স্বাস্থ্য

ফেনী জেলা সদর হাসপাতাল নিজেই দুর্ভোগে

ঢাকা, ১৭ নভেম্বর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

ফেনী জেলা সদর হাসপাতাল। এটি নামেই ২৫০ শয্যার হাসপাতাল। নেই পর্যাপ্ত জনবল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি। ফলে রোগীদের দুর্ভোগ চরমে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসকের ১৮২টি পদ থাকলেও শূন্য রয়েছে ৪৭টি। দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণির ১,০৪১টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে ২৯৪টি। অন্যদিকে, নতুন ভবনে ১০ শয্যার আইসিইউ, ১২ শয্যার সিসিইউ, ১৪ শয্যার ডায়ালাইসিস বিভাগ, ৪টি অপারেশন থিয়েটার, সিটিস্ক্যানের ব্যবস্থা থাকলেও পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও লোকবলের অভাবে দুই বছরেও সেগুলো সচল হয়নি।

হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে ৮টি এক্স-রে মেশিন, ৪টি আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেশিনসহ আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি। প্যাথলজি বিভাগে নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জাম। নতুন ভবনে দুটি লিফটের ব্যবস্থা থাকলেও একটি এখনো চালু হয়নি। আর যেটি সচল রয়েছে তাও রোগী বহনের সক্ষমতা নেই।

হাসপাতালে তিনতলা ও চারতলাবিশিষ্ট দুটি ভবনে চিকিৎসাসেবা চালু হলেও সেই অনুপাতে বাড়েনি চিকিৎসাসেবার মান। হাসপাতালের জরুরি বিভাগটি ছোট হওয়ায় দুজনের বেশি রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় না।

দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে অপারেশন থিয়েটারের যন্ত্রপাতি, বিশুদ্ধকরণের জন্য আনা কোটি টাকার অটো স্টেলাইজার ও অটো ক্লেপ মেশিন। হাসপাতালের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি কখনই রোগী বহনে ব্যবহার হয়নি। চিকিৎসক আর সরকারি কর্মকর্তাদের আনা নেওয়ায় ব্যস্ত থাকে অ্যাম্বুলেন্সটি।

পুরাতন ও নতুন দুই ভবন মিলে ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে এক ভবন থেকে অন্য ভবনে যাতায়াতের জন্য নেই রিং করিডর। হাসপাতালে ৭ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডটিতে গড়ে রোগী ভর্তি থাকে ৫০ জন। তাই ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীদের করিডর ও বেডের পাশে-নিচে চিকিৎসা নিতে হয়। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী সংকটের কারণে প্রতিটি ওয়ার্ডে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে রোগীরা।

১৯৮২ সালে ১০ একর ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে ফেনী সদর হাসপাতাল। জেলার ছয়টি উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রামগড়, মিরসরাই, চৌদ্দগ্রাম, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রোগীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ভিড় করতে থাকে এ হাসপাতালে। রোগীদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সরকার ৫০ শয্যা থেকে হাসপাতালটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করে। ২০০৯ সালে তৎকালীন সরকার ১০০ শয্যার হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় রূপান্তরের কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়।

গত বছরের ৮ মে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ১৪৬ জন কর্মচারী নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হলেও অদ্যাবধি ফল প্রকাশিত হয়নি। এতে মাঠপর্যায়ে এবং অফিসে প্রশাসনিক কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার রোগী চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। অথচ সে অনুপাতে বাড়েনি চিকিৎসা সুবিধা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একাধিকবার ধরনা দিয়েও সমস্যার কোনো সুরাহা করতে পারেনি।

ফেনী জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোশারফ হোসেন রোগীদের সকল অভিযোগ ও লোকবল স্বল্পতার কথা অকপটে স্বীকার করে বলেন, ‘এসব সংকট থেকে উত্তরণে বেশ কয়েক দফা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়েছে। আশা করি সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘এই হাসপাতালে জনবল সংকট রয়েছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। স্বল্প সময়ে সমস্যার সমাধান হবে।’

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button