জাতীয়

নিজের পদোন্নতি ঠেকাতে সাজানো মামলা!

ঢাকা, ৩০ অক্টোবর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

যে কোনো চাকরিজীবীই তার পদমর্যাদা বাড়াতে চান। চান পদোন্নতি। পদোন্নতির জন্যে অনেকে জাল-জালিয়াতি বা অসদুপায়ও অবলম্বন করে থাকেন। কিন্তু সোনালী ব্যাংক স্থানীয় কার্যালয়ের জুনিয়র অফিসার (অফিসার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) হাসান খসরুর বেলায় ঘটেছে উল্টো চিত্র।

নিজের পদোন্নতি ঠেকিয়ে রাখতে বছরের পর বছর তিনি চালিয়ে গেছেন প্রাণান্তকর চেষ্টা। তারপরও পদোন্নতি ঠেকাতে পারেননি। পদোন্নতি পাওয়ার পর তা স্থগিত রাখতে নিজের বিরুদ্ধে দেখিয়েছেন একটি সাজানো মামলা। হয়েছেন সাময়িক বরখাস্তও। কারণ, কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা থাকলে তার পদোন্নতি তাৎক্ষণিকভাবে স্থগিত হয়ে যায়। পাশপাশি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

সাজানো মামলা দেখিয়ে তিনি পদোন্নতি স্থগিত করলেও প্রায় দেড় বছর আগে তিনি ওই মামলায় খালাস পেয়েছেন। খালাস পাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই ওই রায়ের কপি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করার কথা। কিন্তু তিনি আগের পদে বহাল থাকার অভিপ্রায়ে মামলায় খালাসের বিষয়টি এখনও গোপন রেখেছেন। কারণ, খালাসের আদেশটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিলে তার পদোন্নতি স্থগিত হওয়ার আদেশ রহিত হয়ে যাবে। পাশপাশি তাকে দেয়া পদোন্নতির আদেশ কার্যকর হয়ে যাবে।

কিন্তু কেন তিনি এমন করছেন?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসান খসরু একজন সিবিএ নেতা। তিনি সোনালী ব্যাংক স্থানীয় কার্যালয় সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক। কর্মচারীরাই সিবিএ করার অধিকার রাখে। কর্মকর্তা হয়ে গেলে তিনি সে অধিকার হারিয়ে ফেলেন। আর সিবিএ’র রাজনীতি করার অভিপ্রায় থেকেই হাসান খসরু পদোন্নতি নিতে চান না। সোনালী ব্যাংকে জুনিয়র অফিসাররাও কর্মচারী হিসেবে গণ্য হন। আর জুনিয়র শব্দটি উঠে গেলেই তারা হয়ে যান কর্মকর্তা।

এদিকে হাসান খসরুর বিরুদ্ধে তথ্য গোপন, চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এ নিয়ে সোনালী ব্যাংকের অফিসার জাহাঙ্গীর আলম গত ৯ অক্টোবর ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও-এর কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগের অনুলিপি যুগান্তর অনলাইন সংগ্রহ করেছে।

জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২০১২ সালের ৩ জানুয়ারী হাসান খসরুকে জুনিয়র অফিসার থেকে অফিসার পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। পদোন্নতির আদেশ রহিত করতে তিনি তার বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ ডিসেম্বরের একটি চুরির মামলা দেখান। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করেন, ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর তিনি ওই মামলায় জামিন নিয়েছেন। তাই সোনালী ব্যাংক চাকরি প্রবিধানমালা ১৯৯৫-এর ৪৪ (৪)অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ।

পাশপাশি নিয়ম অনুযায়ী, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আদেশ বলা হয়, সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন তিনি মূল বেতনের ৫০ ভাগ খোরাকী ভাতা পাবেন। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া তিনি কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না ও অন্য কোনো চাকরি বা ব্যবসায়ে নিয়োজিত হতে পারবেন না।

অভিযোগে বলা হয়, ওই মামলাটি ছিল হাসান খসরুর একটি সাজানো নাটক। যার উদ্দেশ্য ছিল- পদোন্নতি না নিয়ে কর্মচারী থেকে সিবিএ নেতা হিসেবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, বদলী বাণিজ্য এবং অসদাচরণের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে জিম্মি করে অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করা। বিষয়টি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।

জাহাঙ্গীর আলম উল্লেখ করেন, সাজানো মামলাটি আইনী প্রক্রিয়ায় গত বছরের ৯ জুন নিস্পত্তি হয়। হাসান খসরু ওই মামলা থেকে খালাস পান। তাই চাকরি প্রবিধানমালা ১৯৯৫ অনুযায়ী হাসান খসরুর উচিত ছিল- সঙ্গে সঙ্গেই বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো। কিন্তু তিনি তা করেননি। তাই তথ্য গোপনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ১৫ নম্বর পরিপত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, হাসান খসরু একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী হলেও কুমিল্লা শহরে তার একটি পাঁচতলা বাড়ি আছে। সম্প্রতি তিনি একটি ব্যয়বহুল আটতলা বাড়ি বানিয়েছেন। তার একটি মার্কেট, একটি ইটের ভাটা, ঢাকায় দুইটি ফ্ল্যাট এবং দুইটি গাড়ি রয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও-এর কাছে অভিযোগ করা হয়েছে, সম্প্রতি বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় কুমিল্লা বিভাগের প্রতিটি অঞ্চলের শাখা প্রধানদের ভয় দেখিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৬০ হাজার করে টাকা আদায় করেছেন হাসান খসরু। একজন জিএমের বিদায় অনুষ্ঠানের নাম করেও চাঁদা আদায় করেছেন। কুমিল্লা অঞ্চলের অনেক নিরীহ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিএনপি সমর্থিত উল্লেখ করে কুমিল্লা অঞ্চল থেকে দূরবর্তী স্থানে বদলী করার ব্যবস্থা করেন হাসান খসরু। পরে ওইসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে দর কষাকষির মাধ্যমে টাকা আদায় করে কুমিল্লা অঞ্চলের সংশ্লিষ্ট এমপিদের নাম ব্যবহার করে তাদের আগের কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান খসরু বলেন, ‘এমডি মহোদয়ের কাছে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে সে বিষয়ে আমি অবগত। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগটি ভিত্তিহীন। যে মামলায় খালাস পেয়েছি তার কাগজপত্র ২-৩ মাস আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করেছি। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করার কারণেই পদোন্নতির আদেশ বাস্তবায়নে সময় লাগছে।’

জানতে চাইলে সোনালী ব্যাংকের সিবিএ সভাপতি কামাল উদ্দিন বলেন, ‘হাসান খসরুর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি ছিল একটি পারিবারিক মামলা। তিনি মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন কি-না তা আমাদের জানানো হয়নি। কর্তৃপক্ষের কাছে এ সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র দাখিল করলে নিশ্চয়ই জানতাম।’

সোনালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, যেকোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়। হাসান খসরুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে তা তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button