জেলার সংবাদ

আট মাসেও তনু হত্যার বিচার হয়নি ,ঘাতকরা কি এতই শক্তিশালী যে তাদের শনাক্ত করা যাবে না, প্রশ্ন অসহায় বাবার

ঢাকা, ২০ নভেম্বর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের ৮ মাস পূর্ণ হলো আজ। দীর্ঘ এ সময়ে আলোচিত এ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তিনবার বদল করা হয়েছে। কিন্তু হত্যা রহস্যের কোনো কিনারা হয়নি। ঘাতকদের শনাক্ত কিংবা মামলার তদন্তে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি।
এদিকে যতই দিন যাচ্ছে ততই এ হত্যার বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর বাবা-মা ও স্বজনদের মাঝে হতাশা বাড়ছে। তারা বলছেন, ‘সেনানিবাসের মতো স্পর্শকাতর একটি এলাকা থেকে তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে তো কেউ না কেউ মেরেছে, ঘাতকরাতো জ্বীনের মতো বাতাসের সাথে মিলিয়ে যায়নি, অথচ আজও ঘাতকদের ধরতে পারছে না সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।’
তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘তনুর হত্যাকারীরা কী এতটাই শক্তিশালী যে তাদের শনাক্ত করতে হিমশিম খেতে হবে। দেশে ভয়ঙ্কর জঙ্গি গ্রেফতারসহ অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হচ্ছে, তাদের সাজাও হচ্ছে। কিন্তু তনুর খুনিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। আমরা কোনো ব্যক্তি বা সংস্থার বিপক্ষে না, এ হত্যার সাথে যে বা যারাই জড়িত থাকুক না কেন তাদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’
তনুর মা আনোয়ারা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘একে একে ৮টি মাস পার হয়ে গেল, অথচ তনুর খুনিদের কেউ এখন পর্যন্ত ধরা  পড়ল না। আমরা চাই তনুর প্রকৃত ঘাতকরা ধরা পড়ুক, শাস্তি পাক।’
জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি-কুমিল্লার সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মামলাটির তদন্ত নিজস্ব গতিতে চলছে, তাই তদন্তাধীন বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’
কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরের একটি জঙ্গল থেকে গত ২০ মার্চ রাতে সোহাগী জাহান তনুর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পুলিশ ও জেলা ডিবি’র পর বর্তমানে তদন্ত করছে সিআইডি।
গত মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে ৩ জনের শুক্রাণু (বীর্য) পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল এবং হত্যার আগে তনুকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে তারা নিশ্চিত হয়েছিল। তবে কোথায়, কেন এবং কীভাবে তনুকে হত্যা করা হয়েছে তা নিয়ে সিআইডিসহ সকল মহলে এখনো নানা গুঞ্জন চলছে। এদিকে তদন্তের এক পর্যায়ে সিআইডি নিশ্চিত হয়, তনুকে সেনানিবাসের ভেতরেই ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া দুই দফা ময়না তদন্তেও তনুর ‘মৃত্যুর কারণ’ অস্পষ্ট থাকায় দেশজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
সিআইডি’র একটি সূত্র জানায়, তনুর পোশাকে পাওয়া ডিএনএ প্রোফাইল মেলানোর জন্য গত ১৯ অক্টোবর তার কলেজ থিয়েটারের ৫ সদস্যকে ফরেনসিক ল্যাবে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তাদের রক্ত নেওয়া হয়। এ পর্যন্ত অন্তত ১৫ জনের ডিএনএ প্রোফাইল মেলানো হয়েছে। কিন্তু এসব পরীক্ষায় কোনো ফল আসেনি। ডিএনএ ম্যাচ (মেলানো) করে ঘাতকদের শনাক্ত করতে না পারায় এ মামলার ভবিষ্যত্ কিংবা বিচার পাওয়া নিয়ে তনুর পরিবার, মানবাধিকার সংগঠনসহ বিভিন্ন মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে।
Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button