
সেইদিনের স্মৃতি মনে নেই নার্গিসের
ঢাকা, ২৬ নভেম্বর, (ডেইলি টাইমস ২৪):
স্কয়ার হাসপাতালের ১১ তলার নির্দিষ্ট কেবিনটির উত্তর দিকে বিশাল কাচের দেয়াল। দেয়াল ভেদ করে আসা সূর্যের আলোতে ঝকঝক করছে কেবিনটি।আর সেখানেই বিছানায় শুয়ে খাদিজা আক্তার নার্গিস মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন ভাইয়ের সঙ্গে। কাছে গিয়ে ডাকতেই মুখে ছড়িয়ে যায় হাসি।
কেমন আছেন জানতে চাইলে নার্গিস বলেন, ‘আমি ভালো আছি, সুস্থ হয়ে যাচ্ছি। আপনাদের সবাইকে কৃতজ্ঞতা আমার, অনেক অনেক ধন্যবাদ।’
মাথার ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হয়েছে, কেবল বাম হাতে ব্যান্ডেজ রয়েছে। তবে মাথায় করা জটিল অপারেশনের চিহ্নগুলো এখনো দগদগে। আগের থেকে অনেক ভালো অবস্থা হলেও শরীর এখনও পুরোপরি সেরে ওঠেনি। ফিজিওথেরাপির জন্য ডাক্তারদের পরামর্শে যেতে হবে সাভারের সিআরপিতে। তারপরেও খুশি নার্গিস।
‘আপনাকে তো হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেবে’ এ কথা বলতেই হাসি মুখে নার্গিস বলেন, ‘বাড়ি যেতে মন চাচ্ছে, এখানে আর ভালো লাগছে না।’
বাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন দেখা নার্গিস হয়তো আর কিছুদিনের মধ্যে সত্যি সত্যিই বাড়িতে ফিরে যাবেন। ডাক্তাররাও তেমন ইঙ্গিত দিচ্ছেন। স্কয়ার হাসপাতালে থাকার আর প্রয়োজন নেই তার। এবার একেবারে সুস্থ মানুষের মতো জীবনযাপন ও লেখাপড়া করার আকাঙ্ক্ষা তার মনে। সুপ্ত ইচ্ছা রয়েছে ব্যাংকার হওয়ারও।
নার্গিস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাড়ি ফিরেই লেখাপড়া শুরু করবো, আমি ব্যাংকার হবো-বাবা-মাকে দেখবো।’
কথা হয়তো আরও বলতেন। কিন্তু, একসঙ্গে বেশি কথা বলাতে এখন বারণ আছে চিকিৎসকদের। তাই তাকে থামিয়ে দিলেন বাবা মাশুক মিয়া। মেয়েকে বললেন, ‘আর কথা বইলো না, ডাক্তার না করছে।’
বাবার কথা মেনেই নার্গিস হাতের মোবাইল পাশে রেখে চোখ বুজলেন।
এরপর ‘ডাক্তাররা বেশি মাততো না করছে হেরে’ বলে এ প্রতিবেদককে পরিস্থিতি বোঝান মাশুক মিয়া। তিনি বলেন, ‘আজ নিচে গিয়ে বেশি কথা বলায় একটু খারাপ লাগছে ওর, মাথা ঘোরাচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় গত ৩ অক্টোবর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে জখম করে। এ ঘটনার পর প্রথমে নার্গিসকে সিলেটে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ৪ অক্টোবর ভোরে তাকে ঢাকায় আনা হয়। সেদিন দুপুরেই স্কয়ার হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা তাকে ৯৬ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখেন এবং তারা বলেছিলেন, নার্গিসের মাথায় চাপাতির অসংখ্য কোপের চিহ্ন রয়েছে। তাকে এমনভাবে কোপানো হয়েছে যে, খুলি ভেদ করে ব্রেইন ইনজুরি হয়েছে। কোপানোর সময় হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করায় তার দুই হাতের রগ কেটে গেছে।’