জেলার সংবাদ

৬ মাসের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে জেএসসি পরীক্ষা

ঢাকা, ৫ নভেম্বর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় প্রশাসন ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর ব্যাপক উদ্যোগ সত্ত্বেও বাল্যবিয়ে বন্ধ হচ্ছে না। গত ৩ মাসে বিভিন্ন গ্রামে ১৯টি বাল্য বিয়ে হয়েছে।

বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষিত নারচী ইউনিয়নেও পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। সচেতন জনগণ বাল্যবিয়ে ঠেকাতে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নদী ভাঙন কবলিত সারিয়াকান্দি উপজেলায় প্রশাসন ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। এর মধ্যে নারচী ইউনিয়নকে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু অর্থের লোভে কাজীরা বয়স বেশি দেখিয়ে বিয়ে পড়াচ্ছেন।

অনেক সময় অভিভাবকরা যৌতুকের লোভে তাদের কোমলমতি সন্তানদের বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য করছেন। খুব গোপনে এসব বিয়ে দেয়ায় অনেক সময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা টের পান না।

কয়েকটি এনজিও বাল্যবিয়ে বন্ধে কাজ করলেও তথ্যের অভাবে তারা কিছু করতে পারছে না। ফলে এ উপজেলা বাল্যবিয়ে বেড়ে চলেছে।

গত শুক্রবার পর্যন্ত গত ৩ মাসে সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অন্তত ১৯টি বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ফুলবাড়ি ইউনিয়নের মাঝবাড়ি ও ফুলবাড়ি পূর্বপাড়া গ্রামে ৯টি বিয়ের খবর পাওয়া গেছে।

বোহাইল ইউনিয়নের ধারাবর্ষা চরের কালাম মিয়ার মেয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী কাজলী আকতার কাজলী আকতারে বিয়ে দেয়া হয়েছে একই গ্রামের আব্দুস সালামের ছেলে আশারাফ আলীর (১৫) সঙ্গে।

ওই চরের আসাদ আহম্মেদ খান ও কালাম উদ্দিন খান জানান, এ বাল্য বিয়েটি দেয়া হয়েছে ভুয়া জন্মনিবন্ধন ও সাক্ষীর মাধ্যমে। বিয়েটি সম্পাদন করেছেন কাজী আবুল কালাম মুন্সি।

বিয়ের সাক্ষী হাফিজার খান, মিন্টু, আশকর আকন্দ ও হরমুজ আকন্দ জানান, তাদের না জানিয়েই বিয়েতে সাক্ষী করা হয়েছে। কিন্তু পরিবারটি দরিদ্র হওয়ায় প্রতিবাদ করা হয়নি।

নারচী ইউনিয়ন বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষণা করা হলেও সম্প্রতি কণা আকতার নামে নামে ৫ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বিয়ে দেয়া হয়েছে।

এছাড়া সর্বশেষ গত শুক্রবার রাতে কুতুবপুর ইউনিয়নের দেবডাঙ্গা ফিসপাস এলাকায় হাফিজার মণ্ডলের মেয়ে ৮ম শ্রেণির ছাত্রী রহিমা খাতুনের বিয়ে হয়েছে।

বাল্যবিয়ের শিকার কড়িতলা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী শ্যামলী আকতার ৬ মাসের শিশু সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে সারিয়াকান্দি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে জেএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

শ্যামলীর মা জানান, সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার মেয়েকে রৌহদহ গ্রামে বিয়ে দেয়া হয়েছে।

বাল্যবিয়ে কেন দিয়েছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি সারিয়াকান্দি উপজেলা শাখার লিগ্যাল অ্যাডভাইজার জিল্লাদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেন, অভিভাবকরা গোপনে তাদের নাবালক সন্তানদের বিয়ে দেয়ায় বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে সঠিক ভুমিকা পালন করা যাচ্ছে না।

সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ উপজেলায় বাল্যবিয়ে বেশি হবার বিষয়টি তার জানা নেই। কোনো বাল্যবিয়ের খবর পেলে দ্রুত তা বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়ে থাকে।

এ ক্ষেত্রে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সদস্য ও থানার ওসিসহ সকলের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button