক নির্মাতাকে দেয়া হলে ১০ দিনেই তার নকল করে ফেলবেন তিনি। আর প্রথম নকলটি বানানোর পর বাকিগুলো বানাতে প্রতিটির জন্য মাত্র তিন দিন করে সময় নেবেন কারিগররা।

তবে অবশ্যই বানানো নকল অস্ত্রগুলোর কর্মদক্ষতা কোনো অংশে আসলগুলোর চেয়ে কম নয়।

তবে এই গ্রামে কবে থেকে অস্ত্র বানানো শুরু হয় তার সঠিক তথ্য কিন্তু কারো কাছেই নেই। স্থানীয়রা জানান, ১৮৫৭ সালের দিকে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী থেকে পলাতক এক সৈনিকের হাত ধরেই দারা গ্রামে অস্ত্র কারখানা স্থাপন ও বিক্রি শুরু হয়।

গ্রামের আদিবাসীরা অল্প দিনেই ব্রিটিশ সেনা সদস্য থেকে অস্ত্র বানানোর কৌশল জেনে নেন। আর অল্প দিনেই দারার আদম খেল পরিণত হয় অবৈধ অস্ত্র নির্মাণ ও বিক্রির সবচেয়ে বড় বাজারে।

১৯৭৯ সালে রাশিয়া কর্তৃক আফগানিস্তান হামলার পর আফগানদের মধ্যে অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে গেল। আর তখন এই গ্রামই হয়ে উঠলো সুলভে উন্নত আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহের সবচেয়ে বড় উৎস।

১৫ বছর আগে গ্রামের কারিগররা অ্যান্টি পারসোনেল মাইনস, সাব-মেশিনগান ও ছোট আকারের কামানসহ রকেট লঞ্চার বানানো শুরু করে।

আর এসব অস্ত্র বানানোর প্রযক্তিগত সহায়তা সরকারই তাদের দিয়েছিল। ১৯৮৮ সালে রাওয়ালপিন্ডির ভারী অস্ত্রের একটি মজুদ স্থান উড়ে গেলে সেখানকার বাদ হয়ে যাওয়া অস্ত্র ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেয়া হয়। আর সেগুলোই হাত ঘুরে দারা আদম খেলের কারিগরদের হাতে এসে পড়ে। সেই থেকে গ্রামে মাইন, সাব-মেশিনগান ও ছোট আকারের কামান তৈরী শুরু।

তবে যখন থেকে সন্ত্রাসবাদীদের হাতে এসব অস্ত্র চলে যেতে থাকলো তখন নড়ে চড়ে বসে পাকিস্তান সরকার। তারা ওই গ্রামে অভিযান চালায়। যদিও ওই গ্রামটি পাকিস্তানি আইনের বাইরে স্থানীয় আদিবাসীদের দ্বারা পরিচালিত হয়।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button