খেলাধুলা

এত হোঁচট তবু নিরন্তর পথচলা

ঢাকা, ৮ নভেম্বর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

যতদিন ভাগ্যের তরী তাকে নিয়ে বয়ে বেড়াবে ক্রিকেটের ‘ধীরে বহে মেঘনায়’ ততদিন তিনি সমর্পিত থাকবেন নিজের ইচ্ছার কাছে স্মৃতির ওপর পাহারা বসানো যায় না। সময়ের পায়ে কে কবে শেকল বাঁধতে পেরেছে। সময় যেন এক দুষ্টু প্রজাপতি। শুধু উড়ে বেড়ায়। বেলা বয়ে যায়। যায় বৈকি!

মাশরাফি মুর্তজা আজ বিপিএলের বিনোদন থেকে খানিকটা সরে এসে একাকী ভাবতে বসলে স্মৃতিমেদুরতায় আক্রান্ত হবেনই। কার্তিকের নরম রোদ গায়ে মেখে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে নেতৃত্ব দিতে নেমে তার কী একবারের জন্য মনে পড়বে না ২০০১ সালের ৮ নভেম্বর? ১৫ বছর কেটে গেল।

দেখতে দেখতে সময়ের গলিতে লুকিয়ে পড়ল তার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ-সংগ্রামমুখর-সাফল্য-জর্জর খোলোয়াড়ি জীবনের দেড় দশক। এই সময়ে পৃথিবী বদলে গেছে। রূপান্তর ঘটেছে তিন কাঠির খেলায়। মাশরাফি সেই মাশরাফিই আছেন। সেদিনের ১৮ বছরের এক অকুতোভয় তরুণ আজ ৩৩ এর পোড় খাওয়া কাণ্ডারি।

উল্কার বেগে তার আগমন। টেস্টে অভিষেক। বয়সভিত্তিক দলে শুরু। সেখান থেকে ‘এ’ দল হয়ে একেবারে জাতীয় দলের চৌকাঠে পা রাখা। গতির ঝড় তোলা ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ বাংলাদেশের ক্রিকেটে এক আশ্চর্যতম সংযোজন। তারপর তারুণ্যের তেজে সফলতার দিকে ধাবিত হওয়া। অকুতোভয় এক নেতার আবির্ভাব। তারপর ইনজুরির থাবা। শল্যবিদের ছুরি-কাঁচির কাটাছেঁড়া। তুব তিনি দুর্দমনীয়। লক্ষ্যে অবিচল। নিরন্তর সেই পথচলার ১৫ বছর পূর্ণ হল আজ।

চার উইকেট নিয়ে স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল তার সাদা পোশাকের ক্রিকেটে। যা পেয়েছেন তার চেয়ে ঢের বেশি পাওয়ার কথা ছিল তার। পথ আগলে দাঁড়ায় চোট। দুই হাঁটুতে সাতবার অস্ত্রোপচারের পরও তিনি খেলে যাচ্ছেন। সংকল্পই তার পুঁজি। সাহসই তার সঞ্চয়। বছরসাতেক আগে টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিরতি নিয়েছেন নিজের খেলোয়াড়ি জীবন প্রলম্বিত করার জন্য। এতে আখেরে লাভ হয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটরই।

টাইগারদের ক্রমশ ভয়ংকর হয়ে ওঠার মূল কারিগর তো তিনিই। দু’বছর আগে রঙিন জার্সির ক্রিকেটে নেতৃত্বভার পাওয়ার পর মাশরাফি বাংলাদেশকে তুলে দিয়েছেন সাফল্যের মহাসড়কে। আলো ছড়িয়েও সেই আলো গায়ে মাখতে অনীহা তার। কিছু কিছু জায়গা আছে যেখানে ছায়া ফেলে অতৃপ্তি। সেটা অপ্রকাশ্যই থাকে। টেস্টে শততম উইকেটের মাইলফলক ছুঁতে না পারার আফসোস তার থাকতেই পারে (৩৬ টেস্টে ৭৮ উইকেট)।

মাশরাফি এ নিয়ে কখনো কোনো উচ্চবাচ্য করেননি। হাহাকার-হতাশা শব্দ দুটি তার অভিধানেই নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটের যারা নিখাদ প্রেমিক, তাদের কিঞ্চিৎ হতাশা থাকতেই পারে এ নিয়ে।

কাল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে আরও পাঁচ বছর গাঁটছড়া বাঁধার পর বলেছেন, এখনও তিনি তৃষ্ণার্ত। আরও ১০ বছর অবশিষ্ট রয়েছে তার খেলোয়াড়ি জীবনে।

মাশরাফির এরকম কোনো চাওয়া নয় নিশ্চয়ই। যতদিন ভাগ্যের তরী তাকে নিয়ে বয়ে বেড়াবে ক্রিকেটের ‘ধীরে বহে মেঘনায়’ ততদিন তিনি সমর্পিত থাকবেন নিজের ইচ্ছার কাছে।

তার ভক্তদের চাওয়া থাকতেই পারে। তারা চাইতেই পারেন, মাশরাফি যেন ২০০তম ওডিআই খেলেন (এখন পর্যন্ত ১৬৬)। উইকেট সংহারে দুর্বার থাকেন (এখন পর্যন্ত ২১৬ উইকেট)। টি ২০ তেও যেন মজে থাকেন আরও কিছুদিন (৪৯ ম্যাচে ৩৮ উইকেট)। আরও কিছু যে তার দিতে বাকি। আরও কিছু বাংলাদেশের পেতে বাকি।

নিয়তির কাছে এই দরখাস্ত এখনই করে রাখলাম। প্লিজ, মঞ্জুর করুন।

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button