রাজনীতি

পাঁচ কোটি টাকা খরচ করবেন, খালেদা জিয়াকে বলেছিলেন সাখাওয়াত

ঢাকা, ১৫ ডিসেম্বর , (ডেইলি টাইমস ২৪):

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে ভোটের মাঠে কার্যত একা বিএনপির মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। ঢাকা থেকে প্রতিদিন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা টিম ভাগ করে দলে-দলে নারায়ণগঞ্জে গিয়ে ‘ধানের শীষ’-এর পক্ষে ভোট চাইলেও দলটির স্থানীয় নেতাদের ভূমিকা ‘রহস্যজনক’। কেন্দ্র যতটা সরব, সেই তুলনায় স্থানীয় নেতাদের সক্রিয়তা ততোটা দৃশ্যমান নয়। এর মূলে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে সাখাওয়াতের অতীত বিতর্কিত ভূমিকা আর ব্যক্তিগত স্বল্প-পরিচিতি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতাদের উল্লেখযোগ্যরা প্রায় সবাই সাখাওয়াতের পক্ষে প্রচারণার জন্য এরইমধ্যে নারায়ণগঞ্জে গেছেন। ফখরুলসহ বেশিরভাগ নেতা একাধিক দিন বিভিন্ন ওয়ার্ডে সাখাওয়াতের জন্য ভোট চেয়েছেন। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামান, বিএনপি দলীয় সাবেক দুই সংসদ সদস্য আবুল কালাম ও গিয়াসউদ্দিন আহমেদ এবং নারায়ণগঞ্জ শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামালসহ স্থানীয় নেতাদের যতটা সক্রিয় থাকার কথা ততোটা বাস্তবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তৈমুর আলম খন্দকার গতকাল বুধবার  বলেন ‘এসব অপপ্রচার। কান্দের উপর দাঁড়াইয়া ছবি তুলি না বলে আমাকে দেখা যায় না। আমাকে বেকায়দায় ফেলতে, নির্বাচনের ক্ষতি করতে এসব কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমি এসবকে পাত্তা দিই না।’ তিনি আরও বলেন, আমার সব লোক মাঠে নেমেছে, একটা লোকও বাদ নেই।
সাখাওয়াত হোসেন শুধু বাইরের লোকজনের কাছে নয়, নারায়ণগঞ্জের বেশিরভাগ মানুষের কাছেই অপরিচিত।
প্রার্থী হিসেবে নাসিকের মানুষের কাছে স্বল্প পরিচিতির পাশাপাশি সাখাওয়াত দলের স্থানীয় রাজনীতিতে ত্রিমুখী বিরোধের মুখে পড়েছেন। শহর বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ২০০৯ সালে তিনি বিরোধে জড়ান। তখন শহর বিএনপির দুটি পাল্টা কমিটি হয়। সাখাওয়াত ছিলেন বিদ্রোহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক।
এ ব্যাপারে শহর বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘এটা ঠিক যে- সাখাওয়াত সাহেব একসময় স্থানীয় রাজনীতিতে বিতর্কিত ছিলেন। তবে অতীত ভুলে আমরা এখন একসঙ্গে কাজ করছি।’
তৈমুর আলম খন্দকারের সঙ্গেও পুরনো দ্বন্দ্ব রয়েছে সাখাওয়াতের। জেলা বিএনপির রাজনীতিকে কেন্দ্র করে এই বিরোধের সূত্রপাত। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ‘রাজনীতিতে’ও তৈমুর-সাখাওয়াতের দ্বন্দ্ব পুরনো। যদিও সাখাওয়াত বলছেন, ‘অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখানকার বিএনপি এখন বেশি শক্তিশালী।’
স্থানীয় বিরোধ মেটাতে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় জেলা বিএনপি কার্যালয়ে শহর বিএনপির কর্মী সভা ডাকা হয়েছিল। সেখানে সাখাওয়াতের অতীত ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। তখন সাখাওয়াত বলেন, ‘আমার প্রতি কারো দুঃখ-বেদনা-ক্ষোভ থাকতে পারে। আমি সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। আপনারা ধানের শীষের পক্ষে কাজ করবেন।’
সাখাওয়াত দলের মেয়র প্রার্থী হলেও তৈমুর আলমের ছোট ভাই কাউন্সিলর প্রার্থী। আর দলের সাবেক দুই এমপি আবুল কালাম ও গিয়াসউদ্দিনের ছেলেও কাউন্সিলর প্রার্থী। জানা গেছে, তৈমুর, কালাম ও গিয়াসউদ্দিন যতোটা না সাখাওয়াতের জন্য সময় দিচ্ছেন, এরচেয়ে বেশি ব্যস্ত নিজেদের ভাই-ছেলের নির্বাচন নিয়ে।
এদিকে জানা গেছে, মনোনয়ন দেয়ার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যখন তার গুলশান কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জের ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন তখন নির্বাচন খরচ নিয়েও আলোচনা হয়। নিজে কত টাকা খরচ করতে পারবেন-সাখাওয়াতের কাছে তা জানতে চেয়েছিলেন খালেদা জিয়া। জবাবে সাখাওয়াত বলেছিলেন, তিনি পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত যোগান দিতে পারবেন, বাকিটা দলকে বহন করতে হবে। এ ব্যাপারে গতকাল নারায়ণগঞ্জ বিএনপির দু’জন নেতা  জানান, বিএনপি প্রধানকে দেয়া কথা রাখছেন না সাখাওয়াত। দলের জেলা ও শহর কমিটির যারা নির্বাচনে কাজ করছেন-সাখাওয়াত ঠিকমত খরচ দিচ্ছেন না, দু’দিন ধরে দলের কেন্দ্র থেকে প্রয়োজনীয় খরচের যোগান দেয়া হচ্ছে।
Show More

আরো সংবাদ...

Back to top button