
জি কে প্রকল্পের বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচ দেওয়া বন্ধ, চাষিরা বিপাকে
ঢাকা,২৯ মে, (ডেইলি টাইমস ২৪):
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প জি কে প্রকল্পে চলতি আউশ মৌসুমে বিস্তীর্ণ এলাকায় সেচ দেওয়া বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এতে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলার চাষিরা বিপাকে পড়েছে। বিগত শতকের ষাটের দশক থেকে জি কে প্রকল্পের অধীন চার জেলার ১৩ উপজেলার চাষিরা আউশ মৌসুমে প্রকল্পের সেচের পানিতে ধান চাষে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বলেন, সেচের পানি ব্যবহার করে উত্পাদন বৃদ্ধি করেছে। অথচ চাষিরা সেচ কর দেয় না। এজন্য আউশ মৌসুমে অনেক এলাকায় সেচের পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে।
দেশে প্রথম জি কে প্রকল্পে সেচ দিয়ে ধান চাষ শুরু হয়। এরপর ইরি চাষের প্রচলন শুরু হলে সেচের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল ধান চাষ আরম্ভ হয়। ফলনও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। আগে বৃষ্টিনির্ভর দেশি জাতের আউশ ধান চাষ করে বিঘা প্রতি গড় ফলন হতো চার-পাঁচ মণ। সেচের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল জাতগুলো চাষ করায় বিঘাতে ফলন হতে থাকে ২০-২২ মণ। উচ্চফলনশীল আমনের ফলনও চারগুণ বেড়ে যায়। কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে।
১৯৫৪ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ৭৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে শেষ হয় ১৯৮১-৮২ সালে। সে সময় আউশ মৌসুমে এক লাখ ও আমন মৌসুমে দুই লাখ একর পর্যন্ত জমিতে সেচ দেওয়া হতো। সেচ দেওয়া টিকিয়ে রাখা ও প্রকল্পকে আরো গতিশীল করার জন্য ১৯৮৩ সালে পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ১৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯৩ সালে পুনর্বাসন কর্মসূচি শেষ হয়। এরপর থেকে প্রকল্প গুটানোর পর্ব শুরু হয়। অরক্ষিত হয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা স্থাপনাগুলো। অফিস বাসা-বাড়ি নষ্ট হতে শুরু করে। ইতোমধ্যে প্রকল্পের বহু সম্পদ লুটপাট হয়ে গেছে। মাঠ পর্যায়ে লোকবলের অভাবে দেখার কেউ নেই। বাসা-বাড়িগুলো পর্যন্ত বেদখল হয়ে পড়ে। অফিস ও বাসার দরজা-জানালা পর্যন্ত চুরি হয়ে গেছে। ২০১২ সালে ফের পুনর্বাসন কাজ শুরু হয়েছে। সময় মত টাকা ছাড় না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ হয়নি। টাকার অঙ্ক বাড়িয়ে ২২০ কোটি টাকা করা হয়েছে। শেষ হবে ২০১৮ সালে।
এদিকে প্রকল্পে সেচ এলাকা দিনে দিনে সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এ বছর ফেস-১ এর আপার এলাকার কিছু অংশে আউশ চাষে সেচ দেওয়া হচ্ছে। ফেস-২ এ সেচ দেওয়া হচ্ছে না। প্রকল্পের অধিকাংশ এলাকাতে আউশ মৌসুমে সেচের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে না। চাষিরা অগভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ দিচ্ছে। এতে ব্যয় বেশি পড়ছে। আবার অনেক চাষি ধানের বদলে অন্য ফসল চাষ করছে। এবারই প্রথম আউশ মৌসুমে সেচের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে না।
জি কে প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মইনুল হক বলেন, জি কে প্রকল্প একটি ব্যয়বহুল প্রকল্প। ভেড়ামারা পাম্প হাউজের মাধ্যমে বছরে পদ্মা নদী থেকে পাম্প করে সেচ খালে পানি উত্তোলনে ১৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এর সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা ও পরিচালন ব্যয় রয়েছে। তিনি জানান, সেচের পানি ব্যবহার করলেও চাষিরা সেচ কর দেয় না। বছরের পর বছর ধরে কয়েক কোটি টাকা সেচ কর বাকি পড়েছে। তবে তিনি বলেন, আমন চাষ মৌসুমে পানি সেচ দেওয়া হবে।