খেলাধুলা

শেষ ওভারেই খুলনার স্বস্তি!

ঢাকা, ২০ নভেম্বর, (ডেইলি টাইমস ২৪):

অনিশ্চয়তায় মোড়া টোয়েন্টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে খেলা যখন গড়ায় ম্যাচের শেষ ওভারে, হার-জিতের দোলাচলে তখন হূত্কমপন বাড়ে দর্শক, খেলোয়াড় সবারই। ব্যতিক্রম বোধহয় খুলনা টাইটানস। ম্যাচ শেষ ওভারে গড়ানো মানেই যে তাদের জয়ের নিশ্চয়তা! একবার হলে বলা যেত সৌভাগ্য, দুইবার হলে না হয় কাকতালীয়, কিন্তু তিনবার শেষ ওভারে এসে ম্যাচ জিতলে সেটাকে অভ্যাস তো বলতেই হয়।

এবারের বিপিএলটা হার দিয়ে শুরু হতেই পারত খুলনা টাইটানসের। মিরপুরে টস জিতে রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে তারা করতে পেরেছিল মাত্র ১৩৩ রান। জুনায়েদ খান ও শফিউল ইসলামের দারুণ বোলিং তাদের জয়ের আশা জোগালেও শেষ ওভারে ম্যাচ হেলে ছিল রাজশাহী কিংসের দিকেই। ৬ বলে চাই ৭ রান, হাতে ৩ উইকেট। মহাগুরুত্বপূর্ণ ওভারটা করতে এসেছিলেন অধিনায়ক মাহমুদ উল্লাহ, ম্যাচে এর আগে তিনি করেছিলেন মাত্র ১ ওভার। কিন্তু শেষ ওভারটা করলেন মনে রাখার মতো! তৃতীয় বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট আবুল হাসান, পরের বলে মোহাম্মদ সামিও উড়িয়ে মারতে গিয়ে বোল্ড আর শেষ বলে স্টামপ ছেড়ে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার নাজমুল ইসলাম। এভাবেই শেষ ওভারে বাজিমাত করে রাজশাহীর মুখের গ্রাস ছিনিয়ে এনে খুলনাকে জিতিয়ে দেন মাহমুদ উল্লাহ। খুলনা ম্যাচ জেতে ৩ রানে।

এখানেই শেষ হয়নি খুলনার শেষ ওভারের চমক! রংপুরের সামনে ৪৪ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পরের ম্যাচটি তাদের ছিল চিটাগং ভাইকিংসের সঙ্গে। এই ম্যাচেও আগে ব্যাট করে ১২৭ রানের বেশি স্কোরবোর্ডে জমা করতে পারেনি খুলনা। তামিম ইকবাল, ডোয়াইন স্মিথ, শোয়েব মালিক, মোহাম্মদ নবীদের মতো ব্যাটসম্যানদের নিয়ে গড়া ভাইকিংসের সামনে এই রানটা তো মামুলিই! এবারেও শেষদানে বাজি জিতে নেয় টাইটানস। ১৯তম ওভারে ১১ রান নিয়ে ব্যবধানটা কমিয়ে এনেছিলেন নবী, শেষ ৬ বলে জয়ের জন্য দরকার ছিল মাত্র ৬ রান, হাতে ৪ উইকেট। এমন সময়ে বল হাতে শেষ ওভারে আবারও মাহমুদ উল্লাহ।

দ্বিতীয় বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট চতুরঙ্গ ডি সিলভা, চতুর্থ বলে শুভাগত হোমের হাতে ক্যাচ দেন আবদুর রাজ্জাক আর শেষ বলে মরিয়া নবী বল আকাশে তুলে দিয়ে ধরা পড়েন অলক কাপালির হাতে। আবারও শেষ ওভারে ‘মাহমুদ উল্লাহ ম্যাজিক’, ৩ উইকেট তুলে নিয়ে খুলনাকে ৪ রানে জেতান বাংলাদেশ দলের সাবেক সহ-অধিনায়ক।

ছোট পুঁজি সামাল দিয়েই তো এখন পর্যন্ত বিপিএলে চারটি ম্যাচ জিতল খুলনা। ৪ ম্যাচে তাদের জয়ের ব্যবধান যথাক্রমে ৩ রান, ৪ রান, ১৩ রান ও ৯ রান। এই চার ম্যাচের মধ্যে বলা যায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষেই তারা শেষ ওভারে যাওয়ার আগেই জয় নিয়ে অনেকটা নিশ্চিত ছিল, কারণ তখন ২ উইকেট হাতে রেখে কুমিল্লার ৬ বলে জয়ের জন্য দরকার ছিল ২০ রান। অবশ্য টি-টোয়েন্টির হিসাবে এটাও সম্ভব এবং করে দেখিয়েছে অনেক দলই। তবে গতবারের চ্যাম্পিয়নদের এবার এমন দুরবস্থা চলছে যে হারটা অনুমিতই ছিল। কাল ঢাকার বিপক্ষেও তো খুলনার জয় এলো শেষ ওভারের প্রথম বলে। বাজে ফিল্ডিংয়ের দরুন ক্যাচ পড়েছে, তার পরও ৮৩ রানে ঢাকার ৭ উইকেট তুলে নিয়ে সহজ জয়ের দেখাই পেতে পারত খুলনা টাইটানস। কিন্তু দলটা তো খুলনা, সহজ জয়ের মুখ তারা দেখেনি! সেকুগে প্রসন্নর ৭ ছক্কায় ২১ বলে ৫৩ রানের ইনিংসে জয়ের হাওয়া ঢাকার পালে। স্ট্রাইকে প্রসন্ন, ৬ বলে ১০ রান মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব। কেভন কুপারের করা শেষ ওভারের প্রথম বলটা সোজা তুলেও দিয়েছিলেন বোলারের মাথার ওপর দিয়ে, কিন্তু আরিফুল হক অন্যদের মতো ক্যাচটি ছাড়েননি। ফলে তৃতীয়বারের মতো শেষ ওভারে এসে জয় খুলনার। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে মোশাররফ রুবেল তাই হাসতে হাসতেই বললেন, ‘হ্যাঁ, ব্যাপারগুলো আমাদের পক্ষেই যাচ্ছে। আমরা এভাবে জিততে জানি। তবে আমরা ভালো ব্যবধানে জিততে চাই। কারণ পরিস্থিতি কঠিন হয়ে গেলে তো ম্যাচ যেকোনো দলেরই হতে পারে। এমন তো আর সব সময় হয় না, হয়ে গেছে হয়তো বা।’

অন্য দলগুলো যখন আসরের মাঝপথে প্রয়োজন অনুযায়ী খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্ত করছে, তখন ব্যাটিং শক্তিতে পিছিয়ে থাকা খুলনা চাইছে এই দল নিয়েই শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে। মোশাররফ রুবেল বলছিলেন, ‘একজন হিটার ব্যাটসম্যান থাকলে ভালো হতো যে শেষ দিকে রানটা বাড়িয়ে দেবে। তাতে বোলাররা লড়াইয়ের আরেকটু পুঁজি পাবে।’ যদিও দিন দুই আগে টাইটানসের উপদেষ্টা হাবিবুল বাশারের কাছে এই প্রশ্নের কোনো ইতিবাচক উত্তর মেলেনি, ‘আমরা কাউকে আনছি না। আমরা একটা দল হিসেবে খেলছি, এভাবেই খেলতে চাই।’

এভাবেই যখন জয় আসছে, তখন পরিবর্তনের আর দরকার কী!

Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button