
জাতীয়
রেলপথের দুই পাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও প্রয়োগ নেই
ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, (ডেইলি টাইমস ২৪):
সারাদেশের রেলপথের দুই পাশে ১০ ফুট করে ২০ ফুট এলাকায় সব সময় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। বাংলাদেশ রেলওয়ে আইনানুযায়ী ওই সীমানার ভেতর কাউকে পাওয়া গেলে তাকে আইনের ১০১ ধারায় গ্রেফতার করা যায়। এমনকি এই সীমানার ভেতরে গবাদিপশু চরলে আটক করে তা বিক্রি করে সেই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়ার বিধানও রয়েছে। বাস্তবতা হলো : আইনের ধারা-বিধান বই-নথিতেই লিপিবদ্ধ থাকে; সেগুলোর প্রয়োগ হয় না। প্রয়োগ করতে গেলে রেলওয়ে পুলিশকে বরং মুখোমুখি হতে হয় নানা বিব্রতকর পরিস্থিতি ও উটকো ঝামেলায়। রেল কর্তৃপক্ষ ও রেল পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সারাদেশে মোট রেলপথ ২ হাজার ৮৭৮ কিলোমিটার। আর অবৈধ রেল ক্রসিংয়ের সংখ্যা ১ হাজার ৩০০টি। এই অবৈধ ক্রসিং দিয়ে পারাপার, রেললাইনের ওপর দিয়ে অবাধে চলাচলসহ নানা কারণে প্রতিবছর গড়ে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ হারাচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ। আর এই লাশ দাফন বা লাশ দাহে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনকে বছরে গুনতে হচ্ছে দুই কোটি টাকা।
জানা গেছে, বিগত সময়ে অবহেলিত রেলওয়েকে প্রতিবছরই গুনতে হতো লোকসান। আর এ কারণে নতুন জনবল নিয়োগ খুব একটা হয়নি। বরং জনবল প্রতিবছরই কমেছে। লোকবলের অভাবে রেলের বিশাল এলাকার ঠিকমতো তদারকি হয়নি। এ সুযোগে রেলপথের পাশে বাড়ি উঠেছে, দোকান উঠেছে। রেলের জায়গা ব্যবহার করেছে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো। দখলকারীরা তাদের সুবিধামতো স্থানে গড়ে তুলেছে রাস্তা। এই রাস্তায় অবৈধভাবে তৈরি করেছে ক্রসিং। তাছাড়া লাইন ঘেঁষে উঠেছে শত শত অবৈধ বাজার, বস্তি। অপরদিকে অনেক জায়গায় পথের দূরত্ব কমাতে রেললাইনকে ব্যবহার করা হচ্ছে হাঁটার পথ হিসেবে। আবার কানে এয়ারফোন লাগিয়ে রেলপথ দিয়ে হেঁটে নিহত হওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা সম্প্রতি ঘটেছে।
ঢাকা জিআরপি থানার সাবেক ওসি বর্তমানে জিআরপি ভৈরব থানার ওসি আব্দুল মজিদ বলেন, ট্রেনের নীচে কাটা কিংবা ধাক্কায় লোকজন নিহত হওয়ার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। ১৮৬১ সালের ৫ নম্বর আইনের ১২ নম্বর ধারা মোতাবেক রেললাইনের দুপাশে ১০ ফুট করে এলাকার মধ্যে রেলের কর্মী ছাড়া সাধারণ মানুষ কিংবা গবাদিপশুর প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ওই এলাকায় সব সময়ই ১৪৪ ধারা জারি থাকে। ওই সীমানার ভেতর কাউকে পাওয়া গেলে আইনের ১০১ ধারায় যে কাউকে গ্রেফতার করা যায়। কিন্তু বিষয়টি কেউ তোয়াক্কা করে না। রেল পুলিশ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। কাউকে আটক করলে উল্টো পুলিশকেই পড়তে হয়েছে বিব্রতকর অবস্থায়। ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আইনের প্রয়োগ সম্ভব হয় না।
তিনি আরো বলেন, ১৮৬১ সালের রেলওয়ে আইনের ১২ নম্বর ধারার ‘ঘ’ অনুযায়ী রেললাইনে পড়ে থাকা লাশের পরিচয়ের সূত্রে ব্যবস্থার (দাফন বা দাহ্য) জন্য ৮ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু এই টাকায় লাশের ব্যবস্থা করা যায় না। বর্তমানে একটি লাশ উদ্ধার করলে ১ হাজার ৪০০ টাকা ডোমদের দিতে হয়। এই টাকা রেল কর্তৃপক্ষ বহন করে। অপমৃত্যুর মামলা হওয়ার পর যে পুলিশ অফিসার ওই মামলার তদন্ত পরিচালনা করেন তাকে দেওয়া হয় ২ হাজার টাকা। এই অর্থ বহন করে পুলিশ প্রশাসন।
লাশ উদ্ধার করে মর্গ পর্যন্ত পৌঁছাতে যানবাহন খরচ লাগে আরো পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। কখনো আবার দূরত্ব অনুযায়ী যানবাহন খরচ দিতে হয় দশ থেকে পনেরো হাজার টাকা। সব মিলিয়ে একেকটি লাশ উদ্ধার করে মর্গে পৌঁছানো পর্যন্ত গড়ে অন্তত সাড়ে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। সব মিলিয়ে বছরে রেল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের লাশের পেছনে খরচ করতে হয় প্রায় ২ কোটি টাকা।
সদ্য ঢাকার জিআরপি থানায় যোগদানকারী ওসি ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, রেল পুলিশের জনবল অনেক কম। ইচ্ছে করলেও রেলপথে অবৈধ জনচলাচল বন্ধ করা সম্ভব না। এ জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। আর সচেনতা তৈরি না হলে দুর্ঘটনা কোনোভাবেই কমানো সম্ভব না।
রেলভবনের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, রেললাইনে মৃত্যু রোধে কঠোর হচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও রেলওয়ে আইন অনুযায়ী শাস্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সম্প্রতি এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে বিষয়টি জনসাধারণকে জানাতে চায় রেলপথ মন্ত্রণালয়।
রেলওয়ের লাইন রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের সিনিয়র উপ-সহকারী প্রকৌশলী হামিদুর রহমান বলেন, রেলের দুই ধারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু একটি স্বার্থানেষী মহলের কারণে আবার তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে। এ জন্য সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।