জাতীয়

কারাগারে মানসিক রোগীদের ওয়ার্ডে ছিলেন মুহিত

ঢাকা, ২ নভেম্বর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিজের কারাভোগের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, জেলখানায় ১২ কামরার একটি ভবন ছিল। এটি ছিল একটি মানসিক ওয়ার্ড। মানসিক রোগীর আসামিদের এখানে রাখা হতো। তবে সবচেয়ে বিদঘুটে অভিজ্ঞতা ছিল এক প্রকার উন্মুক্ত পরিবেশে টয়লেট সারা। বলা যায়, ওই সময় কারাগারে কয়েদিদের জন্য টয়লেট ছিল অনেকটাই খোলামেলা।

তিনি স্মৃতিচারণ করেন, ছাত্রজীবনে জেলখাটা। জেল কর্তৃপক্ষের সুনজরেই ছিলাম। বরং আমাদের কারণে জেলারদেরই ঝামেলা পোহাতে হয়েছে। জেলের অভিজ্ঞতা অন্যদের বেলায় যা, আমাদের বেলায়ও তার ব্যতিক্রম ছিল না।

কারাভোগের স্মৃতিকথা এভাবেই তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন স্মৃতিচারণ করেন। পরিত্যক্ত এই কারা অভ্যন্তরে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার সংগ্রামী জীবনগাঁথা নিয়ে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে জার্নি নামের একটি সংগঠন ও কারা কর্তৃপক্ষ।

অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে ৪২ দিনের কারাভোগের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ১৯৫৫ সালের কথা। রাজনৈতিক কারণে ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা আটজন পাকিস্তান সরকারের হাতে আটক হই। সারাদিন লালবাগ থানায় থাকার পর বিকেলে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে আসা হলো। কারাগারে আসার পরেই নারায়ণগঞ্জের সামসুজ্জোহা এবং শ্রমিক নেতা জামিলের সঙ্গে দেখা হয়।

জেলখানায় ১২ কামরার একটি ভবন ছিল। এটি ছিল একটি মানসিক ওয়ার্ড। মানসিক রোগীর আসামিদের এখানে রাখা হতো। আমাদের আটজনের জন্য ওই ভবনটিই বরাদ্দ দেয়া হলো। শর্ত ছিল প্রতি একজন করে নতুবা এক কক্ষে দুজনের অধিক করে থাকতে হবে। আমরা ১২টি কামরার মধ্যে দুটি কামরা নিয়ে থাকতে শুরু করলাম। এখানে ১২ দিন কাটলো।

এরপর ২১ ফেব্রুয়ারি আরো ৫০০ ছাত্রকে আটক করে আনা হলো। জেলাররা এসে আমাদের বললেন, হয় ৫০০ জনের সঙ্গে এখানেই থাকতে হবে নতুবা অন্য জায়গায় যেতে হবে। আমরা অন্য জায়গাতেই চলে গেলাম। সেখান থেকে হাসপাতালে পাঠানো হলো এবং হাসপাতাল থেকেই ছাড়া পাই।

কারাগারে ভাত এবং ডাল অনেকটাই ফ্রি ছিল উল্লেখ করে সাবেক এই আমলা বলেন, তবে এক বেলা মাংস আরেক বেলা মাছ দেয়া হতো। তবে প্রতি খাবারেই ন্যাপথলিনের গন্ধ থাকতো। মাঝে মাঝে হল থেকেও খাবার পাঠানো হতো আমাদের জন্য। আত্মীয়-স্বজনরাও খাবার আনলে সবাই ভাগ করে খেতাম। সে ছিল এক ভিন্ন রকমের অভিজ্ঞতা।

১৯৬০ সালে পাকিস্তানে চাকরিরত অবস্থায় একবার কারাগারে গিয়ে আমাদের সেই ভবনটি দেখে এসেছিলাম। এরপর আবারো গিয়েছিলাম, কিন্তু ভবনটি আর ছিল না।

এ সময় মন্ত্রী ব্রিটিশ শাসনের কিছু ইতিবাচক দিক তুলে ধরে বলেন, অপরাধীর সাজা এবং বিচার ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন আমরা ব্রিটিশদের কাছ থেকেই শিখেছি। বাঙালির সভ্য হওয়াও অনেকটাই তাদের কাছ থেকেই শেখা।

পরে মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতার সংগ্রামী জীবনের ওপর আলোকপাত করেন।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button